কৃষক পরিবারে জন্ম নেওয়া সাধারণ এক মানুষ লুলা দা সিলভা তৃতীয়বারের মতো ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর ব্রাজিলের ভঙ্গুর অর্থনীতিকে টেনে তোলার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে তাঁর জনপ্রিয়তা। প্রেসিডেন্সির একপর্যায়ে লুলার জনপ্রিয়তার রেটিং দাঁড়ায় ৮৫ শতাংশে।
ব্রাজিলের উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ পারনামবুকোতে জন্মগ্রহণ করেন লুলা।
আট ভাইবোনের মধ্যে সপ্তম লুলার ছোটবেলা কেটেছে চরম দারিদ্র্যের মধ্যে। ছোটবেলায় পরিবারের সঙ্গে প্রথমে সান্তোসে এবং পরে সাও পাওলোতে চলে আসেন। দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া লুলা প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি। জুতা পলিশ এবং ফেরিওয়ালা হিসেবে কাজ করেছেন ছোটবেলায়।
পরে একটি স্টিলকারখানায় শ্রমিকের কাজ নেন। কারখানার শ্রমিক হিসেবে কাজ করার সময় বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন লুলা। সত্তর থেকে আশির দশকে সামরিক স্বৈরশাসন বিরোধী বড় বড় ধর্মঘটের নেতৃত্ব দেন তিনি। আশির দশকে ট্রেড ইউনিয়ন সমর্থকদের নিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টি (পিটি) নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন।
১৯৮৯ সালে প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করে অল্প ভোটে পরাজিত হন লুলা। এরপর ১৯৯৪ ও ১৯৯৮ সালেও পরাজয় বরণ করতে হয় তাঁকে। এ সময় লুলার রাজনৈতিক জোটে ও তাঁর সমর্থনে ছিল কর্মজীবী, দরিদ্র ও বামপন্থী ভোটার, বামপন্থী ক্যাথলিক ভোটার এবং ব্রাজিলের আদিবাসী জনগোষ্ঠী। প্রথম তিন নির্বাচনে ব্যর্থ হলেও তৃণমূলের ভোটারদের সমর্থন লুলার রাজনৈতিক দলকে আরও শক্তিশালী করে।
এ সময়ে ব্রাজিলে চলছিল তীব্র অর্থনৈতিক সংকট। মুদ্রাস্ফীতি এমন পর্যায়ে ছিল যে ১৯৮৬ সালের পর ৭ বছরে ৫ বার দেশের মুদ্রা পরিবর্তন করতে হয়েছে।
দেশের এমন পরিস্থিতিতে লুলার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। ২০০২ সালের নির্বাচনে নতুন কৌশল গ্রহণ করেন লুলা। বেশ কয়েকজন রক্ষণশীল এবং ডানপন্থী রাজনীতিবিদকে দলে টেনে নেন লুলা। এর মাধ্যমে একদম দরিদ্র তৃণমূল থেকে ব্যবসায়ী পর্যায়ে সমর্থন চলে আসে লুলার।
২০০২ সালের নির্বাচনে জয় পান লুলা। তার প্রথম প্রেসিডেন্সিতে চীনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের সুবাদে ব্রাজিলের অর্থনীতির ব্যাপক উন্নয়ন হয়। লুলা এই অর্থ জনকল্যাণে ব্যয় করেন। ‘বোলসা ফ্যামিলিয়া’ নামে একটি স্কিম চালু করেন যার মাধ্যমে শিশুদের শিক্ষা ও ভ্যাকসিনের জন্য সরকার থেকে অর্থ সহায়তা দেওয়া হতো।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথমবার দায়িত্ব পালনের পর তার জনপ্রিয়তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬২ শতাংশে। ২০০৬ সালে লুলা দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসেন। এবার ব্রাজিলের জিডিপি রেকর্ড পরিমাণ বাড়ে। সাথে সাথে বাড়ে লুলার জনপ্রিয়তা।
২০১৪ সালে দুর্নীতির অভিযোগে ওয়ার্কার্স পার্টির সমর্থিত প্রেসিডেন্ট দিলমা রুসেফ ক্ষমতাচ্যুত হন। লুলার জোট ওয়ার্কার্স পার্টি ভেঙে যায়। গ্রেপ্তার হন লুলা। পরে সুপ্রিম কোর্টে প্রমাণিত হন তিনি নির্দোষ।
দিলমা রুসেফের পর ব্রাজিলের ক্ষমতায় আসেন ডানপন্থী রাজনীতিবিদ বলসেনারো। তবে তাঁর সময় ব্রাজিলের জিডিপি কমে যায়। করোনায় মারা যায় অনেক মানুষ। মহামারি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হন তিনি।
২০২২ সালে নভেম্বরের নির্বাচনে তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসলেন লুলা। রোববার শপথ নিয়ে লুলা প্রতিশ্রুতি দিলেন ব্রাজিলের দরিদ্র মানুষের জীবনমান উন্নয়ন, জাতিগত ও লিঙ্গসমতা আনবেন এবং আমাজন বন ধ্বংস শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনবেন।