গণহত্যার স্মৃতিরক্ষায় ৫২ বছর ধরে শুধু ফুল আর আশ্বাস
পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার চিকনিবন্দি এলাকায় ১৯৭১ সালের ৮ মে রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানি সেনারা গণহত্যা চালায়। কিন্তু স্বাধীনতার ৫২ বছরেও সেখানে বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ হয়নি।
শহীদ পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, প্রতি বছর ২৫ মার্চ উপজেলা প্রশাসনসহ রাজনৈতিক ব্যক্তিরা বধ্যভূমিতে ফুল আর এটি সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের আশ্বাস দিচ্ছে। কিন্তু ৫২ বছরেও কারো, কোনো আশ্বাসের বাস্তবায়ন হয়নি। শহীদ পরিবারের সদস্যরা জানান, একাত্তরের ওই দিন সকালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দুইটি গানবোর্ড নিয়ে চিকনিকান্দি বন্দরে আসে। এসময় তারা স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় নির্বিচারে গুলি করে হত্যা, লুটপাট ও আগুন দেয়।
স্থানীয়ভাবে এক জরিপে দেখা গেছে, ওইদিনের গণহত্যায় ৩৪ জন শহীদ হন। এদের বেশিরভাগই সুতাবারিয়া গ্রামের ঠাকুরবাড়ি সংলগ্ন একটি জলাভূমিতে শহীদ হন। একাধিক শহীদ পরিবার ওই জায়গাটি সংরক্ষণ করেন। পরে স্থানীয় প্রশাসন থেকে জায়গাটি সংরক্ষণ ও স্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু ৫২ বছরেও সে উদ্যোগ সফল হয়নি । এ নিয়ে শহীদ পরিবারগুলোর বিক্ষুব্ধ ও হতাশ। শহীদ পরিবারে র সন্তান স্বপন কুমার ( মনু) বিস্বাস বলেন, আমার বড় ভাই নিরঞ্জন বিস্বাস ছিলেন বরিশাল বিভাগের ঠিকাদার। তাকে তুলে নিয়ে হত্যা করেছে। ভায়ের শোক আজও ভুলতে পারিনি।
শহীদ পরিবারের সন্তান নিঠুল গাঙ্গুলী জানান, সেদিন তার বাবা-মা এবং বোন শহীদ হয়েছেন। পারিবারিক উদ্যোগে তারা জায়গাটি সংরক্ষণ করেছেন। বহুবার ওই জায়গা পরিদর্শন করা হয়েছে, কিন্তু আজও সরকারিভাবে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি । তিনি আরও জানান, প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবসে স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনীতিকরা আসেন, ফুল দেন, শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের আশ্বাস দেন, চলে যান। এরপর তাদের আর কোনো খোঁজ মেলে না । এ বিষয়ে চিকনি কান্দী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মু. সাজ্জাদ হোসেন রিয়াদ বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি কতৃপক্ষকে বেশ অনেক বার বলেছিলাম।
মুক্তিযোদ্ধা মো. নুরুল ইসলাম ধলা বলেন, কমান্ডার থাকার সময় একাধিক দপ্তরে ঘুরেও সুফল পাইনি। এ ব্যাপারে গলাচিপা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মু. শাহীন বলেন, আপনারা হতাশ হবেন না। আমরা অল্প কিছুদিনের মধ্যেই এটি করে দেবো। গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মহিউদ্দিন আল হেলাল বলেন, ২৬ তারিখের প্রথম কর্ম দিবসে আমি এটা দিয়ে কাজ শুরু করবো।