পটুয়াখালীর গলাচিপায় উপকূলীয় বেড়িবাঁধ নির্মানে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার রাবনাবাদ নদীর ভাঙন কবলিত এলাকার জনগণকে রক্ষার জন্য ৩৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ মাটির পরিবর্তে বালু দিয়ে নির্মাণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। রবিবার (১৮ ডিসেম্বর) বিকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় বিভিন্ন পয়েন্টে মাটির পরিবর্তে বালু দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে। এভাবে বালু দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করলে অল্পদিনের মধ্যে ধসে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই বাঁধ জনগণের কোনো উপকারে আসবে না। বাধ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ঠিকাদারকে চিঠি দিয়েও কাজ বন্ধ করতে পারছে না। রাবনাবাদ নদীর ভাঙন কবলিত জনগণকে রক্ষার জন্য ৩৪ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১২৮ কোটি ৯ লাখ টাকা। গোলখালী এলাকার বাঁধ নির্মানে মাটির পরিবর্তে বালু ব্যবহার করা হচ্ছে। সিডিউলবহির্ভূত এমন কাজ বন্ধে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চীনের (সিকো) চংকিং ইন্টারন্যাশনাল কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে জেলা প্রশাসন। নিয়ম বহির্ভূত এই কাজে পানি উন্নয়ন বোর্ড বাধা দিলেও থামেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
পটুয়াখালীর পানি উনয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে উপকূলীয় বাধ উন্নয়ন প্রকল্পে বন্যা ও নদী ভাঙনের হাত থেকে রক্ষায় পটুয়াখালীর গলাচিপা, কলাপাড়া, পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া ও বরগুনার পাথরঘাটায় বাঁধ নির্মানে ৬টি পোল্ডারে ২০৮ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। বাঁধ নির্মানের টেন্ডার পায় চীনের চংকিং ইন্টারন্যাশনাল কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশন। গোলখালীর সুহুরি গ্রামের আবুল হোসেন বলেন, এই বেড়িবাঁধ উচ্চ জোয়ারে পানির চাপে ভেঙে যাবে। বিভিন্ন সময় ঘূর্ণিঝড়ে এই এলাকার মানুষকে রক্ষা করতে এই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রাতের অন্ধকারে মাটির বিপরীতে বালু দিয়ে বাঁধ নির্মাণ কাজ করে যাচ্ছে।
একই এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা আব্দুল রহিম বলেন, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সুপার সাইক্লোন সিডরে এই এলাকার প্রায় ৩৫ জন মানুষ প্রাণ হারায়। এর একমাত্র কারণ ছিল ভাঙা বেড়িবাঁধ। বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষা হওয়ায় তীব্র ভাঙনে কয়েক কিলোমিটার এলাকা বিলীন হয়েছে নদীগর্ভে। অনেক আন্দোলনের পরে আমরা স্থায়ী বেড়িবাঁধ পেয়েছি। কিন্তু সেই বেড়িবাঁধ নির্মাণ হচ্ছে বালু দিয়ে। এই বালুর বেড়িবাঁধ পানির চাপে ভেঙে যাবে। পটুয়াখালী পওর বিভাগ নির্বাহী প্রকৌশলী বাপাউবো মো. আরিফ হোসেন বলেন, আমরা একাধিকবার তাদের কাজ বন্ধে চিঠি দিয়েছি। সরেজমিনে গিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চায়না কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারপরও কাজ বন্ধ করেনি।