একজন করোনা রোগীর প্রতিদিনের খাবারের জন্য সরকারীভাবে ৩০০ টাকা করে বরাদ্দ থাকলেও লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের একজন রোগীকে যে খাবার দেওয়া হয় তা নিতান্তই সামান্য্য এবং নিম্নমানের।
তিন বেলায় রোগিদের যে খাবার দেওয়া হচ্ছে তার বর্তমান বাজারমূল্য ৬০-৭০ টাকার বেশি নয়। পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ফলমূল দেওয়ার কথা থাকলেও তা পাচ্ছেন না রোগীরা।
ফলে অধিকাংশ রোগীকেই বাড়ির বা বাহিরের খাবারের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। সেই সাথে বাহিরে থেকে খাবার সরবরাহের কারনে করোনা ইউনিটে দর্শনার্থীর আনাগোনায় করোনা সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকিও বাড়ছে।
অনেক রোগী হাসপাতালের খাবার খেতে আগ্রহ প্রকাশ করেন না তাই সেই খাবারের টাকাটাও জমা হচ্ছে ঠিকাদারের পকেটে। অনুসন্ধানে জানা যায়, হাসপাতালে বর্তমানে ২২ জন করোনা রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
তাদের সকালের নাস্তায় দেওয়া হচ্ছে একটি করে পাঁচ টাকা দামের পাউরুটি, আট টাকা দামের একটি ডিম ও চার-পাঁচ টাকা দামের কলা।
দুপুরের খাবারে ভাতের সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে ডাল, একটি ডিম অথবা এক টুকরো মাছ এবং রাতের খাবারেও ভাতের সঙ্গে এক টুকরো মাছ অথবা একটি ডিম। বর্তমান বাজারদরে তিন বেলার খাবারের দাম হিসাব করলে দাঁড়ায় ৬০-৭০ টাকা।
রোগীদের খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ফলমূল দেওয়ার কথা থাকলেও সেগুলো দেওয়া হচ্ছে না। হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসা নেওয়া রোগী সুফী মোহাম্মদ বলেন ‘ এখানে ভর্তি হওয়ার ১০ দিন হলো এর মধ্যে শুধু একদিন একটি মাল্টা পেয়েছিলাম।
হাসপাতালের খাবারের মানও খুব একটা ভাল না তাই এখানের দেওয়া খাবার আমি খেতে পারিনি। বাহির থেকে খাবার এনে খেতে হচ্ছে আমাকে। তিনি বলেন, ‘সকালে নাস্তা হিসেবে একটা কলা দিয়েছিল সেটিও খাবার উপযোগী ছিল না। আর তরকারি দেখলে খাবার ইচ্ছা নষ্ট হয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি বরাদ্দের টাকায় নিয়ম অনুযায়ী করোনা রোগীকে নিয়মিত ফলমূল ও হরলিক্স দেওয়ার কথা কিন্তু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীরা তা পাচ্ছেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে করোনা আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসাধীন এক রোগী জানান, তিনি করোনা শনাক্ত হওয়ার পর কয়েকদিন ধরে হাসপাতোলের করোনা আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন কিন্তু একদিনের জন্যেও হাসপাতালের দেওয়া খাবার খেতে পারেননি।
ভাত ঠিকমতো সিদ্ধ হয় না। সকালে নাস্তা হিসেবে দেওয়া পাউরটিও খাবার মতো না। এছাড়া কোনোদিন ফলমূল পাননি। বাধ্য হয়েই বাড়ি থেকে খাবার এনে খেতে হচ্ছে।
করোনা আক্রান্ত রোগীর এক স্বজন পারভীন আখতার বলেন, আইসোলেশনে থাকা ‘করোনা রোগীদের দেওয়া খাবার খুবই নিম্নমানের।
এখানে ভর্তি রোগীরা হাসপাতালের দেওয়া খাবার খেতে পারেন না বলে বাড়ি থেকে খাবার পাঠাতে হয়। এজন্য বাহিরে থেকে রোগীর লোকজন এসে এখানে খাবার দিয়ে যায়।
তাই এখান থেকেই করোনা সংক্রমন বৃদ্ধির ভয় কাজ করছে তার। অপর একজন করোনা রোগীর আত্মীয় বলেন, এখানে যে খাবারটা দেয়া হচ্ছে নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করবেন না।
সকালের নাস্তার জন্য দেয়া হয় শুকনো একটা পাউরুটি, দুপুরে সিলভার কাপ মাছের এক টুকরো মাছ ও রাতেও দেয়া হয় একইরকম খাবার যা একেবারেই খাবারের অনুপযোগি।
এজন্যই করোনা রোগির আত্মীয় স্বজন বাহিরে থেকে রোগিদের খাবার নিয়ে আসেন। তাই এই করোনা ইউনিটে প্রতিদিন যত্রতত্র ভাবে লোকজনের আনাগোনা লক্ষ করা যায়। হাসপাতালের এই করোনা ইউনিটে বাহিরে থেকে যেভাবে লোকজন আসা যাওয়া করছে তাতে করে খুব তারাতারি পুরো হাসপাতালটিই করোনায় আক্রান্ত হয়ে পড়বে।
সদর হাসপাতালের কুক হজরত আলী বলেন, ‘হাসপাতালে খাদ্য সরবরাহকারী যেভাবে খাবার সরবরাহ করছেন সেভাবেই তিনি রান্না করে করোনা রোগীদের দিচ্ছেন।
অনেক রোগী হাসপাতালের খাবার খেতে আগ্রহ প্রকাশ করেন না, তাই তাদের খাবার দেওয়া হয় না। এ বিষয়ে হাসপাতালের খাদ্য সরবরাহকারী ঠিকাদার আজাহার আলী বলেন, ‘চুক্তি অনুযায়ী সব ধরনের খাবার, ফলমূল ও হরলিক্স সরবরাহ করছি। করোনা রোগীকে তালিকা অনুযায়ী খাদ্য বিতরণ করার দায়িত্ব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।
তাই তারাই জানবেন আসলে রোগিদের ঠিকমতো খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে কি না.? লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মঞ্জুর মোর্শেদ দোলন বলেন, ‘তালিকা অনুযায়ী চিকিৎসাধীন করোনা রোগীদের সব ধরনের খাদ্য পাওয়ার কথা।
কিন্তু কেন রোগিদের সে খাবার দেয়া হচ্ছে না আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ঠিকাদার যেভাবে খাদ্য সরবরাহ করছেন সেভাবেই করোনা রোগীকে খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। অনেক সময় ঠিকাদারের খাদ্য সরবরাহে সমস্যা হলে খাবারের মান খারাপ হতে পারে। তিনি গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলেও জানান।