ক্রিকেটে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা নতুন কিছু নয়। বল-ব্যাটের বাইরে, স্টেডিয়ামের গ্যালারি পেরিয়ে, দেশের সীমানা ছাড়িয়ে যায় এর উন্মাদনা। সেকারণেই আজ (২৮ আগস্ট) সবার চোখ থাকবে মরুর দেশে। বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় দুবাইতে যখন রোহিত শর্মা আর বাবর আজমরা মুখোমুখি হবেন তখন ওই লড়াইয়ের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়বে গোটা ক্রিকেট দুনিয়ায়।
কিছু স্মৃতিও তখন মনের আগল খুলে বেরিয়ে আসতে বাধ্য। যেখানে অবশ্যই ২০০৭ সালের প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনাল। তারও আগে শারজায় চেতন শর্মার বলে জাভেদ মিয়াঁদাদের ছক্কা। কিংবা ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ফাইনালে ফখর জামানের আগুনে ব্যাটিং প্রদর্শনী। এখানেই শেষ নয়। কারগিল যুদ্ধের আবহে ১৯৯৯ সালে দু’দল ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে খেলতে নেমেছিল বারুদ বুকে নিয়ে। যদিও ম্যাচটা একদম ম্যাড়ম্যাড়ে হয়েছিল। ৪৭ রানে জিতেছিল ভারত।
সর্বশেষ ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শাহিন শাহ আফ্রিদি প্রথম স্পেলেই রোহিত আর লোকেশ রাহুলকে ফিরিয়ে ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেন। সেই আরব আমিরাতেই ১০ মাস পর আবার নামছে ভারত-পাকিস্তান। কিন্তু ইনজুরির কারণে খেলতে পারছেন না শাহিন আফ্রিদি।
দুদলের সর্বশেষ মুখোমুখির সে ম্যাচে ১০ উইকেটের হারে ভারত যে ধাক্কাটা খেয়েছিল, শেষ পর্যন্ত সে হিসাব মেলাতে পারেনি তারা। বিদায় নেয় গ্রুপপর্ব থেকেই।
অবশ্য তার টি-টোয়েন্টিতে ভারতের পরিসংখ্যান ঈর্ষণীয়। ২৮ ম্যাচের ২২টিতে জিতেছে তারা। পাকিস্তান ১২ ম্যাচ খেলে জিতেছে ১০টি। সাফল্যের শতকরা হিসাবে দুই দল প্রায় একই সমতলে দাঁড়িয়ে।
তবে বিশ্বকাপ পরিসংখ্যান ভারতের দিকে ঝুঁকে আছে। মোট ৯ বার মুখোমুখি হয়েছে ভারত এবং পাকিস্তান। ছয়টি ম্যাচে জিতেছে ভারত। দুটি ম্যাচে জিতেছে পাকিস্তান। একটি ম্যাচ টাই হয়। বোল-আউটের পর সেই ম্যাচ জেতে ভারত। এছাড়া গত বারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ম্যাচ বাদ দিলে বিশ্বকাপে ভারতকে কখনো হারাতে পারেনি পাকিস্তান।
তবে দু’দলই জানে মাঠের খেলায় পরিসংখ্যান কাজ দেবে না। লোকেশ রাহুল তাই বলেছেন, ‘আমরা সবাই এখন এশিয়া কাপের জন্য উত্তেজিত। খেলোয়াড় হিসেবে, দল হিসেবে আমরা ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের অপেক্ষায় আছি। আমরা পরস্পরের বিরুদ্ধে খুব একটা খেলার সুযোগ পাই না। এই রকম বড় টুর্নামেন্টগুলোতেই আমরা মুখোমুখি হই। যার ফলে এটা আমাদের কাছে একটা চ্যালেঞ্জ। পাকিস্তানের মতো ভালো দলের বিরুদ্ধে খেলা এবং পারফরম্যান্সের ইতিহাসের কথা মাথায় রেখে আমরা নতুন চ্যালেঞ্জের জন্য তৈরি। ’
ভারতের বিপক্ষে ব্লকবাস্টার ম্যাচের আগেই পাকিস্তানের বোলিং বিভাগের শক্তিক্ষয় হয়েছে। শাহিনের সঙ্গে ইনজুরির কারণে খেলতে পারছেন না মোহাম্মদ ওয়াসিম। তার পরিবর্তে শুরুতে বাদ পড়া হাসান আলিকে ডেকে আনা হয়েছে। এই হাসান গত বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ম্যাথু ওয়েডের ক্যাচ ফেলে ভিলেন হয়েছিলেন। আজ তেমন পারফরমেন্স দেখাতে পারলে আবার জনতার নায়ক হবেন। যা হোক এসব ছোট-বড় টিম নিউজ পাশে সরিয়ে অলরাউন্ডার শাদাব খানের কথা শুনলে কিন্তু সত্যি মনে হবে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের উত্তাপ করেছে।
শাদাব সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘বিরাট কোহলি একজন কিংবদন্তি। তার পারফরম্যান্স এখনো ভালো। কিন্তু তিনি এমন উচ্চ মান স্থাপন করেছেন যে লোকেরা মনে করেন, তিনি পারফরম্যান্স করতে পারছেন না। আমি আশা করি, তিনি ফর্মে ফিরে আসবেন এবং সেঞ্চুরিও করবেন। তবে আমাদের বিপক্ষে নয়। ’
এশিয়া কাপের আগে পাকিস্তান দলের ইনজুরি সমস্যা নিয়ে শাদাব খান বলেছেন, ‘আমরা শাহিন এবং মোহাম্মদ ওয়াসিমকে মিস করব। ওরা দুর্দান্ত খেলোয়াড়। কিন্তু ক্রিকেটের সৌন্দর্য হলো, এটা দলগত খেলা, ব্যক্তিগত খেলা নয়। আমরা নতুন করে লড়াই শুরু করব। কারণ এটি একটি নতুন ম্যাচ। যা হয়েছে তা এখন ইতিহাস। আমরা যেভাবে খেলছি, সেভাবেই পারফর্ম করতে চাই। অবশ্যই, আমাদের একটি ভালো দল আছে। আমরা খেলায় মনোনিবেশ করি, ফলাফল নিয়ে চিন্তা করি না। ’
ভারত
রোহিত শর্মা, লোকেশ রাহুল, বিরাট কোহলি, সূর্যকুমার যাদব, রিশভ পান্ট, হার্দিক পান্ডিয়া, রবীন্দ্র জাদেজা, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, যুজবেন্দ্র চাহাল, ভুবনেশ্বর কুমার ও আরশদীপ সিং।
পাকিস্তান
বাবর আজম, মোহাম্মদ রিজওয়ান, ফখর জামান, ইফতিখার আহমেদ, হায়দার আলী, খুশদিল শাহ, শাদাব খান, মোহাম্মদ নওয়াজ, মোহাম্মদ হাসনাইন, হারিস রউফ ও শাহনেওয়াজ দহানি।