পটুয়াখালীর গলাচিপায় প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অবৈধভাবে কাঠ পুড়িয়ে চলছে ইটভাটা। শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) ঘুরে দেখা যায় এই চিত্র।
সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে লোকালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে ছয়টি ইট ভাটায় ইট পোড়ানো হচ্ছে। এসব ইট ভাটায় কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানোর কারণে নির্গত ধোয়ায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। ধোঁয়ায় অতিষ্ঠ তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছয় শতাধিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকসহ কয়েক হাজার মানুষ। প্রশাসন ইটভাটাগুলোর মালিকদের বিভিন্ন সময় জড়িমানা ও পরিবেশ সম্মত উপায়ে লোকালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে দূরে ইটভাটা করার কথা বললেও এসব কথা কানে নিচ্ছে না ভাটাগুলোর মালিক পক্ষ। চর বিশ্বাস ইউনিয়নের সালেহা খাতুন দাখিল মাদরাসার পাশে সিকদার ব্রিকস, গোলখালী ইউনিয়নের গোলখালী গ্রামের সততা ব্রিকস ও একই ইউনিয়নের মায়ের দোয়া ব্রিকফিল্ড, মুশুরীকাঠী ব্রিক ফিল্ড, কলাগাছিয়া ব্রিক ফিল্ড, গজালিয়া ব্রিক ফিল্ডে কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে। কলাগাছিয়া ব্রিক ফিল্ড কয়লা দিয়ে ইট পুড়লেও সুযোগ পেলে কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে জানা গেছে, এই ইটভাটাগুলোর জমির মালিকানা ছাড়া কোন কাগজপত্র নেই। পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নেই। এছাড়া জেলা প্রশাসকের অনুমতি নেই। চর বিশ্বাস ইউনিয়নের সালেহা খাতুন দাখিল মাদরাসার পাশে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় অবৈধভাবে ৮ বছর ধরে সিকদার ব্রিকস ফিল্ডে ড্রাম চিমনি দিয়ে কাঠ ব্যবহার করে ইট পোড়ানো হচ্ছে। ইটভাটার আশপাশের গ্রামে প্রায় দুই হাজারের উপরে লোক বসবাস করে। ইট পোড়ানো কাঠের ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। কালো ধোঁয়ায় অতিষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। এছাড়া ইটভাটা থেকে নির্গত ধোয়ায় চারপাশের অনেকে শাসকষ্টে ভুগছেন। একই চিত্র প্রতিটি ইটভাটায়।
এর প্রতিবাদ করার সাহস পায় না সাধারণ মানুষ কিংবা শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সিকদার ব্রিকস ফিল্ডের ম্যানেজার মঞ্জু হাওলাদার জানান, ইটভাটা চালানোর জন্য মোটামুটি কাগজপত্র আছে। ভাটার মালিক বলতে পারবে কী কী কাগজ আছে। গোলখালী মেসার্স সততা ব্রিকসের অংশিদার মো. নাসির বলেন, আমরা বৈধভাবে ইটভাটা চালানোর কাগজপত্র তৈরি করছি। আমরা শুধু কাঠ দিয়েই ইট পোড়াচ্ছি না কয়লাও ব্যবহার করছি। সবসময় কয়লা পাওয়া যায় না তাই মাঝে মাঝে কাঠ ব্যবহার করছি।
কিন্তু এখন ইটভাটা যদি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে আমাদের অনেক টাকা লোকসান হয়ে যাবে। মায়ের দোয়া ব্রিকসের অংশীদার মো. মনির ঢালী বলেন, গত চার-পাঁচ বছর ধরে আমরা লোকসান দিয়ে আসছি। আমরা ঝিকঝাক পদ্ধতিতে ইটভাটা চালানোর পরিকল্পনা করছি। প্রাইমারি স্কুলের পাশে ইট পোড়ালে শিশুদের ক্ষতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের চুল্লি যেখানে রয়েছে সেখান থেকে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নাই। এ প্রসঙ্গে পটুয়াখালী জেলা অফিসের পরিবেশ অধিদফতর থেকে তারা কোন অনুমতি পত্র নেয় নি। গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. মহিউদ্দিন আল হেলাল বলেন, ইটভাটার কাগজপত্র পর্যালোচনা করা হবে এবং অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরিবেশের ক্ষতি করে কেউ ইটভাটা চালাতে পারবে না।