ভারতীয় টিভি সিরিয়াল ক্রাইম পেট্রোল দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে পা বাড়ায় অপরাধ জগতে এক কিশোর। তারপর উপমহাদেশের কুখ্যাত মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহিমের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছোটা শাকিলের পরিচয় দিয়ে অপরাধ জগতে হাটতে থাকে কিশোরটি।এরপর রাজধানীর গুলশানে এক ব্যবসায়ীকে ফোন করে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে সে। টাকা না দিলে বোমা মেরে পরিবারের সদস্যদেরও হুমকি দেয় সে।
ওই ব্যবসায়ীকে ভয় দেখাতে তার গাড়িতে আটকে দেওয়া হয় নকল বোমা। এর সূত্র ধরে তদন্তের ধারাবাহিকতায় ওই কিশোরকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরে জানা যায় চাঁদা দাবি করা ওই কিশোর ব্যবসায়ীর গ্রামের বাড়ির কেয়ারটেকারের ছেলে। তবে অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় ওই কিশোরের নাম জানায়নি ডিবি পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার।তিনি বলেন, গতকাল বুধবার (২৭ জানুয়ারি) গুলশান ডিবি পুলিশের একটি টিম মুন্সিগঞ্জের লৌহজং থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই কিশোরকে গ্রেপ্তার করে। এসময় তার কাছ থেকে চাঁদা দাবির ঘটনায় ব্যবহৃত ১টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
হাফিজ আক্তার বলেন, গত ১১ জানুয়ারি রাত ৪টায় ভারতীয় কুখ্যাত সন্ত্রাসীর পরিচয়ে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ঢাকার গুলশান ঢালী সুপার স্টোরের মালিক ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিনের কাছে পরিবারের সবাইকে হত্যার হুমকি দিয়ে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। দাবি চাঁদার টাকা না দিলে বোমা মেরে তার পরিবারের সদস্যদের উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়।
পরদিন ১২ জানুয়ারি বিকেলে ওই ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর প্রাইভেটকারটি পার্কিং করা অবস্থায় ড্রাইভার গাড়ির নিচে বোমাসদৃশ বস্তুর উপস্থিতি টের পায়। বিষয়টি বাড্ডা থানা পুলিশকে জানালে তারা সিটিটিসির বোম্ব ডিসপোজাল টিমকে অবহিত করে। পরে সিটিটিসির বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে বোমা সাদৃশ্য বন্তুটি অপসারণ এবং ধ্বংস করে।
এসময় দেখা যায়, বোমাসদৃশ বস্তুটি অকার্যকর ছিল। পরে ব্যবসায়ীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বাড্ডা থানায় একটি মামলা হয়। ওই ঘটনাটির তদন্ত ও রহস্য উদঘাটনে তৎপর হয় ডিবি টিম। গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ শেষে ঘটনার মূলহোতাকে শনাক্ত করে গ্রেফতার করা হয়।
ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার কিশোর জানায়, সে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর গ্রামের বাড়ির কেয়ারটেকারের ছেলে। সে এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার পর একটি কাপড়ের দোকানে চার হাজার টাকা বেতনে সেলসম্যানের কাজ নেয়। কিন্তু বেতন অল্প হওয়ায় এবং দ্রুত ধনী হওয়ার আশায় সেখান থেকে পালিয়ে আসে।
ধনী হওয়ার লোভে পূর্বপরিচিত ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিনের পরিবারকে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে চাঁদা আদায়ের পরিকল্পনা করে দুই মাস আগ থেকে। এজন্য সে হিন্দি সিনেমা, সিরিয়াল, ইউটিউব দেখে নকল বোমা বানানো এবং সন্ত্রাসী পরিচয়ে হুমকি-ধামকি দেওয়ার কৌশল শেখে। হিন্দি সিনেমা দেখার কারণে সে হিন্দি ভাষায় কথা বলার দক্ষতাও অর্জন করে।
পরে লাল টেপ, পাইপ, ইলেকট্রিক তার, পেন্সিল ব্যাটারি ও আনুষঙ্গিক উপকরণ দিয়ে বোমাসদৃশ বস্তুটি বানিয়ে রাখে। ব্যবসায়ী তার প্রাইভেটকার নিয়ে ঢাকা থেকে মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ে তার এক আত্মীয়ের জানাজায় যোগ দিতে যান। সেই সুযোগে গ্রেফাতার ওই কিশোর প্রাইভেটকারের নিচে বোমাসদৃশ বস্তুটি টেপ মেরে আটকে দেয়।