মোল্লা আতাউর রহমান মিন্টু: করোনা মহামারির প্রভাব থেকে রক্ষা পেতে সরকার দেশের ১১২ উপজেলাকে শতভাগ ভাতার আওতায় এনেছে। এটা সরকারের একটি মহতি উদ্যোগ নিঃসন্দেহে। করোনার প্রভাব থেকে রক্ষা পেতে শুরু থেকেই নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। দেশের মানুষকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিয়েছে। সরকারি তরফ থেকে যা যা করা দরকার সরকার সেটা করেছে এবং এখনও করে যাচ্ছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে জন্য কোটি কোটি টাকা প্রণোদনা পর্যন্ত দিয়েছে। করোনাকালীন সময়ে আর্থিক ভাবে সহযোগিতা করতে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে ত্রাণও দেয়া হয়েছে নানা সময়ে।
করোনা প্রার্দুভাব শুধু বাংলাদেশে নয়- সারা বিশ্বের প্রতিটি দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে। এ পর্যন্ত বিশ্বে আট লাখের বেশি মানুষ মারা গেছে। আক্রান্ত হয়েছে কয়েক লাখ মানুষ। করোনা থেকে রক্ষা পেতে এখনও কোনো ওষুধ আবিষ্কার হয়নি। ভ্যাকসিন আবিষ্কারের অসম প্রতিযোগিতা চলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে- দুই বছরের কম সময়ের মধ্যে করোনা নির্র্মূল হবে। যে কারণে মানুষ আজ অসহায় করোনার কাছে। বৈশ্বিক এ সমস্যা মোকাবিলা করে মানুষ আজ পথ চলছে। অর্থনৈতিকভাবে প্রতিটি দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাংলাদেশও হয়েছে। করোনায় এ পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রায় চার হাজারের মত মানুষ মারা গেছে। আক্রান্ত হয়েছে প্রায় তিন লাখ মানুষ। আগের চেয়ে বর্তমানে করোনার প্রার্দুভাব বেশি। তার পরও মানুষ আর বসে থাকতে চাইছে না। যে কারণে রাস্তায় নেমে পড়েছে জীবিকার তাগিদে।
তবুও আতঙ্ক, ভয় মানুষের মধ্যে বিরাজমান। কারণ একেরপর এক দুর্যোগ মানুষকে আক্রান্ত করছে। করোনা পাশাপাশি বন্যা হওয়ায় আমরা আরো বেশি আতঙ্কিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। তিন দফায় বন্যার পর এখন বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি, টানা বৃষ্টিপাত এবং অমাবস্যায় অস্বাভাবিক জোয়ার সৃষ্টি হওয়ায় দেশের উপকূলীয় এলাকার বিস্তীর্ণ জনপদ পানিতে তলিয়ে গেছে। মানুষজন নতুন করে দুর্ভোগে পড়েছে। এ সব দুর্যোগ সাহসের সঙ্গে আমাদের সরকার মোকাবিলা করছে।
এ অবস্থায় করোনাকে উপেক্ষা নয়, করোনা মোকাবিলা করে সরকার বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে যা সর্বমহলে প্রশংসা কুড়িয়েছে। তেমনি একটি হচ্ছে ১০০ উপজেলাকে শতভাগ ভাতার আওতায় আনা। করোনা ভাইরাস শুরুর পর ৫ এপ্রিল ১০০ উপজেলায় শতভাগ ভাতা প্রদানের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই। এমন ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেছিলেন, বয়স্কভাতা এবং বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলাদের জন্য ভাতা কর্মসূচির আওতায় দারিদ্র্যপ্রবণ ১০০টি উপজেলায় শতভাগে উন্নীত করবে সরকার। করোনা ভাইরাসের কারণে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানোর কথাও বলেন তিনি। বিসিএসের দারিদ্র্যের মানচিত্র অনুযায়ী নির্বাচিত ১১২ উপজেলার শতভাগ বয়স্ক মানুষ, শতভাগ বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারীরা প্রতিমাসে ৫শ’ টাকা করে ভাতা পাচ্ছেন। ১১২ উপজেলাকে শতভাগ ভাতার আওতায় আনার পর নতুন করে আরও সাড়ে ৮ লাখ সুবিধাভোগী সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে যুক্ত হয়েছে।
অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তব্যে শতভাগ ভাতাভোগীর বিষয়টি উল্লেখ না থাকলেও পরে সর্বাধিক দারিদ্র্যপ্রবণ ১০০ উপজেলাসহ বিশেষ বিবেচনায় আরও ১২টি উপজেলাকে শতভাগ ভাতার আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিসিএস) কর্তৃক প্রকাশিত ‘পোভার্টি ম্যাপস অব বাংলাদেশ-২০১০’ অনুযায়ী সর্বাধিক দারিদ্র্যপ্রবণ ১০০টি এবং বিশেষ বিবেচনায় ১২ উপজেলায় বয়স্ক এবং বিধবা, স্বামী নিগৃহীতা মহিলাদের ভাতা দিতে সম্মতি দেয় সরকার। সুবিধাভোগীরা গত জুলাই থেকে ভাতা পাচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে আমরা বলতে চাই- সরকার যেসব উপজেলাকে ভাতা প্রদানের আওতায় এনেছে এর বাইরে আরো উপজেলা রয়েছে যেখানে অনেক দরিদ্র মানুষ রয়েছে। সে সব উপজেলার মানুষদেরও ভাতার আওতায় আনা হোক। এতে সামগ্রিকভাবে সকল দরিদ্র মানুষ উপকৃত হবে।