২০১৯ সালের ২৮ জুন রংপুরে পল্লী নিবাসের কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজ দেখা এবং ওই বাড়িতে ওঠার কথা ছিল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের। কিন্তু অসুস্থতার কারণে তিনি রংপুরে যেতে পারেননি। বেশ কিছুদিন রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন থাকার পর ওই বছরের ১৪ জুলাই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। এইচ এম এরশাদের মৃত্যুর পর তার স্বপ্নের বাড়িটি এখন পরিত্যক্ত ভবনে পরিণত হয়েছে।
গত ৩০ জানুয়ারি সরেজমিনে দেখা যায়, রংপুর মহানগরীর দর্শনা মোড়ের মহাসড়কের পাশেই অবস্থিত এইচএম এরশাদের বাসভবন পল্লী নিবাস। তালাবদ্ধ ফটক। ফটকের ফাঁক দিয়ে ভিতরে এক মধ্যবয়সী লোক দেখা গেল। ভিতরে প্রবেশ করতেই দেখা যায়, এরশাদের একটি ছবি টানানো। ভবনের বাইরের দিকে কোথাও প্লাস্টার করা হয়নি। তৃতীয় তলা পর্যন্ত ছাদ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ফ্লোরের মেঝেতে এবং সিঁড়িতে উন্নতমানের মার্বেল পাথর ব্যবহার করা হয়েছে। পাথরগুলোয় ধুলোর স্তর পড়েছে।
উন্নতমানের লিফট লাগানো হয়েছে। দীর্ঘদিন পড়ে থাকায় সেখানেও মরিচা পড়েছে। তৃতীয় তলায় খোলা জায়গা রাখা আছে। ছাদে হেলিপ্যাড করার কথা ছিল। তৃতীয় তলায় এইচ এম এরশাদের থাকার জন্য রুমগুলো অর্ধেক তৈরি অবস্থায় রয়েছে। পাশেই এরিকের জন্য একটি রুম আছে। কেয়ারটেকার আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, এরিকের রুমটি রেডি অবস্থায় রয়েছে। ভবনের পেছনে একটি সুইমিং পুল এবং পানির ফোয়ারা করার কথা ছিল। ভবনের সামনে খালি জায়গায় পার্কিং এবং কনফারেন্স রুম করার কথা। দ্বিতীয় তলায় দেখা যায়, বড় ড্রয়িং রুম। পাশে ছোটভাই জি এম কাদেরের জন্য একটি রুম অর্ধ নির্মাণ অবস্থায় রয়েছে। এরশাদ জীবদ্দশায় বাড়িটিকে তার অবর্তমানে মিউজিয়াম করার কথা বলেছিলেন। নেতা-কর্মী এবং সাধারণ মানুষের প্রশ্ন কবে নির্মাণ শেষ হবে এরশাদের স্বপ্নের এই বাড়ির।
জানা গেছে, এইচএম এরশাদের ব্যবহার করা জিনিসগুলো পল্লী নিবাসে রয়েছে। কিছু ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই ভবনে যারা ইলেকট্রিক, রং এবং কাঠের কাজ করেছিলেন, তাদের পাওনা এখনো বাকি। কেয়ারটেকার আনোয়ার জানান, স্যার (এরশাদ) অসুস্থ হওয়ার পর থেকেই কমপ্লেক্সের কাজ বন্ধ রয়েছে।
কমপ্লেক্সের পাশেই এরশাদের কবর। মাঝখানে ছোট একটি দেয়াল। যে কেউ চাইলে দেয়াল বেয়ে কমপ্লেক্সে প্রবেশ করতে পারে। কবরের চারপাশে লিচুবাগান। সম্প্রতি এইচএম এরশাদের কবরটি টাইলস দিয়ে বাঁধানো হয়েছে। স্থানীয় নেতা-কর্মীরা জানান, নিজের রুচি ও পরিকল্পনা মতো বহুতল নতুন ভবন করেছিলেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি। আমাদের দাবি ভবনটির কাজ সম্পন্ন করা হোক।
রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান এস এম ইয়াসির জানান, রংপুরের দর্শনায় অবস্থিত এরশাদের ব্যক্তিগত আবাস পল্লী নিবাস। পল্লীবন্ধু এরশাদ এটি সংস্কার করে তিন তলা ভবন তৈরি করেছিলেন। এতদিন বাউন্ডারির মধ্যে আলাদা আলাদা ভবন ছিল। এরশাদ থাকতেন দ্বিতল ভবনে। আর অন্য স্টাফদের জন্য ছিল একতলা ভবন। পুরনো ভবন ভেঙে এখন তিন তলা কমপ্লেক্স করা হচ্ছে। ভবনটির দ্বিতীয় তলার কাজ শেষ, তৃতীয় তলার ফিনিশিংয়ের কাজও শেষ পর্যায়ে। এই অবস্থায় কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভবনটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এইচ এম এরশাদকে দিয়ে অনেকে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। কিন্তু তার অবর্তমানে কমপ্লেক্সের কাজ শেষ না হওয়া দুঃখজনক।
জানা গেছে, পল্লী নিবাসের এই বাড়ি এইচ এম এরশাদের ট্রাস্টের অধীনে রয়েছে। ট্রাস্ট এবং জাতীয় পার্টির মধ্যে টানাপোড়েন রয়েছে। জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের জানান, পল্লী নিবাস ট্রাস্টের অধীনে রয়েছে। ভাই এরশাদ যেহেতু আমাকে অফিশিয়ালি ট্রাস্টে রাখেননি, তাই এটি আমি এভোয়েড করছি। ট্রাস্টের চেয়ারম্যান কাজী মামুনুর রশীদ জানান, শিগরিগই পল্লী নিবাসের কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারব। এরশাদ রংপুরে এলে এ বাড়িতেই থাকতেন। রংপুরে পল্লী নিবাস ছাড়াও তার আরও একটি বাড়ি রয়েছে, পিত্রালয় ‘স্কাই ভিউ’। তবে তিনি রংপুরে আসলে সব সময় পল্লী নিবাসেই উঠতেন এবং রাত যাপন করতেন। স্কাই ভিউতে থাকেন তার ভাইয়েরা।