ঝিনাইদহে সাংবাদিক মনিরুজ্জামান মনিরকে অপহরণ করে হত্যার উদ্দেশ্যে চোঁখ বেধে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে নির্যাতন করেছে মাদক ব্যাবসায়ীরা। হত্যা চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে হাত-পা ও চোঁখ-মুখ বেধে ফেলে গেছে রাস্তার পাশে। উদ্ধার করে শৈলকুপা হাসপাতালে ভর্তি করেছে স্থানীয়রা।
সাংবাদিক মনির উপজেলার কাঁচেরকোল গ্রামের আকবর শেখের ছেলে। সে জয়যাত্রা টেলিভিশন ও সময়ের কাগজ পত্রিকার শৈলকুপা প্রতিনিধি।
জানা যায়, মঙ্গলবার রাতে কচুয়া বাজার ব্রীজের উপর থেকে চোঁখ বেধে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায় মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসী বাহিনী। তাকে হত্যা চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে নির্যাতন শেষে হাত-পা ও চোঁখ-মুখ বেধে মাইক্রোবাস থেকে বুধবার ভোর রাতে ফেলে যায় শৈলকুপা উপজেলার ধাওড়া গ্রামে রাস্তার ধারে। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে এ্যাম্বুলেন্স যোগে শৈলকুপা হাসতালে ভর্তি করেন।
স্থানীয়রা জানায়, বুধবার ভোরে শিক্ষার্থীরা রাস্তার ধারে হাত-পা ও মুখ বাধা অবস্থায় রাস্তার পাশে একজনকে পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার দিয়ে উঠে। এ সময় আশপাশের লোকজন ছুটে এসে তার বাধন খুলে দেয়। পরে তার পরিচয় জানতে পারে যে, সে একজন সাংবাদিক। পরে এ্যামবুলেন্স ডেকে তাকে শৈলকুপা হাসপাতালে ভর্তি করে।
নির্যাতিত সাংবাদিক মনিরুজ্জামান মনির জানায়, কাঁচেরকোল ইউনিয়নের মাদক সম্রাট ডিশ বাবু, জাহাঙ্গীর ও বিল্লালসহ বেশ কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ীর মাদক বেচা কেনা ও সেবনের ভিডিও ধারণ করেন তিনি। এরপর মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে একটি সংবাদ প্রকাশ করেন। মাদক ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ হয়ে মঙ্গলবার রাতে তাকে কচুয়া বাজারের ব্রীজের উপর থেকে অপহরণ করে মাইক্রোবাসে জোর পূর্বক তুলে চোঁখ-মুখ ও হাত-পা বেধে ফেলে।
চলন্ত মাইক্রোবাসে অপহরণকারীরা বলতে থাকে আমাদের বিরুদ্ধে নিউজ করার সাহস তোকে কে দিল। ওদের ভিতর থেকে ডিশ বাবু অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে বলে ওকে ফাঁকা মাঠে নিয়ে জবাই করতে হবে। পরবর্তীতে তার উপর শারিরিক নির্যাতনের ফলে সে জ্ঞানহীন হয়ে পড়ে। তার কাছে থাকা ক্যামেরা ও মোবাইল ফোনসহ তারা ছিনিয়ে নেয়।
তিনি আরো জানান, সংবাদ প্রকাশের পর থেকে মাদক ব্যবসায়ীরা বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিল। অপহরনকারীদের মধ্যে তিনি বেশ কয়েকজনকে চিনতে পেরেছেন। কাঁচেরকোল গ্রামের ইদ্রিস আলীর ছেলে ইউপি সদস্য ডিশ বাবু, সাদেকপুর গ্রামের মৃত নতো শেখের ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন, মধুদাহ গ্রামের তাজো শেখের ছেলে বিল্লাল মিয়া, কাঁচেরকোল গ্রামের মৃত আশাহক মিয়ার ছেলে আশরাফুল মিয়া, করিম মিয়ার ছেলে সোহেল মিয়া ও নুর আলী বিশ্বাসের ছেলে স্বপন বিশ্বাসসহ অজ্ঞাত ৪/৫ জন এ ঘটনার সাথে জড়িত বলে তিনি দাবী করেন।
বর্তমানে সাংবাদিক মনিরুজ্জামান মনির ও তার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এ বিষয়ে তিনি থানায় মামলা করবেন বলে জানান।
ঘটনাটি নিয়ে কথা হয় অভিযুক্ত ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও ইউপি সদস্য ডিস বাবুর সাথে। তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবী করে জানান সম্প্রতি সময়ে সাংবাদিক মনির ও তার নানা ডাবলু গ্রামের স্বপন ও সোহেল নামে দু’জনকে বাড়িতে উঠতে দিচ্ছে না এবং মনিরের নানী সুখ জাহান ৫নং কাঁচের কোল ইউনিয়নের ৪,৫,৬ সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর। তারাও এলাকায় প্রভাবশালী। ওই দুই ছেলের কারনেও ঘটনাটি ঘটতে পারে। মনির আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।
উল্লেখ্য, কাঁচেরকোল ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইমরান হোসেন ওরফে বাবু মিয়া ডিশ বাবু হিসেবে পরিচিত। এলাকায় গড়ে তুলেছে মাদক সিন্ডিকেট। বর্তমানে তার ছত্রছায়ায় উঠতি বয়সী একদল যুবক মাদকাসক্ত হয়ে এলাকায় চাঁদাবাজি সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়েছে।
সে ২০১৫ সালে শৈলকুপা থানা পুলিশের এএসআই মনির হাজরা ও একাধিক পুলিশ সদস্যকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে পিটিয়ে মারাত্মক আহত করে তার বাহিনী। এছাড়াও ডিশ বাবুর বিরুদ্ধে একাধিক মাদক মামলাসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতন ও চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে, সম্প্রতি সে জেল থেকে বের হয়ে এসে আবারো এলাকায় সকল প্রকার অপকর্মের নেতৃত্ব দিয়ে আসছে।
অবিলম্বে তাকে গ্রেপ্তার পূর্বক তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানিয়েছে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ ও এলাকাবাসী। শৈলকুপা থানার অফিসার ইনচার্জ জাহাঙ্গী হোসেন জানান, লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।