রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:১৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
পটুয়াখালীতে মাদ্রাসা থেকে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে কিশোরকে অপহরণ। ইজতেমা ময়দানে নিহতের ঘটনায় জামায়াত আমিরের শোক জেলা জজের ড্রাইভার পরিচয়ে অবৈধভাবে জমি দখলের চেষ্টার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন পটুয়াখালীতে হত্যার উদ্দেশ্য সাংবাদিককে বেধরক মারধর থানায় মামলা। কসম পাচার কালে মূল হোতা আটক গলাচিপায় চেতনানাশক দ্রব্য ব্যবহার করায় মা-ছেলে অসুস্থ  গলাচিপায় পাচারের সময় ১৭ কচ্ছপসহ ব্যবসায়ী আটক লালমনিরহাটে আ.লীগ নেতা সুমন খান ও স্ত্রীর ব্যাংকে ২৩৭ কোটি টাকা, অর্থপাচার মামলা গলাচিপায় পুলিশের মধ্যস্থতায় আড়ৎদারের টাকা ফেরত দিয়েছেন ফল ব্যবসায়ী গলাচিপায় জেলেদের মাঝে চাল বিতরন

দেড় শত বছরের ঐতিহ্য বহন করে আসছে চলনবিলের বারুহাস মেলা

নাহিদ হাসান শামীম নাটোর প্রতিনিধি
  • আপডেটের সময় : বুধবার, ৫ এপ্রিল, ২০২৩
  • ৮৯ সময় দর্শন
দেড় শত বছরের ঐতিহ্য বহন করে আসছে চলনবিলের বারুহাস মেলা sadhinbanglatv

আগামীকাল বিকেল থেকেই শুরু হচ্ছে চলনবিলের ঐতিহ্যবাহী বারুহাস মেলা। এই মেলা মুলত চলনবিলের লোকজ সংস্কৃতির ঐতিহ্য বহন করে আসছে প্রায় দেড় শত বছর ধরে।

চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলা সদর হতে ১০ কিলোমিটার দুরে জমিদার খ্যাত বারুহাস গ্রামে প্রতি বছর চন্দ্র চন্দ্রিমার ১৩ তারিখকে কেন্দ্র করে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। সেই মোতাবেক এবছরের মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে আগামীকাল ৫ ও ৬ এপ্রিল রোজ বুধবার ও বৃহষ্পতিবার।

মেলাটি বুধবার বিকেল থেকে শুরু হলেও মুল মেলা হবে বৃহষ্পতিবার দিনব্যাপী। পরের দিন রবিবার জমে উঠবে বউ মেলা।

এ মেলার বড় আকর্ষন দেশী প্রজাতির বড় মাছ, নানান স্বাদের দই মিষ্টি, চিনির তৈরী হাতি ঘোড়া আকৃতির সাইচ, কাঠ ফার্নিচারের সামগ্রী, তরতাজা দেশী গরু-মহিষ ও খাসির মাংস, হরেক রকম খেলনা, শীতল পাটি, বেত বাঁশের তৈরী গৃহস্থালি জীবনের নানান পণ্য।

মেলাটির ইতিহাস সন্ধানে জানা যায়, আজ থেকে প্রায় দেড় শত বছর আগে সিংড়া-তাড়াশ সীমান্তবর্তী ভদ্রা নদীর পশ্চিমে তৎকালীন বিয়াশ গ্রামের প্রভাবশালী হিন্দু জমিদার সর্ব প্রথম মেলাটির আয়োজন করে।

সিংড়া-বারুহাস রাস্তা সংলগ্ন কালি বাড়ি মন্দিরকে কেন্দ্র করে মেলাটি গড়ে উঠে। মেলার দিনে দেবদেবীর পুজা করাই ছিলো সে সময়কার হিন্দু জমিদার গণের মুল লক্ষ্য।

এভাবে কয়েক দশক কালি মন্দিরের মেলা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিলো। হিন্দুদের মেলা হলেও এলাকার মুসলমানরাও মেলার উৎসবে অংশ নিতো।

এক সময় দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন ঘটতে শুরু হলে হিন্দুদের জমিদারী প্রভাব কমতে থাকে এবং মুসলমান জমিদারী প্রভাব বিস্তার লাভ করতে থাকে।

এভাবে দেশের শিল্প সংস্কৃতিরও মুসলমান জমিদারদের নেতৃত্বে আসতে থাকে। স্থানীয় প্রবীণদের তথ্য অনুযায়ী এরকম ঘটনার প্রেক্ষাপটে তৎকালীন বারুহাস মুসলিম জমিদারের নেতৃত্বে সড়াবাড়ি, সান্দ্রা, দিঘড়ীয়া, গাড়া বাড়ি, সরিষা বাড়ি, ঠেঙ্গা পাকুড়ীয়া সহ পার্শ্ববর্তী গ্রামের প্রধান গণের সিদ্ধান্তে কালি বাড়ির মেলা স্থানান্তর করে ভদ্রাবতী নদীর তীরে বসানোর সিদ্ধান্ত হয়।

প্রবীণ ব্যক্তিদের তথ্য মতে বিয়াশ কালি বাড়ি থেকে বারুহাস ভদ্রাবতীর তীরে মেলা বসাতে কয়েক বছর সময় লেগেছে। যাইহোক বারুহাস জমিদার বাড়ি সংলগ্ন ভদ্রাবতী নদীর তীরে মেলাটি বসতে থাকলে মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই মেলার জৌলুস বাড়তে থাকে। তৎকালীন বারুহাস জমিদার পরিবার সহ এলাকার গণমান্য মানুষের পৃষ্ঠপোষকতায় মাত্র কয়েক দশকের মধ্যেই মেলার সুনাম চলনবিল ব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।

বারুহাস গ্রাম সংলগ্ন ভদ্রাবতী নদীর তীর সংলগ্নে মেলা বসাতে মেলাটির নাম হয়ে উঠে ভাদাই মেলা। ভদ্রাবতীকে স্থানীয় লোকজন ভাদাই নামে চিনত। ভাদাই মেলার সুনাম এতো বেশি ছড়িয়ে গিয়েছিলো বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, পাবনা সহ অনেক দুর দুরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা মেলায় আসতো, শৌখিন মানুষেরা আসতো গরু ও মহিষের গাড়ী নিয়ে।

মেলার রাতে গাড়ির বহর নিয়ে আসতো একেকটা বহরে ৩০ থেকে ৪০ টি গরু-মহিষের গাড়ী। তাঁরা বগুড়া সহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসতো। মেলার পাশে গাড়ীর বহর থামিয়ে চাঁদর টানিয়ে আশ্রয়ান তৈরী করত। এখানেই চলতো রান্নার কাজ। মেলার কেনা কাঁটা আর ঘুরা ফেরা শেষ করে তাঁরা মনের আনন্দে বাড়ি ফিরতো। ৮০ থেকে ৯০ দশকের শেষ পযর্ন্ত অর্থাৎ ২০০০ সাল পর্যন্তও ভাদাই মেলার জৌলুস ছিল চোখে পড়ার মত বারুস, সড়াবাড়ি, সানড়া, দিঘড়ীয়া, তালম, মনোহরপুর, ছাচান দিঘী, সান্দুরিয়া, বিনোদপুর, সিংড়ার ঠেঙ্গা পাকুড়ীয়া, গাড়া বাড়ি, সরিষা বাড়ি, বিয়াশ, আয়েশ, বড় আদিমপুর সিংড়া ও তাড়াশ উপজেলার প্রায় ২০/২২ টি গ্রামের বছরের আনন্দ উৎসবের মধ্যে সেরা উৎসব হয়ে উঠেছিলো এই মেলাকে কেন্দ্র করেই।

মেলা নিয়ে এক স্থানীয় ব্যক্তি জানান, মেলার জায়গা সংকট, পৃষ্ঠপোষকতার অভাব সব মিলেই আজ মেলার এই ঐতিহ্য দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু দেড় শত বছরের এই ঐতিহ্যকে এ ভাবে হারিয়ে দেওয়া যায় না যেকোন মুল্যে এটাকে আগের মত ফিরিয়ে আনতে হবে। কারন এই সংস্কৃতি শুধু বারুহাস গ্রামের নয়। এই সংস্কৃতি আমাদের চলনবিল বাসির নিজস্ব সংস্কৃতি। এটা আমাদের অহংকার। এই সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব আপনার আমার আমাদের সবার।

আরো পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পড়ুন এই বিভাগের আরও খবর

Chairman Md. Azadul Islam. CEO Md. Amir Hossain. Editor S, M, Shamim Ahmed. Managing Director Md. Lokman Mridha, office House # 43 ( Ground Flooor ) 47 Road No. 30, Mirpur, Dhaka Division - 1216

 

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: রায়তা-হোস্ট
tmnews71