দেশের সর্ব দক্ষিণ-পশ্চিমের জনপদ ভারত সীমান্ত ঘেষা সাতক্ষীরায় করোনা পরিস্থিতি এখন ঊর্ধ্বগতি। গত এক সপ্তাহে ৫০ শতাংশ থেকে কয়েক দফা লাফিয়ে সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় তা পৌঁছেছে ৫৯ দশমিক ৩৪ শতাংশে। এটিই একদিনে করোনা আক্রান্তের রেকর্ড।
জেলায় এ পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন মোট ৪৯ জন। আর উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ২২৯ জন। বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ৪৮০ জন করোনা পজেটিভ রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে।
মেডিকেল কলেজের স্থান সংস্কুলানে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে অতিরিক্ত একটি করোনা ইউনিট খোলা হয়েছে। কিন্তু সেখানে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন না থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন রোগীরা। প্রতিদিনই করোনা পজেটিভ রোগীর চাপ বাড়ায় লোকবল সংকটে চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন ডাক্তারা।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের সিভিল সার্জন কাম তত্ত্বাবধায়ক ডা. হুসায়েন সাফায়াত জানান, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবের পরীক্ষায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮২ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১০৮ জনের করোনা পজেটিভ ধরা পড়েছে। পরীক্ষানুসারে তা দাঁড়িয়েছে ৫৯ দশমিক ৩৪ শতাংশে। এটিই সাতক্ষীরার একদিনে সর্বোচ্চ আক্রান্তের রেকর্ড।
বর্তমানে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন রয়েছে ৪৮০ জন করোনা পজেটিভ রোগী। মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্থানসংকুলানে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের সার্জিক্যাল বিভাগে একটি করোনা ইউনিট খোলা হয়েছে। সেখানে ২৪ জন করোনা রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ অবস্থায় লোকবল সংকটে চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেনা ডাক্তারা। সদর হাসপাতালে সেন্ট্রাল এসি না থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন আক্রান্ত রোগীরা।
সিভিল সার্জন বলছেন, এ সংকট কাটিয়ে উঠতে আরও এক মাস সময় লাগবে। খুব দ্রুত সেন্ট্রাল এসির ব্যবস্থা করা হবে।
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের কনসালর্টেন ডা. সুমন কুমার দাস জানান, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভারত সীমান্ত ঘেষা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের জনপদ সাতক্ষীরায় ভোমরা স্থল বন্দরে অবাধে ভারতীয় ট্রাক ড্রাইভার হেলপারদের চলা-ফেরা এবং গত ৫ মে যশোরের বোনাপোল সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে আসা নাগরিকদের সাতক্ষীরায় হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা এবং তাদের মধ্যে ১৭ জনের করোনা পজেটিভ পাওয়া যায়। একই সাথে ঈদের পরে মানুষের অবাধ চলা ফেরার কারণে সাতক্ষীরায় করোনার ভয়াবহতা বেড়েছে।
তিনি আরও জানান, মেডিকেলের আই সোলেশন ওয়ার্ডে ৭৮ জন, পজেটিভ ওয়ার্ডে ২৮ জন চিকিৎসাধীন রয়েছে। গত ৮ জুন উপসর্গ নিয়ে সাতক্ষীরায় ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। পরীক্ষার রিপোর্ট আসলে জানা যাবে তারা করোনা পজেটিভ ছিল কিনা। সব মিলিয়ে প্রতিনিয়তই সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা রোগীর চাপ বাড়ছে। লোকবল সংকটে এ পরিস্থিতিতে চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এদিকে, করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে জেলায় ৫ জুন থেকে চলমান এক সপ্তাহের লকডাউন আরও বাড়ানোর চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।