সর্বোচ্চ অধ্যাবশায় আর কঠোর পরিশ্রম মানুষকে কতটা সাফল্যের দ্বাড়প্রান্তে পৌঁছাতে পারে, তা শুধুমাত্র জেগে থেকে রেজোয়ানা’র মতো হাজারও স্বপ্নবাজরাই প্রমান করতে সক্ষম হয়েছেন।
সাতত্রিশতমতে প্রথম দিকেই ঘরে ফিরতে হলেও নিজ মনবলকে অটুট রাখায় বিসিএস কোচিং ছাড়াই নিজের চেষ্টাতেই আটত্রিশতম বিসিএস (পুলিশ) এ সুপারিশপ্রাপ্ত হলেন রেজোয়ানা কবির পিয়া। প্রশাসন ও কর এর পরে তৃতীয় পছন্দেই ছিল পুলিশ। তিনি চল্লিশতম বিসিএস এ লিখিত মাড়িয়ে রয়েছেন। সাফল্যার্যনকারী এ নারীর পিতা মোঃ রেজাউল কবির ও মাতা ইয়াসমিন বেগম।
বরগুনা পৌর শহরের বটতলা ডিকেপি সড়কের বাসিন্দা রেজাউল কবিরের তিন সন্তানের মধ্যে প্রথম সন্তান এই রেজোয়ানা কবির পিয়া। দ্বিতীয় মোঃ খালিদ হাসান। যিনি বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র। সবার ছোট বরগুনা সরকারি কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মোঃ আব্দুল্লাহ্ আল জুবায়ের।
রেজোয়ানা কবির পিয়া শিক্ষাজীবনে বরগুনা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০৫ সালে এসএসসিতে মানবিক বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হয়। বরগুনা সরকারি কলেজ থেকে ২০০৭ সালে একই বিভাগ থেকে ৪.৬০ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। পিছন ফিরে না তাঁকিয়ে দেশের প্রাচীনতম সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ের উপরে ২০১২ সালে সিজিপিএ- ৩.৫৫ পেয়ে স্নাতক (সম্মান) ও ২০১৩ সালে সিজিপিএ-৩.৬১ পেয়ে স্নাতোকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেন।
কথা হয় স্বপ্ন সফল করা রেজোয়ানা কবির পিয়ার সাথে। তিনি বলেন, তাঁর সাফল্যগাঁথা ইতিহাস। জানান দিয়েছেন সঠিক লক্ষ্য আর কঠিন অধ্যাবশায় থাকলে পিছন ফিরে তাঁকাতে হয়না। অটুট মনবল আর জীবনের মূল ইচ্ছাকে লক্ষ্য করে সে পথে হাটলেই পাওয়া যাবে অফুরন্ত স্বপ্নের দ্বাড়। যে দ্বাড় তাঁকিয়ে থাকবে স্বপ্নবাজের অপেক্ষায়। জানতে চাইলে তিনি বলেন, মা-বাবা আর স্বামীর অনুপ্রেরণা আমাকে আজ এই সাফল্যের চুড়ায় পৌঁছাতে সক্ষম করেছে।
২০১০ সালে বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার পৌর শহরের মৃত. শামসুর রহমান সিকদার এর ছেলে মোঃ শামিম আহমেদ এর সাথে পারাবারিকভাবেই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। তখন রেজোয়ানা সম্মান দ্বিতীয় বর্ষ শেষ করেছেন। মোঃ শামিম আহমেদ বর্তমানে বরিশাল মেট্রো পলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এর দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৩ সালে একটি ছেলে সন্তান জন্মগ্রহন করে এই অনুপ্রেরণাকারী দম্পতির ঘরে। সন্তান মোঃ আহনাত আহমেদ সাদাফ এর অসুস্থ্যতার কারণে অনেকটা সময় বেগ পেতে হলেও আবারও জেগে উঠেন লক্ষ্যের পানে।
বিবাহ তরুণীদের অনুপ্রেরণামূলক পথ প্রদর্শকের ভূমিকায় স্থান রাখলেন বরগুনার গর্ব রেজোয়ানা কবির পিয়া।
বরগুনার সাইফুল ইসলাম সোহেলের ফেইচ বুক থেকে পাওয়া স্টাটাচকে মাধ্যম করে রেজোয়ানার খোঁজ নিয়ে জানা গেলো এমন গর্বিত পিতা-মাতার গর্বিত সন্তানের সাফল্যগাঁথা কঠিন অধ্যাবশায়ী গল্প।
রেজোয়ানা কবির পিয়ার পিতা মোঃ রেজাউল কবির বলেন, আজ জীবনের শ্রেষ্ঠটি আমাকে উপহার দিয়েছেন আমার সন্তান। আমি গর্বিত এবং বিশ্বাস করি একজন ভালো মানুষ হয়ে এ দেশের সেবা করবে আমার মেয়ে রেজোয়ানা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থান পাওয়ার পরে একটি নোকিয়া সেল ফোন কিনে দিয়েছিলাম। আর রোকেয়া হলের সামনে ফুটপাতে বসে বলেছিলাম; আজ তোমাকে চোখের দৃষ্টির বাইরে রেখে যাচ্ছি। সকল আবেগ ও বাঁধাকে পিছনে রেখে মানুষ হয়ে ফিরবে তোমার পরিবারের কাছে। উত্তরে চিন্তা না করতে বলেছিলো পিয়া। সেই পিয়া আমাকে গর্বের স্থানে রেখেছে। বাকি দুই সন্তানও আমার মুখ উজ্জল করবে বলে বিশ্বাস রাখি। বিবাহের পরে যে সকল মেয়েরা ভেঙ্গে পড়েছে নিজ অগ্রগতি (ক্যারিয়ার) গড়া থেকে, তাদের বলব রেজোয়ানাকে অনুস্মরণ করতে। কবির নিজ পরিবারের জন্য সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন।
দেশ ও দেশের মানুষের সেবা করার সুযোগ পাওয়ায় গর্বিত মোসাঃ রেজোয়ানা কবির পিয়া। আদর্শের ব্রত নিয়ে তিনি সকল বাঁধাকে উপেক্ষা করে নির্ভীক হয়ে এভাবেই কাজ করে যাবেন বলে আশা করেন বরগুনাবাসী।