এটির কোন উপকারী কাজ নেই, তাই রক্ত থেকে গ্লোমেরুলাস দ্বারা ফিল্টার করার পরে প্রস্রাবে নির্গত হয়। ক্রিয়েটাইন অ্যামিনো অ্যাসিড থেকে লিভার, অগ্ন্যাশয়, কিডনিতে সংশ্লেষিত হয়। ক্রিয়েটিনিন পেশীতে উৎপাদিত হয় এবং এই বর্জ্যপণ্য ক্রিয়েটিনিন রক্তের সরবরাহে প্রবেশ করে, যেখানে এটি কিডনির মাধ্যমে সরানো হয়।
ক্রিয়েটিনিনের সাধারণ ব্যাপ্তি:
- পুরুষ: (0.7-1.4)mg/dl
- মহিলা: (0.4-1.4)mg/dl
সিরাম এবং প্রস্রাব ক্রিয়েটিনিন উভয়ই রেনাল ফাংশনের সূচক হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। সিরাম ক্রিয়েটিনিন এর বিস্তার গ্লোমেরুলার হ্রাসের সাথে যুক্ত।
যেসব কারণে বেড়ে যেতে পারে ক্রিয়েটিনিন লেভেল:
- পানিশূন্যতা
- মূত্রনালীর বাধা
- কিডনি ও পেশীর সমস্যা
- গর্ভাবস্থায় প্রিআক্ল্যাম্পসিয়ার কারণ উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি
লক্ষন:
- বমি বমি ভাব
- বুক ব্যাথা
- পেশীতে বাঁধা, ক্লান্তি ও ফোলাভাব
- ঘুমের অভাব
- প্রস্রাবের চাপ বেশি কিন্তু পরিমাণ কম, অনিয়ন্ত্রিত চাপ লক্ষনীয়
উচ্চ ক্রিয়েটিনিন রোগীর খাদ্য ব্যবস্থাপনার জন্য সাধারণ নির্দেশিকা:
- ক্রিয়েটিনিন লেভেল বেড়ে গেলে সেক্ষেত্রে অবশ্যই ৫-৭ গ্লাস এর বেশি পানি পান করা যাবে না
- প্রোটিন ৪০ গ্রাম গ্রহণ করা যেতে পারে তাতে সমস্যা নেই
- কার্বোহাইড্রেট এর পরিমাণটা বাড়িয়ে দিতে হবে
- আঁশ জাতীয় কিছু দেয়া যাবে না অর্থাৎ শাক,লালচাল,লালআটা গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে
- যদি ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা অনেক বেশি থাকে তখন অবশ্যই চর্বিজাতীয় খাবার সীমিত গ্রহণ করতে হবে কিন্তু, PUFA (এক প্রকার ফ্যাটি এ্যসিড- আখরোট, সানফ্লাওয়ার তেল এ থাকে) হতে হবে
- সোডিয়াম,পটাশিয়াম খুব কম গ্রহণ করতে হবে
- যেসব খাবার গ্রহণ করা যেতে পারে যেমনঃ গরুর দুধ, স্কিমড মিল্ক, দই, বেরি জাতীয় ফল, লাল আঙ্গুর, লাল ক্যাপসিকাম
- সব ধরনের ফল দেয়া যাবে না
- আনারস ৫০ গ্রাম অথবা ১ স্লাইস গ্রহণ করা যাবে
- টমেটোর মাংসল অংশটা দেয়া যাবে কিন্তু তরল পানি অংশটা দেয়া যাবে না
- খই কার্ব জাতীয় হওয়ায় এটি অসম্ভব ভালো কাজ করে। ভুট্টা, পপকর্ণ এগুলোও ভালো কাজ করে
- সবজি এর ক্ষেত্রে,সব ধরনের সবজিই খেতে পারবেন কোন নিষেধাজ্ঞা নেই কিন্তু ভাপ দিয়ে পানি ঝরিয়ে নিয়ে তারপর খেতে দিতে হবে
- প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকায় কলা ও ডাবের পানি দেয়া বিরত থাকতে হবে
- মিষ্টি কুমড়ার শক্ত সবুজাভ অংশ, গাজরের মাঝের নরম অংশ, লবণাক্ত আচার, পনির, নুডলস মিক্স, পাস্তা, লবণাক্ত বা টিনজাত মাংস, খাবার সোডা, ক্যাফেইনযুক্ত খাবার থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে
- কোন প্রকার চা খাওয়া মোটেও ঠিক নয় এইক্ষেত্রে চা পান করার ফলে কিডনির কার্যকলাপ বেড়ে গিয়ে শরীরের প্রয়োজনীয় পানিও বেড়িয়ে যায়। এ কারণে একেবারেই এড়িয়ে চলা উত্তম
- পেঁপে একেবারেই দেয়া ঠিক না এতে ক্রিয়েটিনিন বেড়ে যাওয়ার আশংকা থাকে
- কাঁচা জিনিস, সালাদ খাওয়া যাবে না
প্রতিটি খাবারের বিকল্প খুঁজে বের করা প্রয়োজন। রোগীদের জীবনধারা ও খাদ্যাভ্যাসের সাথে সামঞ্জস্যতা রেখে ডায়েট দিতে হবে, তবেই ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা কমানো সম্ভব। যেসকল রোগী বা যাদের ক্রিয়েটিনিন লেভেল বেশি তাদের অবশ্যই জীবনযাত্রার পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাসের সামঞ্জস্যতা থাকা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে পুষ্টিবিদ ও ডায়েটিশিয়ান এর পরামর্শ গ্রহণ অবশ্যই জরুরী।
অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন,অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, ডায়রিয়াজনিত ডিহাইড্রেশন ইত্যাদির কারণেই কিডনি আক্রান্ত হয় সহজেই। কিডনির সমস্যা অনেক জটিল তাই এ রোগ শনাক্ত করতে পারলে জটিলতা অনেকটাই এড়ানো সম্ভব। তাই কোন অসুস্থতার উপসর্গ এড়িয়ে না গিয়ে ডাক্তার,পুষ্টিবিদ ও ডায়েটিশিয়ান এর শরণাপন্ন হওয়া জরুরি।