একজন মডেল এতো বড় ভয়ংকর প্রতারক হতে পারে তা বিশ্বাস হওয়ায় কঠিন। ছদ্মনাম সুরাইয়া নীল। বয়স মাত্র ২০। এই অল্প বয়সেই ভয়ংকর প্রতারক হয়ে ওঠেন। ক্রাইম প্যাট্রল দেখেই তার প্রতারণার হাতেখড়ি। প্রতারণার ফাঁদে ফেলে অপহরণ করেন।
এরপর ভুক্তভোগীকে জিম্মি করে টাকা হাতিয়ে নেওয়াই লক্ষ্য। এসব কাজে তার সহযোগী স্বামী হাবিব মলিন ওরফে রাজ এবং রাজের বন্ধু আবদুস সালাম। মডেল কন্যা সুরাইয়ার ফিল্মিস্টাইলে অপহরণ নাটক বা সিনেমার গল্পকেও হার মানিয়েছে। পুলিশকে জানিয়েছেন প্রতারণার আদ্যোপান্ত। সুরাইয়াসহ এই চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
এরপরই বেরিয়ে আসে তাদের প্রতারণার ঘটনা। যা শুনে পুলিশ কর্মকর্তারাও হতবাক। মঙ্গলবার যশোরের অভয়নগর থানার একতাপুর গ্রাম থেকে মডেল কন্যা সুরাইয়াসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। অন্য দুজন হলেন – মো. আবদুস সালাম ও মো. শাহিন শিকদার। সাতক্ষীরার তালা থানার অভিযোগের সূত্র ধরে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানায় পিবিআই।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, আবু হেনা মোস্তফা ওরফে মলিন নামে এক আইনজীবীর সঙ্গে সাতক্ষীরার আশাশুনির মেয়ে রাবেয়া সুলতানা রিতুর বিয়ে ঠিক হয়। এরই সূত্র ধরে ৬ ফেব্রুয়ারি দুপুরে মলিন খুলনা পাইওনিয়ার কলেজের সামনে রিতুর সঙ্গে দেখা করেন। পরে তারা জাহানাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পার্কে ঘুরতে যায়। এ সময় রিতুর বান্ধবী সুরাইয়ার সঙ্গে তাদের দেখা। এ সময় সুরাইয়া নিজেকে মডেল হিসেবে উপস্থাপন করে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে মলিনের সঙ্গে সখ্য তৈরি করে।
এরপর কৌশলে সুরাইয়া মলিনকে যশোরের অভয়নগর থানার একতারপুরে নিয়ে আসেন। সেখানে আইনজীবী মলিন কিছু বুঝে উঠার আগেই তার হাত-পা বেঁধে জিম্মি করে ফেলে। শুরু হয় শারীরিক নির্যাতন। এরপর তার বিভিন্ন স্বজনের কাছে মুক্তিপণ দাবি করতে থাকেন তারা। অপহরণকারীদের কথায় মলিন তার বন্ধু হাফিজকে ফোন করে বলেন, তিনি খুব বিপদে আছেন এবং তার টাকা প্রয়োজন।
এসব বললে, হাফিজ তাকে বিকাশের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা পাঠায়। পরে নিজেদের পরিচয় গোপন করে মলিনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন দিয়ে পর্যায়ক্রমে তার বাবা এবং দুলাভাইকে ফোন করে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। মলিনকে মারপিট করে তাদের কান্নার আওয়াজ শুনায়। মুক্তিপণ না দিলে অপহরণকারীরা মলিনকে হত্যা করবে বলে জানায়। তাৎক্ষণিকভাবে দুই লাখ টাকা দেওয়ার কথা মলিনের পরিবারের। মলিন মুক্তির পর বাকি টাকা দেওয়ার আশ্বাস দেয় অপহরণকারীদের। এরপর মুক্তিপণের ওই দুই লাখ টাকা আনতে গিয়ে ধরা পড়ে অপহরণ চক্রের সদস্য শাহিন। পরে শাহিনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সুরাইয়া ও আবদুস সালামকে গ্রেফতার করা হয়। পরে ভুক্তভোগী আইনজীবী মলিনকে যশোরের অভয়নগর থানার একতাপুর গ্রামের রাবেয়া খাতুনের বাড়ি থেকে উদ্ধার করে পিবিআই।
বাড়িওয়ালা রাবেয়া জানায়, প্রায় এক মাস আগে মডেল সুরাইয়া ও আবদুস সালাম স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে তার বাড়ি ভাড়া নেয়। পিবিআই সদর দফতরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু ইউছুফ বলেন, অপহরণের ঘটনায় আইনজীবী মলিনের দুলাভাই শরিফুল ইসলাম সাতক্ষীরার তালা থানায় অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগের সূত্র ধরে পিবিআই যশোর জেলার ইনচার্জ এসপি রেশমা শারমিনের নেতৃত্বে একটি দল অপহরণকারীদের শনাক্ত করে। পরে মলিনকে অপরহণের পরিকল্পনাকারী মডেল সুরাইয়াসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়।
পাশাপাশি ভুক্তভোগী মলিনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় মডেল সুরাইয়ার স্বামী হাবিব ও ভুক্তভোগী মলিনের হবু স্ত্রী রিতুকে ধরতে অভিযান চলছে। পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, কোথাও অপরাধের সংবাদ পাওয়া মাত্র আমরা টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে কাজ শুরু করি। কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত লেগে থাকি। পিবিআই যশোর জেলার ইনচার্জ এসপি রেশমা শারমিন বলেন, ‘আমরা ভুক্তভোগী মলিনকে দ্রুত উদ্ধার এবং জড়িতদের আইনের আওতায় এনেছি। অর্থের লোভে আইনজীবী মলিনের হবু স্ত্রী রিতু ও তার বান্ধবী সুরাইয়া এসব ঘটনা ঘটিয়েছে।