সেপ্টেম্বরে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশ। ফাইনালে নেপালের মেয়েদের হারিয়েছিল সাবিনা-কৃষ্ণারা। দুই মাসের ব্যবধানে নেপালের সিনিয়রদের সেই হারের প্রতিশোধ নিয়েছে দেশটির অনূর্ধ্ব-১৫ কিশোরী ফুটবলাররা। আর সেটা নিয়েছে ঢাকায় এসে।
শুক্রবার (১১ নভেম্বর) প্রয়োজনীয় ড্র করে দেশটি জিতেছে মেয়েদের টুর্নামেন্টে প্রথম শিরোপা। তিন জাতির টুর্নামেন্টে নেপালের মেয়েরা যোগ্য দল হিসেবেই শিরোপা জিতেছে। তারা টুর্নামেন্টে কোনো ম্যাচ হারেনি। বাংলাদেশের বিপক্ষে দুই ম্যাচের একটি জিতেছে, ফিরতি ম্যাচ ১-১ গোলে ড্র করে শিরোপা জয়ের আনন্দে মেতে উঠেছে হিমালয়ের দেশের মেয়েরা।
এই টুর্নামেন্টের প্রথম চ্যাম্পিয়ন ছিল বাংলাদেশ। পরের দুটি আসরের শিরোপা জিতে নেয় ভারত। এবার ভারত না থাকায় বাংলাদেশের সামনে ছিল শিরোপা উদ্ধারের দারুণ সুযোগ। কিন্তু সেটা কাজে লাগাতে পারেনি আন্তর্জাতিক ম্যাচে অনভিজ্ঞ বাংলাদেশের মেয়েরা।
আগের ম্যাচে ভুটানের জালে দিয়েছিল ৯ গোল। মুড়ি-মুড়কির মতো গোল করা সেই মেয়েরাই গোলখরায় ভুগেছে নেপালের বিপক্ষে। প্রথম ম্যাচে হেরে দ্বিতীয় ম্যাচে মাস্টউইন অবস্থা ছিল বাংলাদেশের মেয়েদের। সেই সমীকরণ মিলাতে পারেনি গোলাম রব্বানী ছোটনের শিষ্যরা। প্রথমে গোল খেয়ে পরে সেটা শোধ দিয়ে হার এড়িয়েছে মাত্র।
শারীরিক গঠনে বাংলাদেশের মেয়েদের চেয়ে নেপালের মেয়েরা এগিয়েছিল অনেক। এমন কি বল দখলের লড়াইয়েও তারা প্রাধান্য বজায় রেখেছে। বাংলাদেশের মেয়েদের বল পাসিং ও রিসিভিংয়ে ছিল দুর্বলতা। দুটো পাসও তারা ঠিকমতো দিতে পারেনি। এ সুযোগ নেপালিরা ভালোভাবেই নিয়েছে মাঠে। ফল হিসেবে তারা এগিয়ে গিয়েছিল ম্যাচে।
দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশ এক গোল করে ম্যাচে ফিরেছিল। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য যা যথেষ্ট ছিল না। সুযোগ এসেছিল শেষ মিনিটে পেনাল্টি পেয়ে। পেনাল্টি পাওয়ার পর বাংলাদেশের মেয়েদের ছিল হাস্যকর উদযাপন। পেনাল্টি শট নেওয়ার আগেই তারা আনন্দে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকেন।
এমন কি যে শট নিয়েছিলেন সেই জয়নব বিবি বল স্পটে বাসিয়ে কেঁদে নিয়েছেন কতক্ষণ। বোঝাই গিয়েছিল স্নায়ুচাপে ভুগছিলেন তিনি। জয়নব বল গোলরক্ষকের হাতে মেরে হতাশায় ডুবিয়েছেন কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে উপস্থিত দর্শকদের। মোক্ষম সুযোগ পেয়েও বাংলাদেশের মেয়েরা ব্যর্থ হয়েছে শিরোপা উদ্ধারে।
বাংলাদেশ ফেয়ার প্লে ট্রফি পেয়েছে। সর্বোচ্চ গোলদাতা ও টুর্নামেন্টসেরা খেলোয়াড় হয়েছেন বাংলাদেশের সুরভী আকন্দ প্রীতি। তিনি ভুটানের বিপক্ষে দুই ম্যাচে ৯ গোল করেছেন। সেরা গোলরক্ষক হয়েছেন নেপালের সুজাতা তামাং।
খেলা শেষে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে চ্যাম্পিয়ন নেপালি মেয়েদের কোচ-অধিনায়কের হাতে ট্রফি তুলে দিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল। এসময় সাফ ও বাফুফে সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিন, সাফের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক হেলাল, বাফুফের সহ-সভাপতি আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক, ফিফা কাউন্সিল মেম্বার ও বাফুফের নারী ফুটবল উইংসের চেয়ারপারসন মাহফুজা আক্তার কিরণ ও বাফুফের সাধারণ সম্পাদক মো. আবু নাইম সোহাগ উপস্থিত ছিলেন।