বিবাহ সুন্নতসম্মত পদ্ধতিতে হওয়া বাঞ্ছনীয়। বিবাহ সুন্নাহসম্মত না হলে এর সওয়াব ও বরকত থেকে বঞ্চিত হয় বর-কনে এবং সংশ্লিষ্ট সবাই। ইসলামী বিবাহ মসজিদে ও জুমার দিন হওয়া উত্তম। এতে ঘোষণা ও জনসমাগম বেশি হয়।
তবে অন্য দিন ও অন্য স্থানেও বিবাহ পড়ানো যায়। বিবাহ পড়ানোর সুন্নাহসম্মত পদ্ধতি হলো, প্রথমে কনের কাছ থেকে ইজন বা অনুমতি নিতে হবে।
বিবাহের ক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রী বা বর-কনেই মুখ্য, যারা সারা জীবন একসঙ্গে ঘর-সংসার করবে। তাই বিবাহের আগে তাদের সম্মতি থাকতে হবে। কোনো অবস্থায়ই কোনো ছেলে-মেয়ের অসম্মতিতে তাদের বিবাহ করতে বাধ্য করা উচিত নয়। আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমাদের জন্য বৈধ নয় যে তোমরা বলপূর্বক নারীদের উত্তরাধিকারী হবে। ’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১৯)
আবু সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত, আবু হুরায়রা (রা.) তাদের কাছে বর্ণনা করেন যে নবী (সা.) বলেছেন, ‘কোনো বিধবা নারীকে তার সম্মতি ছাড়া বিয়ে দেওয়া যাবে না এবং কুমারি নারীকে তার অনুমতি ছাড়া বিয়ে দিতে পারবে না। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল! কিভাবে তার অনুমতি নেওয়া হবে। তিনি বলেন, তার চুপ থাকাই তার অনুমতি। (বুখারি, হাদিস : ৫১৩৬)
অতঃপর অভিভাবক (যদি বিবাহ পড়াতে সক্ষম হন) বা যিনি বিবাহ পড়াবেন তিনি বিবাহের খুতবা পাঠ করবেন। এরপর মেয়ের অভিভাবক বরের সামনে মেয়ের পরিচয় ও মোহরের পরিমাণ উল্লেখ করবেন। তারপর তিনি বিবাহের প্রস্তাব পেশ করবেন। অথবা অভিভাবকের অনুমতি নিয়ে যিনি বিবাহ পড়াবেন তিনি হবু বরের কাছে বিবাহের প্রস্তাব তুলে ধরবেন। এটাকে ইসলামের ভাষায় ‘ইজাব’ বলা হয়।
বিবাহের ক্ষেত্রে অভিভাবকের অনুমতি নিতে হবে। বিশেষ করে মেয়ের ক্ষেত্রে অভিভাবকের অনুমতি একান্তভাবে আবশ্যক। কারণ অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া বিবাহ হয় না। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘অভিভাবক ছাড়া কোনো বিবাহ নেই। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ১১০১)
যিনি বিবাহ পড়াবেন তিনি উপস্থিত মজলিসে হবু বরের উদ্দেশে বলবেন যে অমুকের মেয়ে অমুককে এত টাকা মোহরানায় আপনার কাছে বিবাহ দিলাম, আপনি বলুন ‘কবুল’ বা ‘আমি গ্রহণ করলাম’।
বিবাহ পড়ানোর সময় কমপক্ষে দুজন সাক্ষী উপস্থিত থাকতে হবে। তখন বর উচ্চ স্বরে ‘কবুল’ অথবা ‘আমি গ্রহণ করলাম’ বা সম্মতিসূচক ‘আলহামদু লিল্লাহ’ বলবে। এরূপ তিনবার বলা উত্তম। (বুখারি, হাদিস : ৯৫)
স্মরণ রাখতে হবে যে আগে খুতবা পাঠ করতে হবে তারপর ইজাব-কবুল (প্রস্তাব দেওয়া-নেওয়া)।
শুধু বরকেই কবুল বলাতে হবে। কনের কাছ থেকে কনের অভিভাবক শুধু অনুমতি নেবেন। বর বোবা হলে সাক্ষীদ্বয়ের উপস্থিতিতে ইশারা বা লেখার মাধ্যমেও বিবাহ সম্পন্ন হতে পারে।
এভাবে বিবাহ সম্পন্ন হয়ে যাবে। এরপর উপস্থিত সবাই পৃথকভাবে সুন্নতি দোয়া পাঠ করবে : ‘বা-রাকাল্লাহু লাকা, ওয়া বা-রাকা আলাইকা, ওয়া জামাআ বায়নাকুমা ফী খায়ের। ’
অর্থ : ‘আল্লাহ তোমার জন্য বরকত দিন, তোমার ওপর বরকত দিন ও তোমাদের দুজনকে কল্যাণের সঙ্গে মিলিত করুন। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ১০৯১)
বিবাহের খুতবা : বিবাহের খুতবার জন্য প্রথমে নির্দিষ্ট কাঠামোতে হামদ ও ছানা বা আল্লাহর প্রশংসা করবে। অতঃপর পবিত্র কোরআনের তিনটি আয়াত পাঠ করবে, যা যথাক্রমে সুরা নিসা, আয়াত : ১, সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১০২ এবং সুরা আহজাব, আয়াত : ৭০-৭১। (সূত্র : সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ২১১৮)