সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ সাইবার আক্রমণের লক্ষ্য হয়ে উঠছে। বিশেষ করে দেশের বিদ্যুৎ, টেলিকম ও আর্থিক খাতকে লক্ষ্য করে এসব আক্রমণ করা হচ্ছে। তবে এসব
হামলায় এখনো বড় ধরনের কোনো ক্ষতি হয়নি। কম্পিউটার ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিম (বিজিডি ই-গভ সার্ট) এসব হামলার ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে।সরকারি বিভিন্ন দপ্তরেও সতর্ক করে তারা বার্তা পাঠিয়েছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, ন্যাশনাল পাওয়ার গ্রিড, টেলিকম খাত ও আর্থিক খাত—এই তিন জায়গাতে বেশি আক্রমণ আসছে। করোনা মহামারির পর বৈশ্বিক আর্থিক মন্দার কারণে সাইবার অপরাধীরা খুবই সক্রিয়। কিছু রাষ্ট্রের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে সাইবার অপরাধ চলছে। অনেক রাষ্ট্র আছে, যারা আমাদের ক্ষতি করতে চায়।
বিজিডি ই-গভ সার্টের নিয়মিত পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশে ডিস্ট্রিবিউটেড ডিনায়েল-অব-সার্ভিস (D-DoS) সাইবার আক্রমণ সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। কম্পিউটার কাউন্সিলের ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সি, বিজিডি ই-গভ সার্ট প্রকল্প পরিচালক তারেক এম বরকতউল্লাহ বলেন, মিনিটে ৪৬ মিলিয়ন ডি-ডস হামলা রেকর্ড করেছে গুগল ক্লাউড।
উদ্ভুত পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশে সব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোকে নিরাপদ রাখতে ‘গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোর ডিজিটাল নিরাপত্তা সুরক্ষা গাইডলাইন’ অনুসরণ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এন্টি ডি-ডস হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার স্থাপন বা হালনাগাদ করে সঠিক ‘এন্টি ডি-ডস প্রোটেকশন থ্রেসহোল্ড’ (Anti-D-DoS Protection Threshold) সেট করার সুপারিশ করেছেন তিনি।
এই সাইবার হামলা নিয়ে গতকাল সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে আইসিটি ভবনে সরকারের আইসিটি বিভাগের বিজিডি ই-গভসার্ট সংবাদ সম্মেলন করেছে। সেখানে প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, এজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
টেলিকম ও বিদ্যুৎ খাতে যদি ক্ষতি করতে পারে, তাহলে রাষ্ট্রব্যবস্হা ভেঙে পড়ে। এ কারণেই রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় যখন হামলা হয়, তখন এ দুটি খাতকে লক্ষ্য বানায়। জাতীয় ডেটা সেন্টারও আক্রমণের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের ডেটা সেন্টারে প্রচুর আক্রমণ আসে।
বিজিডি ই-গভ সার্টের প্রকল্প পরিচালক তারেক এম বরকতউল্লাহ বলেন, তাদের পক্ষ থেকে ৭৫০টি সতর্কবার্তা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়েছে, যাতে তারা নিজেরা সুরক্ষিত থাকতে পারে। দেশের টেলিকম সেবাদাতারা ম্যালওয়্যারে আক্রান্ত।
বিশ্বে র্যানসামওয়্যার ট্রোজান আক্রমণ সবচেয়ে বেশি হচ্ছে যে ১০টি দেশে, তার মধ্যে সবার ওপরে রয়েছে বাংলাদেশ। এরপর আছে হাইতি, সুদান, তুর্কমিনিস্তান, ফিলিস্তিন, ইয়েমেন, তাজিকিস্তান, চীন, ইথিওপিয়া ও পাকিস্তান। বাংলাদেশে যেসব সাইবার হামলা হচ্ছে তার মধ্যে আছে ডি-ডস, ম্যালওয়্যার বটনেট, র্যানসামওয়্যার, ব্যাংকিং ট্রোজান, ইনফরমেশন স্টিলার ম্যালওয়্যার ও সাইবার এস্পিওনাজ উল্লেখযোগ্য।