যশোর শামস্-উল হুদা স্টেডিয়ামে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভা শুরু হয়েছে। জনসভার মঞ্চে উঠেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রীতিমতো জনসমুদ্রে রূপ নিয়েছে যশোর স্টেডিয়াম। বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা ৩৮ মিনিটে তিনি স্টেডিয়ামে নির্মিত জনসভা মঞ্চে প্রধান অতিথির আসন গ্রহণ করেন।
এরপর দুপুর তিনটার পর বক্তব্য দেয়া শুরু করেন।
জসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন দেশে লুটপাট চালিয়েছে। আর আওয়ামী লীগ ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে বলেই দেশের এত উন্নয়ন হয়েছে। বিএনপি ক্ষমতায় এসে মানুষের হাতে তুলে দিয়েছিলো অস্ত্র আর হরতাল। আর আওয়ামী লীগ সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ উপহার দিয়েছে। দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছে বলেই বিএনপির নেতারা সাজা পেয়েছে। ৭ বছরের জেল ও ২০ কোটি টাকা জরিমানা হয়েছে তারেক জিয়ার। অস্ত্রচোরাচালান মামলায় তারেকের সাজা হয়েছে। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলারও সে আসামী। আর বেগম খালেদা জিয়া এতিমের টাকা মেরে দিয়েছে। সে মামলায়ও সে সাজা খাটছে। যারা সাজাপ্রাপ্ত তারা শুধু মানুষের রক্ত চুষে খায়, জনগণকে কিছু দিতে পারে না। মানুষ তাদের ভোট দিবে কেন?
তিনি আরও বলেন, এই বাংলাদেশ এসময় ছিল ভিক্ষুকের বাংলাদেশ। সেখান থেকে টেনে তুলে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপ দিয়েছে আওয়ামী লীগ। আজকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নত করেছি। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ। দেশের মানুষের অধিকার রক্ষার লক্ষ্য নিয়েই আওয়ামী লীগ কাজ করে যাচ্ছে। বিএনপি রক্ত আর হত্যা ছাড়া দেশের মানুষকে কিছুই দিতে পারেনি।
রিজার্ভের কোন সমস্যা নেই উল্লেখ করে জনসভায় শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের রিজার্ভ কোথাও যায়নি। রিজার্ভ মানুষের কাজে লেগেছে। ব্যাংকে পযাপ্ত অর্থ আছে। দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে।
যশোরের উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষমতায় এসে মোংলা বন্দর বন্ধ করে দিয়েছিল খালেদা। আমরা সেই বন্দরের উন্নয়ন করেছি। অভয়নগরে ইপিজেড করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে জমির ব্যবস্থা করা হয়েছে। বর্গচাষিদের বিনা সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভাঙ্গা-যশোর মহাসড়কে উন্নত করা হয়েছে। যশোরে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস নির্মাণ করা হয়েছে। ২০১০ সালে মেডিকেল কলেজ নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নতি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, দেশে খাদ্য ঘাটতি দূর করতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। করোনা মোকাবেলা করতে বিনামূল্যে টিকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। করোনার সময় মানুষকে নগদ টাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সব এলাকায় বিনা টাকায় ঘরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৩৫ লাখ ভূমিহীনকে ঘর দেওয়া হয়েছে। খালেদার সময় ৪০ ভাগ মানুষ দরিদ্র ছিল, আমরা কমিয়ে ২৪ ভাগে এনেছি। ১৫ টাকায় মানুষকে চাল দেওয়া হচ্ছে। আর যাদের অবস্থা একটু ভালো তাদের কার্ড দিয়ে ৩০ টাকায় চালের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, সাবমেরিন ক্যাব এবং ব্রডব্যান্ড ইউনিয়ন পর্যন্ত পৌছে গেছে।
এসময় আগামীতে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে আবারও ক্ষমতায় আনার জন্য যশোরবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে মানুষের সেবা করার সুযোগ দেওয়ায় আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আবারও আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে সেবা করার সুযোগ দেবেন কিনা ওয়াদা করেন। এসময় কানায় কানায় পূর্ণ যশোরের শামস-উল হুদা স্টেডিয়ামের উপস্থিত লাখো নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একাত্বতা প্রকাশ করেন।
যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে জনসভা এবং জেলা সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদারের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ প্রমুখ।