মানুষের অসাধ্য বলে কিছু নেই। চেষ্টা ও অদম্য ইচ্ছে থাকলে সকল কিছুই সম্ভব। তার বাস্তব উদাহরণ তৈরি করছেন গলাচিপা সরকারি কলেজের মানবিক বিভাগের মেধাবী ও দরিদ্র ছাত্রী শতাব্দী রায়।
তিনি তার চরম দারিদ্র্যেকে পরাজিত করে মনের শক্তি দিয়ে স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে গেছেন। আজ তিনি সকলের ভালোবাসায় সিক্ত।
গলাচিপা উপজেলার ডাকুয়া ইউনিয়নের হোগলবুনিয়া গ্রামের মেয়ে দরিদ্র ও মেধাবী শতাব্দী রায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় ১৬তম মেধাতালিকা অর্জন করে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে।
এমন একটি সংবাদ পেয়ে সোমবার সন্ধ্যায় সুযোগ্য গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী অফিসার, মানবিক ও শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি মো: মহিউদ্দিন আল হেলাল ঝড়, বৃষ্টি ও কাঁদা মাটি উপেক্ষা করেই ছুটে গেছেন ওই শিক্ষার্থীর বাসায়। অন্ধকার, দূর্গম পথ, মাটির রাস্তার কাঁদা পেরিয়ে শতাব্দীর বাসায় গিয়ে আচমকা হাজির হোন ইউএনও মহিউদ্দিন আল হেলাল।
তিনি ওই শিক্ষার্থীকে তার এমন কৃতিত্বের জন্য ফুলেল শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। এসময় তার পড়াশোনার খোঁজ খবর নেন ও বিভিন্ন বিষয় দিকনির্দেশনা দেন। অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ যোগাতে বই উপহার ও নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করেন। এছাড়াও তিনি ভর্তি পরবর্তী পড়াশোনার খরচ ও বিভিন্ন সমস্যায় সহায়তা করার আশ্বাস দেন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে শিক্ষা বৃত্তি দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।
এদিকে আচমকা ইউএনও বাসায় আসায় শতাব্দী রায় অভিভূত হয়ে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ছোটবেলা থেকেই অভাব অনটন ও প্রতিকূলতার সাথে সংগ্রাম করে বড় হয়েছি। শিক্ষকদের সহায়তায় অদম্য ইচ্ছে শক্তি নিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে নিয়েছি। তবে ইউএনও স্যারের এ সহায়তা ও উৎসাহ নতুন করে স্বপ্ন বুনতে অনুপ্রেরণা যোগাবে আমার।
ইউএনও’র শিক্ষার্থীর বাসা পরিদর্শনের সময় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো: জহিরুন্নবী, ডাকুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ রায়, গলাচিপা প্রেসক্লাব সভাপতি সমিত কুমার দত্ত মলয় । এদিকে উপজেলার রতনদী তালতলী ইউনিয়নের নিমহাওলা গ্রামের আরেক মেধাবী শিক্ষার্থী গলাচিপা সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র মো: আসিবুর রহমান এর বাসায় আচমকা হাজির হোন ইউএনও মহিউদ্দিন আল হেলাল। জানা যায়, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় ২১৭১ তম মেধাতালিকা অর্জন করে খুলনা প্রকৌশলী ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে আসিবুর রহমান। এমন একটি সংবাদ পেয়ে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাতে ছুটে গেছেন মানবিক গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো: মহিউদ্দিন আল হেলাল। এসময় একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি আসিবুর রহমানের পড়াশোনার খোঁজ খবর নেন। তার এমন কৃতিত্বের উপহার স্বরূপ ফুলেল শুভেচ্ছা ও বই উপহার প্রদান করেন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে শিক্ষা বৃত্তি দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান।
আসিবুর রহমান বলেন, স্যার আমার সফলতার খবর শুনে আমার বাসায় দেখা করতে এসেছেন, আমি খুবই আনন্দিত। তার বিভিন্ন দিক নির্দেশনা মুলক কথা আমাকে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা যোগাবে। ঝড়, বৃষ্টি এর মধ্যে রাতে তিনি ছুটে এসেছেন,ব আমি ও আমার পরিবার তাকে ধন্যবাদ জানাই। এ বিষয়ে ইউএনও মহিউদ্দিন আল হেলাল বলেন, গলাচিপার মত একটি বিশাল জানপদে অসংখ্য সম্ভাবনাময় তরুণ তরুণীরা আছে।
কিন্তু এদের মধ্যে অল্প কিছু সংখ্যক তাদের সাফল্যের সাক্ষর রাখতে পেরেছে। যারা ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছে তারা জীবনে সফল হবেই কারণ তারা প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে আত্মবিশ্বাসের জোরে এই পর্যন্ত এসেছে। তাই তাদের উৎসাহ দেয়ার জন্য নয়, তাদের সাথে দেখা করতে যাচ্ছি তরুণ- তরুণীদের দেখাতে চাই ডিজিটাল যুগে এসে স্থান ও কোন স্কুলে পড়াশোনা করেছে এটা মুখ্য বিষয় না। যদি পরিশ্রম করে স্বপ্ন পূরণ হবেই।
আমি চাই শতাব্দী ও আসিবুরের মত আরো শতশত শিক্ষার্থী তাদের স্বপ্ন পূরণ করবে। সেক্ষেত্রে তাদের সকল ধরনের সহযোগিতা ও উৎসাহ দিতে আমি প্রস্তুত। এই ধরনের উদ্যােগকে স্বাগত জানিয়েছেন শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও গলাচিপা উপজেলার জনগণ। তারা মনে করছেন শিক্ষার্থীদের সহায়তা এবং এভাবে অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ যোগালে তারা জীবনে সফলতার সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছাতে পারবে।
শিক্ষার্থীরা তাদের স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে যেতে পারবে এবং নতুন নতুন স্বপ্ন বুনতে শিখবে। আর এভাবেই এগিয়ে যাবে শতাব্দী ও আসিবুরের মত হাজারো মেধাবী শিক্ষার্থীরা।