বিশ্বে করোনা টিকার বৃহত্তম ক্রেতা ভারত। ১৬০ কোটি ডোজ কিনছে দেশটি।
এই ডোজে দেশটির ৬০ শতাংশ মানুষের টিকাকরণ হবে। অ্যাস্ট্রাজেনেকা, নোভাভ্যাক্স ও রাশিয়ার সঙ্গে পাকা কথা হয়েছে গতমাসেই। হার্ড ইমিউনিটির পক্ষে এই ডোজ পর্যাপ্ত, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
আমেরিকার ডিউক ইউনিভার্সিটি হেল্থ ইনোভেশন সেন্টারের তথ্যানুযায়ী, ভারত আমেরিকার ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা নোভাভ্যাক্সের থেকে টিকার ১০০ কোটি ডোজ কিনছে। ৫০ কোটি কিনছে অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার থেকে। রুশ টিকা স্পুটনিক ভি–র ১০ কোটি ডোজ কিনছে।
টিকার ক্রেতা হিসেবে ভারতের পরেই আছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তারা ১৫৮ কোটি ডোজ কিনছে। এ তুলনায় পিছিয়ে আমেরিকা। বিশ্বে সর্বাধিক করোনা আক্রান্ত আমেরিকায়। অথচ তারা ১০০ কোটির সামান্য কিছু বেশি ডোজ কিনছে। ভারত, ব্রাজিল টিকা উৎপাদনে সক্ষম। টিকা উৎপাদন নিয়ে অনেকের সঙ্গেই দুই দেশের কথাবার্তা চলছে।
নভেম্বরে ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন বলেছিলেন, ২০২১ সালের জুলাই–আগস্টের মধ্যে ২৫–৩০ কোটি ভারতের মানুষকে টিকা দেয়া হবে। টিকাকরণের জন্য ৪০–৫০ কোটি টিকার ডোজ কেনা হবে।
ডিউক ইউনিভার্সিটির তথ্য প্রকাশ পেতে অশোক ইউনিভার্সিটির ত্রিবেদী স্কুল অফ বায়োসায়েন্সেসের ডিরেক্টর তথা ভাইরোলজিস্ট শাহিদ জামিল পিটিআইকে বলেন, ‘ভারত যে টিকাগুলো কিনছে সেগুলো ভারতীয় সংস্থা উৎপাদন করছে। টিকা উৎপাদনের জন্য পুনের সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও নোভাভ্যাক্স।
হায়দরাবাদের ডা: রেড্ডি’জ ল্যাবরেটরি উৎপাদন করছে স্পুটনিক ভি। ভারতের নিজস্ব ভারত বায়োটেকের টিকার তৃতীয় পর্বের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে। ভারত বায়োটেক আর জাইডাস ক্যাডিলা বছরে টিকার ৪০ কোটি ডোজ উৎপাদনে সমর্থ। আশা করাই যায় ২০২১ সালে ২৫ কোটি মানুষের টিকাকরণ হবে। ক্রমশ বাকিদেরও হবে। টিকার ডোজ নিয়ে সমস্যা হবে না। কিন্তু টিকা সরবরাহ করাই কঠিন। ১৬০ কোটি ডোজ কিনলে ৬০ শতাংশ ভারতীয়র টিকাকরণ হয়ে যাবে। হার্ড ইমিউনিটি তৈরির পক্ষে তা যথেষ্ট।’
দিল্লির ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ইমিউনোলজির পক্ষ থেকে সত্যজিৎ রথ পিটিআইকে বলেন, ‘টিকাগুলো সব দুটি ডোজের। যে পরিমাণ ডোজ কেনা হচ্ছে তাতে ৮০ কোটি মানুষের টিকাকরণ সম্ভব। তাতেও ক্ষতি নেই। কিন্তু টিকাকরণ এককালীন প্রক্রিয়া। টিকায় কতদিন সুরক্ষা মিলবে, কবে পুনরায় টিকা নিতে হবে, কীভাবে টিকা মিলবে— সে–সব অস্পষ্ট। কবে কতজনের টিকাকরণ হবে সেটাও বলা মুশকিল। টিকা সরবরাহ করা, কোল্ডস্টোরেজ ব্যবস্থা, ইঞ্জেকশনের আনুষঙ্গিক বন্দোবস্ত, টিকাকরণের জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী— এ–সব নিয়েও অস্পষ্টতা থেকেই যাচ্ছে।’
রথের মতে, আগামী কয়েক মাসের ভেতর স্বাস্থ্যকর্মী ও যাদের ঝুঁকি বেশি তাদের টিকা দেয়া হতে পারে।
ডিউক ইউনিভার্সিটির তথ্য মতে, ভারত ছাড়া কানাডা ও ব্রিটেন ৩৫ কোটি টিকার ডোজ কিনছে। সাতটি সংস্থার সঙ্গে তাদের কথাবার্তা চলছে। এখন বিশ্বে প্রায় ২০০টি করোনা টিকার কাজ চলছে। ১০টির ট্রায়াল রয়েছে তৃতীয় পর্বে। ধনী দেশগুলো ৩৮০ কোটি ডোজ কিনতে ঝাঁপিয়েছে। উচ্চ ও মধ্য আয়ের দেশগুলোও পিছিয়ে নেই।