গত কয়েকদিনের ভারী বর্ষন ও উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তায় পানি আবারো বৃদ্ধি পাচ্ছে । ফলে তিস্তা নদী তার পুরনো ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে তিস্তাচরের নিম্নাঞ্চল গুলোতে পানি প্রবেশ করতে শুরু করছে।
এতে তিস্তার তীর ও ৬৩ চরের মানুষ আতঙ্কিত অবস্থায় দিন যাপন করছে। সোমবার (২১ জুন) দুপুর ১২টায় দেশের বৃহত্তম সেচপ্রকল্প লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৪২ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার নিচ (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার) দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিস্তা পাড়ের মানুষের জানান, গেল তিন সপ্তাহে উজানের পাহাড়ি ঢল ও কয়েক দিনের বৃষ্টিতে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে শুকিয়ে যাওয়া মৃত প্রায় তিস্তা তৃতীয় ধাপে আবারো ফুলে ফেঁপে উঠে ফিরে পেয়েছে চিরচেনা রুপ।
হেঁটে পাড়ি দেয়া তিস্তায় চলতে শুরু করেছে নৌকা। হাকডাক বেড়েছে মাঝি মাল্লাদের। কর্মব্যস্থতা দেখা দিয়েছে তিস্তাপাড়ের জেলে পরিবারে।
অপর দিকে পানি প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় তিস্তার তীরবর্তি জেলার ৫টি উপজেলার প্রায় ২৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। জেলার পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, সিংগিমারী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, কাকিনা, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুন্ডা, ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তি নিম্নাঞ্চলের প্রায় ৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে।
এ দিকে হঠাৎ তিস্তা নদীতে পানি বৃদ্ধি দেখে তিস্তাপাড়ের মানুষ বড় রকমের বন্যার শ্বঙ্কা করলেও বন্যা সতর্কীকরন কেন্দ্রের দাবি তিস্তায় বড় ধরনের বন্যার কোন আশঙ্কা নেই।
বৃষ্টির কারণে উজানের ঢেউয়ের ফলে পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। উজানে ভারতে পানি প্রবাহ কমে যাচ্ছে। তাই ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ কমে যাবে বলে দাবি করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া শাখা।
পলি ও বালু জমে তিস্তা ভরাট হওয়ায় সামান্যতেই তিস্তার পানি প্রবাহ লোকালয়ে প্রবাহিত হয়ে বন্যার সৃষ্টি করে। তবে আতঙ্কিত না হতে পরামর্শ দিয়েছেন বন্যা সতর্কীকরন কেন্দ্রের।
তবে হঠাৎ তিস্তায় পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় সৃষ্ঠ বন্যায় চরাঞ্চলের সবজি, বাদাম ও ভুট্টাসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা। অনেকের ফসলের ক্ষেত বন্যার পানিতে ডুবে গিয়ে ফসলহানীর শ্বঙ্কায় চিন্তিত কৃষকরা।
তিস্তার তীরবর্তি নিম্নাঞ্চলের পানিবন্দি পরিবারগুলো শিশু বৃদ্ধ ও গবাদি পশুপাখি নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, সোমবার সকাল থেকে তিস্তার পানি বেড়েই চলেছে।
সকাল ৯টায় ৫২ দশমিক ৫৪ সেন্টিমিটার যা (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার) ৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। দুপুর ১২ টায় তা কমে ৫২ দশমিক ৪২ সেন্টিমিটার ( স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার) ১৮ সেন্টিমিটারের নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দেয়া হয়েছে।