ঘরে ঘুমিয়ে আছেন এক বৃদ্ধা। ঘরের উপর গাছ ভেঙ্গে পড়ে আছে। রাস্তার পাশেই সরকারি জমিতে ঘর তুলে ১০ বছর থেকে বাস করছেন জমিলা বেগম (৬৫)। কিন্তু তার ঘরের চালে যে গাছ ভেঙ্গে পড়েছে, জীবনের ভয় না করে সেই ঘরেই ঘুমাচ্ছেন জমিলা বেগম। গত ১ মাস থেকে ভাঙ্গা ঘরেই থাকছেন তিনি।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা গড়েয়া ইউনিয়নের চকহলদী গ্রামে জমিলা বেগমের রাস্তার পাশে একমাত্র টিনের ঘরটির উপরে গত ৭ই মে ঝড়ে গাছ ভেঙ্গে পড়েছে। প্রায় ১ মাস থেকে ঘরের উপরেই পরে আছে গাছ, এই ভেঙ্গে যাওয়া ঘরেই রাত্রি যাপন করছেন জমিলা।
এলাকাবাসির সাথে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার গড়েয়া চকহলদী গ্রামের বাসিন্দা মৃত গনি মিয়ার স্ত্রী বৃদ্ধা জমিলা বেগম ১০ বছর আগে স্বামীকে হারিয়ে তার কোনো ছেলে মেয়ে না থাকায় অবশেষে ঠাঁই হয় রাস্তার পাশে।
জমিলা বেগম বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী হওয়ায় ভিক্ষা করে নিজের খাবার জোগার করেন। এছাড়াও স্বামীর মৃত্যুর ১০ বছরেও বিধবা ভাতা কিংবা বয়স্ক ভাতার কার্ড জোটেনি জমিলা বেগমের কপালে। সরকারী কোন প্রকার সহযোগীতা পায়নি জমিলা বেগম। তাই কোন উপায় না পেয়ে ভিক্ষা করেই দু’মুঠো খাবার জোগান তিনি।
এখন মরার উপর ক্ষরার ঘাঁ। মাথা গোজার ঠাঁই যে ঘরটি ছিল সেটিও ভেঙ্গে গেছে ঝড়ে। রোদ বৃষ্টিতে জমিলাকে সেই ঘরেই থাকতে হচ্ছে। ভাঙ্গা ঘরে ভয়ে ভয়ে থাকতে হচ্ছে জমিলা বেগমকে। যে কোন সময় গাছটি পুরো ভেঙ্গে পরে ঘটতে পারে বড় রকমের দুর্ঘটনা এমটাই মনে করছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয়রা আরো জানান, বৃদ্ধার স্বামী মারা গেছেন প্রায় অনেক বছর আগে। ৬৫ বছর বয়সী অসুস্থ বৃদ্ধার ছেলেমেয়ে নেই যে তাকে একটু দেখাশোনা করবে। বেশির ভাগ সময়ই খেয়ে না খেয়ে কাটে তার দিন। তার পরেও পায়নি বিধবা ভাতা। প্রধানমন্ত্রীর উপহার যে ঘরগুলো দেওয়া হচ্ছে সেটাও জুটেনি জমিলার কপালে। আসলে জমিলা মুখে কিছু বলতে পারে না সেজন্য মেম্বার বা চেয়ারম্যান তার কথা শোনে না। সেজন্য কোন প্রকার সহযোগীতাও পায় না জমিলা।
বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী জমিলা বেগম সাংবাদিক দেখে কি বুঝে যেন কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো। কি যেন বলার চেষ্টা করেন কিন্তু তার কথা কিছুই বুঝা যায় না।
এ ব্যাপারে গড়েয়া ইউপি চেয়ারম্যান রেজওয়ানুল ইসলাম শাহ (রেদো) বলেন, গাছটি সরকারী তাই আমি কিছু করতে পারছি না। গাছটি সরিয়ে নেওয়ার কথা বললে তিনি রেগেঁ গিয়ে সাংবাদিককে বলেন, আপনি কি আমার থেকে বেশি বুঝেন। ভাতা বা সহযোগীতা বিষয়ে কথা বললে, তিনি সাংবাদিকের সাথে অশোভনীয় আচরণ করে পাশ কেটেঁ যান।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করছি বলে আশ্বাস দেন তিনি।