পটুয়াখালীর গলাচিপায় প্রধানমন্ত্রীর ঘরের অপেক্ষায় শারীরিক প্রতিবন্ধী জসিম ও তার পরিবার। জসিম (৪৩) হচ্ছেন উপজেলার গোলখালী ইউনিয়নের কালিরচর গ্রামের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত. ছোবাহান মোল্লার ছেলে। শারীরিক প্রতিবন্ধী জসিমের সংসারের অবস্থা খুবই করুন।
নিজের হাত ও পায়ের সমস্যার কারণে ঠিকমত হাটতে পারেন না। তবুও ভিক্ষা না করে কাজ করে চালাতে চান নিজের সংসার। আর তাই তো কাজের অবলম্বন হিসেবে বেছে নিয়েছেন অটো রিক্সা চালানো। হাত ও পায়ের সমস্যার কারণে অটো রিক্সাও ভালোভাবে চালাতে পারেন না জসিম। তারপরও জীবন ও জীবিকার দায়ে মানুষের কাছে হাত না পেতে নেমে পড়েন রিক্সা নিয়ে। সামান্য যা আয় হয় তা দিয়েই খেয়ে না খেয়ে থাকতে হয় জসিম ও তার পরিবারকে। এভাবেই জীবনের সাথে যুদ্ধ করে তাকে বেঁচে থাকতে হয়।
জড়াজীর্ণ একটি ঘরে মাথা গুঁজে দিন কাটে খেয়ে না খেয়ে। নিজ চোখে না দেখলে ওদের জীবন সংগ্রাম কতটা কষ্টের তা বোঝানো অসম্ভব। এ বিষয়ে বুধবার (৮ মার্চ) কালিরচর গ্রামের প্রতিবন্ধী জসিমের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি একজন প্রতিবন্ধী মানুষ। বাবা না থাকায় আমাকে সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। আমার সংসারে মা, স্ত্রী-সন্তান সহ ৫ জনের বসবাস। মানুষের কাছে হাত পাততে পারব না বলে বাধ্য হয়ে রিক্সা চালাই। আমার নিজের ঔষধ, মায়ের ঔষধ, সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ এখন আর চালাতে পারছি না। রিক্সা ঠিকমত চালাতে পারি না। প্রতিবন্ধী বলে অনেকে আবার আমার রিক্সায় উঠতে চায় না। কিন্তু আমার তো পেটে ক্ষুধা এ কথা আমি মানুষকে কীভাবে বোঝাবো।
কোন দিন উপার্জন হয় আবার কোন দিন চাল কেনার টাকাও পান না। আমারও যে সংসার আছে। তিনি আরো জানান, সরকারি সুযাগ-সুবিধা বলতে তিনি প্রতিবন্ধী ভাতা পান। সেই ৭৫০ টাকা দিয়ে কোনোমতে চলছে তাদের জীবন। আমরা জড়াজীর্ণ একটি ঘরে থাকি। এ বিষয়ে প্রতিবন্ধী জসিমের স্ত্রী আসমা বেগম (৩৪) বলেন, আমার স্বামীর উপার্জনে আমাদের সংসার না চলার কারণে আমি মানুষের বাসায় কাজ করে যে খাবার নিয়ে আসি তা দিয়ে চলে শাশুড়ী, স্বামী, সন্তান ও নিজের খাবার। আসমা বেগম আরো বলেন, আমাদের ঘর বাড়ি জায়গা জমি কিছুই নাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বরাদ্দ থেকে আমাদেরকে যদি একটি ঘরের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয় আমি সারাজীবন আল্লাহর কাছে ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট চির কৃতজ্ঞ থাকব। আর কিছু হোক বা না হোক একটি ঘরে পেলে হয়ত স্বামী সন্তানদের নিয়ে থাকার মত জায়গা হতো। কথাগুলো বলে আসমা বেগম কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
এ বিষয়ে ইউপি সদস্য আফছার উদ্দিন বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধী জসিম ও তার স্ত্রী আসমা বেগম আসলেই অসহায় জীবন যাপন করছে। তাদের জায়গা জমি, ঘর বাড়ি কিছুই নাই। তারা যদি একটি ঘর পায় তাহলে হয়ত পরিবারটির একটু মাথা গোঁজার মত ঠাঁই হবে। গোলখালী ইউপি চেয়ারম্যান মো. নাসির উদ্দিন বলেন, আমাদের গ্রামের সবচেয়ে অসচ্ছল পরিবার এটি। আসলেই ওরা গরীব এবং অসহায়। ওদের একটা সরকারি ঘরের প্রয়োজন। আমরা সবসময় সাহায্য-সহযোগিতা দেয়ার চেষ্টা করি।
তাদের ঘরটিও জড়াজীর্ণ। এখনো মানুষ এতটা কষ্ট ও অসহায়ত্ব জীবন যাপন করে সত্যিই বড় অকল্পনীয়। এ বিষয়ে গলচিপা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মহিউদ্দিন আল হেলাল এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকার গৃহহীন, অস্বচ্ছল, দরিদ্র মানুষের জন্য ঘরের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। এ রকম কেউ যদি ঘরের জন্য আবেদন করে তা হলে যাচাই বাছাই করে ঘর পাওয়ার মত উপযুক্ত ব্যক্তি অবশ্যই ঘর পাবে।