চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডের জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে চট্রগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বক্তব্যবের শুরুতে বলেন, ‘অনারা ক্যান আছন, বেয়াগগুন গম আছননি’। রোববার (৪ ডিসেম্বর) দুপুর পৌনে চারটায় বক্তব্য দেয়া শুরু করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি শুধু সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের জন্ম দিতে পারে। এছাড়া তারা আর কিছুই দিতে পারে না।
তারা ভোটে যেতে চায় না, গণতন্ত্র তাদের পছন্দ নয়। অবৈধ উপায়ে তারা ক্ষমতা দখল করতে চায়। খালেদা জিয়া ১৫ ফেব্রুয়ারিতে ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এসেছিল বলেই বাংলার মানুষ তাদের মেনে নেয়নি। এজন্য তারা পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিল।
জিয়াউর রহমান যেভাবে সেনা আইন, সংবিধান লঙ্খন করে ক্ষমতায় গিয়েছিলো, তারাও সেভাবে ক্ষমতায় যেতে চায়। তারা গ্রেনেড মারতে পারে, মিথ্যা কথা বলতে পারে। সেদিন যেভাবে গ্রেনেড হামলা করেছিলো তা সরকারী কোন পৃষ্টপোষকতা ছাড়া হতে পারে না। গ্রেনেড হামলায় আইভি রহমানসহ আমাদের ২২ জন নেতাকর্মী মারা গেছে। সেদিন আমিও মারা যেতে পারতাম। মানব ঢাল তৈরি করা হয়েছিল আমাকে বাঁচাতে।
চট্টগ্রামে তারা সন্ত্রাসী রাজত্ব কায়েম করেছে। দেশের ৫০০ জায়গায় বোমা হামলা চালিয়েছে এই বিএনপি। তারা বাংলাদেশের মানুষকে শান্তিতে থাকতে দেয়নি। তারা মানুষের শান্তি চায় না। তারা জনগণের অর্থ পাচার করেছে নিজেরা অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছে। অথচ জিয়াউর রহমান ৮০ সালে যখন মারা যায়, আমরা টিভিতে তখন শুনেছিলাম, একটা ভাঙ্গা সুটকেস আর ছেড়া গেঞ্জি ছাড়া তার কিছুই ছিল না। খালেদা জিয়ার ক্ষমতায় আসতে না আসতেই হাওয়া ভবন খুলে তার ছেলে চাঁদাবাজি আর অর্থ সংগ্রহ করে অর্থ পাচার করেছে। রাতারাতি তারা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছে। আমার প্রশ্ন, এগুলো কোথা থেকে আসলো? ভাঙ্গা সুটকেস তো আর জাদুর বাক্স হয়ে যায়নি।
চট্রগ্রামে নেয়া বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের ফিরিস্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের পক্ষে কাজ করে, এদেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে। এই চট্টগ্রামে প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আওয়ামী লীগ সরকার করেছে। ঢাকা চট্টগ্রাম সড়ক চার লেন থেকে ছয় লেনে উন্নত করবো আমরা।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, আজ খালেদা জিয়া কারাগারে কেন? বিদেশ থেকে টাকা এসেছিলো এতিমের জন্য। কিন্তু সেই টাকা এতিমরা পায়নি। জিয়া অরফানেজের টাকা চুরি করেছে বলেই তার সাজা হয়েছে। আর তার ছেলে একটা তো মারা গেছে। আরেকজন কুলাঙ্গার বানিয়ে রেখে গেছেন জিয়াউর রহমান। সে এখন লন্ডনে বসে আছে। আর কোনদিন রাজনীতি করবে না বলে ২০০৭ সালে তত্বাবধায়ক সরকারের কাছে মুচলেকা দিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছিল। এখন সে সেখানে বসে রাজার হালে থাকে আর দেশের ভেতর যত বোমাবাজি, যত রকমের খুন-খারাবি, নাশকতার কাজ সেগুলো চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশকে স্যাটেলাইটের জগতে নিয়ে গেছি। সারাদেশে আমরা ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ চালু করেছি। আপনাদের হাতে যে মোবাইল ফোন আছে এটা কে দিয়েছে? আওয়ামী লীগ সরকার দিয়েছে, আমরা দিয়েছি? আপনাদের চট্টগ্রামের লোক বিএনপি আমলে মন্ত্রী ছিল। তখন একটা মোবাইল ফোন কিনতে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা লাগতো। ফোন করলেও ১০ টাকা, ফোন ধরলেও ১০ টাকা লাগতো তখন। আজ আপনাদের সকলের হাতে মোবাইল ফোন যা আওয়ামী লীগ সরকার এসে উন্মুক্ত করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, রিজার্ভ নিয়ে তারা গুজব রটিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। আমরা রিজার্ভকে কাজে লাগিয়েছি। এখনো ৩৪ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ আছে। বাংলাদেশে খাদ্যের কোন অভাব নাই, কোনদিন অভাব হবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের জনগণের কাছে আত্মসমর্থন করতে হবে জেনে পাক বাহিনী পরিকল্পিতভাবেই এই দেশের সুর্য সন্তানদের হত্যা শুরু করে। যাতে করে এই দেশে বুদ্বিজীবী শুণ্য হয়ে যায়। এই দেশে যাতে ভবিষ্যতে এগোতে না পারে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে সেই ১০ ডিসেম্বরই বিএনপির খুব প্রিয় একটি তারিখ। ১৯৭১ সালের পাক বাহিনীর দোসর বিএনপি নাকি ১০ ডিসেম্বর ঢাকা দখল করবে এবং আওয়ামী লীগ সরকারেকে উৎখাত করবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালে জনগণের ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এসেছিলো। কিন্তু সেই চুরির ভোট এই দেশের জনগণ মেনে নেয় নাই। এর প্রতিবাদে সারা দেশের মানুষ ফুসে উঠে। আমরা জনগণের ভোট আদায়ে জনতার মঞ্চ করেছিলাম। ভোট চুরি করে ক্ষমতায় যাওয়া খালেদা জিয়াকে শেষ পর্যন্ত দেড় মাসের মাথায় বাধ্য হয়ে পদত্যাগ করতে হয়েছিলো। সেই ভোট চুরির কথা বিএনপির মনে রাখা উচিত। ভোট চুরি করে ক্ষমতায় যাওয়া এই দেশের মানুষ মেনে নেয় না। তাই ওরা হুংকার দিচ্ছে আবারও অবৈধ পন্থায় ক্ষমতায় যাওয়ার। তাই তো বিএনপি ভোট চায় না।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামের কথা সবসময় আমার মনে পড়ে। বাবা জেল থেকে বের হলেই চট্টগ্রামে নিয়ে আসতেন। করোনার কারণে দীর্ঘ সময় আসতে পারেনি তাই আজ হাজির হয়েছি। এই লালদিঘীর সামনে ১৯৮৮ সালে ২৪ জানুয়ারি আমাকে হত্যা করতে গুলি করা হয়। এ ঘটনার সঙ্গে খালেদা জিয়াও জড়িত ছিলেন। সেই হত্যাকারী পুলিশ অফিসারকে প্রমোশন দেওয়া হয়। বেশি দিন আগের কথা নয়, ২০০১ নির্বাচনে পর এই চট্টগ্রামে হিন্দু, বৌদ্ধরা কেউ রেহাই পায়নি, তাদের (বিএনপি) অত্যাচার থেকে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে আমরা ধারণ করি। কিন্তু ১৯৭৫ এর আগষ্টে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তার সেই আদর্শকে বিসর্জন দেয়া হয়। এমনকি বঙ্গন্ধুর নাম পর্যন্ত মুছে ফেলা হয়েছিলো। সে সময়ে এমনকি জয় বাংলা স্লোগান পর্যন্ত নিষিদ্ধ করেছিলো ওই খালেদা জিয়া গংরা। আমরা ক্ষমতায় ফিরে আসার পরে আল্লাহর রহমতে আজ জয় বাংলা স্লোগান ফিরে এসেছে। বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাস এখন তরুণ প্রজন্ম জানতে পারছে।
ওবায়দুল কাদের
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ফখরুল সাহেবরা দেখে যান, পলোগ্রাউন্ডে এটা মহাসমাবেশ নয়, মহাসমুদ্র। তারা রাজশাহীতে সমাবেশ করেছে। কিন্তু কত লোক হয়েছে? দশ হাজার লোক হলেও তারা বলে লাখ লাখ লোক।
ফখরুল সাহেবকে বলছি, মহাসাগরের গর্জন শুনতে পাচ্ছেন? আপনি না শুনতে পেলে আমির খসরু সাহেব, মীর নাসির সাহেব, নোমান সাহেব-আপনারা একটু দেখুন, চট্টগ্রাম শহরে আজ কী অবস্থা? সুতরাং তত্ত্বাবধায়কের ভূত মাথা থেকে নামান। তত্ত্বাবধায়ক সরকার কখনো হবে? হবে না।
তিনি বলেন, বিএনপি মানে বাংলাদেশ নালিশ পার্টি। কেউ বিশ্বাস করে না তাদের। বড়লোকদের বাড়ির সামনে যেমন লেখা থাকে, কুকুর থেকে সাবধান। এখন বাংলার মানুষ বলে, ‘তারেক থেকে সাবধান’।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেলা তিনটা ৫ মিনিটে পলোগ্রাউন্ডের জনসভাস্থলে এসে পৌঁছান। এ সময় মঞ্চ থেকে স্লোগান দিয়ে স্বাগত জানান জ্যেষ্ঠ নেতারা। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের জনসভায় ২৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। ভিত্তিপ্রস্তর করেন চারটি প্রকল্পের। ১১টি মন্ত্রণালয়ের অধীনে এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে এবং হওয়ার পথে রয়েছে। এসব উন্নয়ন প্রকল্পে মোট ব্যয় ৩ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা।
সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের সিনিয়র নেতা, মন্ত্রী-এমপিরা বক্তব্য রাখেন। নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের সঞ্চালনায় জনসভা অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে সকালে চট্টগ্রামের ভাটিয়ারির বিএমএ-তে সেনাবাহিনীর রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজে অংশ নিয়ে সালাম গ্রহণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাকে স্বাগত জানান সেনাবাহিনী প্রধান এসএম শফিউদ্দিন। এ সময় ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।