রাজধানীর কদমতলীতে একই পরিবারের তিনজনকে হত্যার রহস্য এখনও পুরোপুরি উৎঘাটন হয়নি। এই হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে রহস্য বেড়েই চলেছে।
মেহজাবিন ইসলাম মুন এই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করলেও স্বজন এবং মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করছেন, হত্যার পেছনে তার স্বামী শফিকুল ইসলামের বড় ভূমিকা থাকতে পারে।
গতকাল বুধবার রিমান্ডের দ্বিতীয় দিনে শফিকুল ঘটনার সময় অসুস্থ থাকার কথা বললেও তার পরকীয়া এবং শ্বশুরের সম্পত্তির ওপর নজরের বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ কারণেই তাকে বারবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
মেহজাবিন একা বাবা-মা ও বোনকে পরিকল্পিতভাবে খুন করেছেন – স্থানীয়রা এ কথা কেউ বিশ্বাস করতে চাইছে না। তারা মনে করেন, এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে মেহজাবিনের স্বামী শফিকুল ইসলাম এবং তার ঘনিষ্ঠ আরও কেউ জড়িত থাকতে পারে।
এ ঘটনার নেপথ্যে পরকীয়ার সঙ্গে সম্পত্তি দখলের চেষ্টাও জড়িত থাকতে পারে। কারণ মেহজাবিনের বাবা মাসুদ রানা দীর্ঘ ২৬ বছর প্রবাসে ছিলেন। পুরান ঢাকায় তার প্রচুর সম্পত্তি রয়েছে। ওই সম্পত্তি দখল করতে শফিকুল এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে ভূমিকা রাখতে পারেন বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
মেহজাবিনের খালা ইয়াসমিন বলেন, অর্থ ও সম্পত্তির জন্য এ হত্যাকাণ্ডে মেহজাবিনের স্বামী শফিকুলের ইন্ধন থাকতে পারে। পাঁচ বছর আগে পারিবারিকভাবে শফিকুল-মেহজাবিনের বিয়ে হয়।
এর কিছুদিন পরই পারিবারিক নানা বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে কলহ তৈরি হয়। বিয়ের পর মেহজাবিনের ছোট বোন জান্নাতুলের ওপর নজর পড়ে শফিকুলের।
এক পর্যায়ে মেহজাবিন ও তার মা মৌসুমী শফিকুলের এ বিষয়টি জানতে পারেন। মৌসুমী জামাতাকে নিয়ন্ত্রণেরও চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে শফিকুলের বিরুদ্ধে মামলাও করেন মৌসুমী।
এতে ক্ষুব্ধ হয়ে শফিকুলও মৌসুমীর বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করেন। শফিকুলের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে না পেরে এক পর্যায়ে অসহায় হয়ে পড়েন মৌসুমী।
আরেক স্বজন বলেন, পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে মৌসুমী তার ছোট মেয়ে জান্নাতুলকে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দেন। শফিকুল এতে আরও খেপে যান।
সেই থেকে তিনি মেহজাবিনের সঙ্গেও নানাভাবে অশান্তি সৃষ্টি করেন। শফিকুল পাঁচ মাস পর জান্নাতুলকে জামিনে কারাগার থেকে বের করে এনে আবার তার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক অব্যাহত রাখেন।
মেহজাবিনের খালা ইয়াসমিন আরও বলেন, ‘শফিকুল এই পরিবারের অনেক ক্ষতি করেছে। সে একবার আমার বোনকে (মৌসুমী) হত্যার উদ্দেশ্যে গায়ে আগুন লাগিয়ে দেয়।
চিকিৎসা করতেও বাধা দেয়। দরজা-জানালা বন্ধ করে আমার বোন ও ভাগ্নিকে প্রায়ই মারধর করত বলেও আমরা জেনেছি। প্রতিবাদ করায় আমাকেও হুমকি দিত শফিকুল। এ বিষয়ে কদমতলী থানায় অভিযোগ করে কোনও ফল না পেয়ে পরে কোর্টে মামলা করা হয়েছিল।’
ইয়াসমিনের অভিযোগ, ‘সংসারের অভিভাবক বিদেশে থাকার সুযোগ নিয়ে শফিকুল পুরো পরিবারটিকে জিম্মি করে ফেলেছিল। মেহজাবিন হত্যাকাণ্ডের দোষ একা নিতে চাইলেও আমরা মনে করি শফিকুল পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে থাকতে পারে।’
শফিকুল সম্পর্কে জানা গেছে, তিনি এলাকার মাদককারবারি ও সন্ত্রাসী চক্রের সদস্য। মৌসুমীকে অনেকটা জিম্মি করে মেহজাবিনকে বিয়ে করেছিলেন তিনি।
স্বজনরা জানান, বিয়ের ছয় মাসের মাথায় আমিন নামের এক ব্যক্তিকে হত্যাকাণ্ডের মামলায় গ্রেফতার হয়ে শফিকুল ছয় মাস কারাগারে আটক থেকে পরে জামিন পান।
পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার শাহ ইফতেখার আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে এখন পর্যন্ত মেহজাবিন একাই তিনজনকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।
তবে এই খুনের নেপথ্যে শফিকুলের কী ধরনের সম্পৃক্ততা আছে, তা জানতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে।
গত শনিবার সকালে পুরান ঢাকার কদমতলী থানার মুরাদপুরে একটি ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে মাসুদ রানা, তার স্ত্রী মৌসুমী ইসলাম ও মেয়ে জান্নাতুলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
অচেতন অবস্থায় মেয়ের জামাই শফিকুল ইসলাম ও নাতনি তৃপ্তিকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় ওই পরিবারের বড় মেয়ে মেহজাবিন ইসলাম মুন ও তার স্বামী শফিকুল ইসলামকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ।