বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ আজ। সমাবেশের আগের দিন থেকেই বরিশাল মহানগর কার্যত সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
তিন চাকার যান ও ভোলা থেকে বরিশালমুখী লঞ্চ বন্ধ দুদিন ধরে। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে বন্ধ বাস, ভাড়ায় চালিত মাইক্রোবাস, স্পিডবোট এবং অভ্যন্তরীণ সব গন্তব্যের লঞ্চ চলাচল।
সর্বশেষ গতকাল বিকেলে বরিশাল-ঢাকা-বরিশাল গন্তব্যে লঞ্চ চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেন মালিকেরা। শহরে প্রবেশ পথে ব্যক্তিগত গাড়িও পুলিশের তল্লাশি ও কড়াকড়ির মুখে পড়তে হচ্ছে। এর পরও বিএনপির অনেক নেতা-কর্মী গতকাল শুক্রবার বিভিন্ন উপায়ে বরিশালে পৌঁছেছেন বলে জানা গেছে। পুলিশ বলছে, তাদের তল্লাশি নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ।
এমন অবস্থায় ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। তারা প্রয়োজনে বরিশাল ছাড়তে পারছেন না, প্রবেশও করতে পারছেন না। এর মধ্যে গতকাল সন্ধ্যায় শহরের বিভিন্ন সড়কে ছাত্রলীগ মোটরসাইকেল মহড়া দিয়েছে। লাঠিসোঁটা হাতে খণ্ড খণ্ড মিছিলও হয়েছে।
এমন বিরূপ পরিস্থিতিতেই আজ শনিবার বিকেলে বরিশাল নগরের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে (বেলস পার্ক) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ। তবে এর মধ্যেও বিএনপির নেতা-কর্মীরা সমাবেশে যোগ দিতে ব্যবহার করছেন নানা কৌশল।
বরিশালের আগে চারটি বিভাগীয় শহরে বিএনপির গণসমাবেশ হয়েছে। এর কোনোটাই নির্বিঘ্নে হতে পারেনি। সবখানেই কমবেশি বাধা ছিল। এর মধ্যে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও খুলনায় পরিবহন ধর্মঘট ছাড়াও সমাবেশে যাওয়ার পথে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা, মারধর ও বাধার ঘটনা ঘটেছে। রংপুরে হামলার ঘটনা ঘটেনি। তবে সেখানেও সমাবেশকে ঘিরে দুদিন আগ থেকেই পরিবহন ধর্মঘট ছিল। বরিশালে গতকাল পর্যন্ত বড় ধরনের হামলা ও মারধরের ঘটনা না ঘটলেও সমাবেশকে ঘিরে তিন দিন আগ থেকেই ক্ষমতাসীন দলের হুমকি-ধামকি ও রাস্তায় রাস্তায় ব্যাপক মহড়া চলেছে।
মোটরসাইকেলে করে সমাবেশের উদ্দেশে যাওয়ার পথে গতকাল সন্ধ্যায় পটুয়াখালীর গাবুয়া বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন মহাসড়কে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে। এতে তিনজন আহত হন। দলটির নেতাদের অভিযোগ, সরকারি দলের লোকজন এ হামলা চালিয়েছে।
গণসমাবেশের অন্যতম সমন্বয়ক এবং বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দীন স্বপন বলেন, বরিশাল একটি নদীবহুল এলাকা। দক্ষিণাঞ্চলের রাজধানী এই শহরের সঙ্গে প্রায় অর্ধেক যোগাযোগই নদী নির্ভর। সরকার পরিবহন ধর্মঘটের নামে সড়ক পথ বন্ধ করেছে এবং শেষ মুহূর্তে নৌপথও বন্ধ করে দিয়েছে।
এই অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, ‘বাস, লঞ্চ এবং অন্যান্য যানের ধর্মঘট ডেকেছে মালিক-শ্রমিকেরা। এর সঙ্গে বিএনপির সমাবেশের কী সম্পর্ক থাকতে পারে? আবার এ জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করা হচ্ছে কেন?’
বরিশাল নগরে আসার সব পথ বন্ধ হওয়ার পরও নানা উপায়ে বিএনপির নেতা-কর্মীরা সমাবেশে জমায়েত হন। শুক্রবার রাত থেকেই সমাবেশস্থলে জড়ো হচ্ছেন হাজার হাজার নেতা-কর্মী। কথা বলে জানা যায়, কেউ মাছ ধরার ট্রলারে, কেউ ইঞ্জিনচালিত নৌকায়, পণ্যবাহী নৌযানে, কেউবা সাইকেলে করে বরিশাল এসেছেন। তাঁদের অধিকাংশই রাতে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে বিছানা পেতে রাত্রি যাপন করেন।