আগামী পহেলা ফেব্রুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (গোমস্তাপুর, নাচোল ও ভোলাহাট) ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনকে ঘিরে চাঁপাই নবাবগঞ্জ-২ আসনে চলছে চরম উত্তেজনা।
চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির হঠাৎ প্রচারণা ও আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম উত্তোলনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা হতাশ ও ক্ষুব্ধ। মাহির এমন কর্মকাণ্ডে বিব্রত তৃণমূল আ.লীগ।
স্থানীয়রা জানান, চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি এলাকায় থাকেন না। কিন্তু এই আসনের উপ-নির্বাচন ঘিরে হঠাৎ করে গত সোমবার ও মঙ্গলবার নাচোল ও গোমস্তাপুরে নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়ে গণসংযোগ করেছেন। তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়নের আশায় দলীয় মনোনয়ন ফরমও উত্তোলন করেছেন। এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও নির্বাচনি প্রচারনা চালাচ্ছেন।
চলতি বছরের অক্টোবর মাসে রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা জানিয়ে সেই এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক কাজে অংশগ্রহণ ও গণসংযোগ শুরু করেন মাহি। কিন্তু হঠাৎ করে গত সোমবার ও মঙ্গলবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের উপ-নির্বাচনে গণসংযোগ ও পথসভা করেন তিনি। এ সময় নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশা করে ভোট চেয়ে বক্তব্য দেন। মাহির এমন কর্মকাণ্ডকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের গোমস্তাপুর, নাচোল, ভোলাহাট উপজেলায় তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ভালোভাবে নেননি। তাদের দাবি, পহেলা ফেব্রুয়ারির উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকেই দেওয়া হোক নৌকার মনোনয়ন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হালিমা খাতুন বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বৃহৎ দল। তাই যে কেউ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইতেই পারেন। তবে মাহিয়া মাহি এলাকায় কোনদিন আসেননি। এমনকি এলাকার দুঃস্থ মানুষের পাশে থেকে কোনদিন সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন বলেও শোনা যায়নি। কিন্তু হঠাৎ করে তিনি এলাকায় এসে দলের মনোনয়ন চাইলে দীর্ঘদিনের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা হতাশ এবং ক্ষুব্ধ হবেন, এটাই স্বাভাবিক। তারপরও দল যার হাতে নৌকা তুলে দেবে তিনি তার পক্ষেই কাজ করবেন।
নাচোল উপজেলার নেজামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বলেন, দেশের ইতিহাসে আওয়ামী লীগ একটি প্রাচীন ও জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। তাই এ দলের পক্ষে যে কেউ মনোনয়ন চাইতে পারেন। তবে আমরা আশা করি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ নিশ্চয়ই রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা করেই নৌকার মনোনয়ন দেবেন। তিনি বলেন, মাহিয়া মাহির সঙ্গে স্থানীয় তৃণমূল নেতাকর্মীদের কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি যেমন আমাদের কাউকে চেনেন না, তেমনি আমরাও তাকে কখনো রাজনীতির মাঠে দেখিনি। কিন্তু নির্বাচনের এক মাস আগে হঠাৎ করেই মাঠে সক্রিয় হয়েছেন তিনি।
নাচোল উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম উত্তোলনকারী জান্নাতুন ফেরদৌস মুন্নি বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগে জেলা-জুলুম, ত্যাগ তিতিক্ষা করা পরিক্ষিত নেতা রয়েছেন। কিন্তু মাহিয়া মাহি উড়ে এসে জুড়ে বসে দলের মনোনয়ন চাইলে তৃণমূল নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ হাতাশ হবে এটাই স্বাভাবিক। কেননা, স্থানীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। এমনকি দলের অনেকেই তাকে চেনেন না। আর এলাকার উন্নয়নে তার কোন ভুমিকা কোনদিনই দেখা যায়নি।
নির্বাচন নিয়ে অভিনেত্রী মাহিয়া মাহি বলেন, আমি চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম উত্তোলন করেছি। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন। যে স্বপ্ন নিয়ে রাজনীতিতে আমার পদার্পণ, আল্লাহ যেন আমার সেই স্বপ্ন পূরণ করেন। আমি মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। নারী ও শিশুদের জন্য নিজেকে নিয়োজিত রাখতে চাই।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য মুহাঃ জিয়াউর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল। এই দলের নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে লালন করে রাজনীতি করে আসছেন। তাই দল যাকেই মনোনয়ন দেবে, সকলের উচিত তার পক্ষেই কাজ করা।