লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর এলাকার আলোচিত যুবলীগকর্মী ফখরুল ইসলাম বুলেট হত্যা মামলার অন্যতম স্বাক্ষী মোস্তাফিজুর রহমানকে হাতুড়ি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে হাত-পা ও সমস্ত শরীর থেতলে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
গুরুতর আহত মোস্তাফিজুর রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বর্তমানে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। এ ঘটনায় পুলিশ ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
এ ঘটনায় রবিবার (১২জুন) রাতে আহত মোস্তাফিজুরের স্ত্রী রেবেকা সুলতানা বাদী হয়ে লালমনিরহাট জেলা পরিষদ সদস্য তাহমিদুল ইসলাম বিপ্লব ও উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এনামুল হকসহ ৯ জনের নাম উল্লেখ করে লালমনিরহাট সদর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
আহত মোস্তাফিজুর সদর উপজপলার মহেন্দ্র নগর ইউনয়নের চিনিপাড়া গ্রামের মোঃ রফিকুল ইসলামের ছেলে। এদিকে মামলা প্রত্যাহারের দাবীতে গত রোববার সন্ধ্যায় ওই বাজার এলাকায় বিক্ষোভ করেছে আসামী পক্ষের লোকজন।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, বুলেট হত্যা মামলার অন্যতম স্বাক্ষী মোস্তাফিজুরকে আদালতে স্বাক্ষী না দেয়ার জন্য বারবার নিষেধ করে আসছিল মামলার প্রধান আসামী আমিনুল খান ও তাঁর লোকজন।
গত শুক্রবার সকালে মোস্তাফিজুর রহমান লুতু স্থানীয় বুড়িরবাজারে গেলে সেখানে জেলা পরিষদ সদস্য তাহমিদুল ইসলাম বিপ্লব এবং হত্যা মামলার আসামী আমিনুল খান তাঁর লোকজন নিয়ে মোস্তাফিজুরকে ধাওয়া করে।
এসময় মোস্তাফিজুর দৌড়ে পালিয়ে একটি দোকানের ভিতরে আশ্রয় নিলে সেখানেই তাঁর ওপর হামলা চালানো হয়। এ সময় তাঁর হাত-পা, মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে রামদা, রড ও হাতুড়ি দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে হাত-পা সহ সমস্ত শরীর থেতলে দেয়া হয়।
যে ভাবে হত্যা করা হয়েছিলো ফকরুল ইসলাম বুলেটকে। তারা একইভাবে মোস্তাফিজুরের উপরও হামলা চালায়। এসময় মোস্তাফিজুরকে বাঁচাতে বাজারের কয়েকজন লোক এগিয়ে এলে তাঁদেরকেও ধাওয়া দেয় ওই আমিনুল খান গ্রুপের সন্ত্রাসী বাহিনী।
পরে রক্তাক্ত অবস্থায় মোস্তাফিজুরকে সেখানকার একটি কিন্ডার গার্টেন স্কুলের পেছনে পুকুরপারে নিয়ে আবারও বেধড়ক মারপিট করে রক্তাক্ত গুরুতর আহত করা হয়।
এক পর্যায়ে স্থানীয়রা দলবদ্ধভাবে এগিয়ে এলে হামলাকারীরা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা মোস্তাফিজুরকে উদ্ধার করে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়।
সেখানে অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে দ্রুত রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। বর্তমানে মোস্তাফিজুর রহমান রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন।
এ ব্যাপারে মোস্তাফিজুরের স্ত্রী রেবেকা সুলতানা বলেন, ‘তিন দিন ধরে আমার স্বামী সংজ্ঞাহীন অবস্থায় রংপুর হাসপাতালে পড়ে আছে। তারা আমার স্বামীকে পিটিয়ে ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কুপিয়ে গুরুত্বর জখম করেছেন।
আমি এ ঘটনায় জড়িত সকল আসামিদের বিচার চাই। তাদের দ্রুত গ্রেফতারে দাবী করছি প্রশাসনের নিকট। লালমনিরহাট সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহা আলম জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু করা হয়েছে।
ইতিমধ্যে মামলার আসামী ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক নামে একজনকে গ্রেফতার করে ওইদিনই আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
বাকী আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে একই এলাকায় যুবলীগকর্মী ফখরুল ইসলাম বুলেটকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে স্থানীয় আওয়ামীলীগ কর্মী আমিনুল খাঁন ও তার লোকজন।
সে সময় এ হত্যা মামলার আসামী গ্রেফতারে মানববন্ধন ও সভা সেমিনার করে এলাকাবাসী। ওই মামলার প্রধান আসামী আমিনুল খান সদ্য জেল থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। মুক্তি পেয়ে গ্রামের মানুষকে জিম্মি করে তার দলবল-সহ বিভিন্ন অপরাধ মূলক কাজ করে যাচ্ছে, যাহা গোপনে তদন্ত করলে প্রমাণ পাওয়া যাবে।