লুসাইল স্টেডিয়ামে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেছিল ইতিহাস গড়বে বলে। সৌদি আরবের বিপক্ষে ন্যুনতম ড্র করলেই টানা অপরাজিত থাকার রেকর্ডে ইতালিকে (৩৭ ম্যাচ) ছুঁয়ে ফেলতেন মেসিরা। হতো বিশ্বরেকর্ড। তবে জয়-ড্র দূরে থাক, সৌদি আরবের কাছে অপ্রত্যাশিতভাবে হেরেই গেছে আর্জেন্টিনা।
হয়েছে কাতার বিশ্বকাপের প্রথম অঘটনের শিকার। প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলে এটাই সৌদির বিপক্ষে আর্জেন্টিনার প্রথম হার।
‘সি’ গ্রুপের প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের বিপক্ষে আর্জেন্টিনাই ছিল হট ফেবারিট। লিওনেল মেসির গোলে দলটি ছিল এগিয়েও। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে দারুণ দুটি গোলে আর্জেন্টিনার কাছ থেকে ম্যাচ কেড়ে নেয় সৌদি। ম্যাচ জেতে ২-১ গোলে।
অথচ প্রথমার্ধে সৌদি আরবকে আক্রমণে ওঠার কোনো সুযোগই দেয়নি আর্জেন্টিনা। মেসি-ডি মারিয়ারা ব্যতিব্যস্ত রাখেন সৌদির রক্ষণকে। গোল করে চারটি। তবে দুর্ভাগ্যের শুরুটা এখানেই কি-না! চার গোলের তিনটিই বাতিল হয় অফসাইডে। ১-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যাওয়া আর্জেন্টিনা দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই হজম করে দুই গোল। এরপর শত চেষ্টার পরও সৌদির জালের দেখা আর পায়নি আলবিসিলেস্তেরা।
বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে দ্বিতীয় মিনিটেই এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ এসেছিল আর্জেন্টিনার সামনে। ১২ গজ দূর থেকে মেসির নেওয়া বাঁ পায়ের শট ঠেকিয়ে দেন সৌদি আরব গোলরক্ষক মোহাম্মদ আল ওয়াইজ। সেবার মেসিকে আটকাতে পারলেও ১০ মিনিটে আর্জেন্টাইন অধিনায়ক বিশ্বকাপে দেশের হয়ে প্রথম গোলটি করেন। পেনাল্টি থেকে গোল করেন তিনি। খেলার ৮ম মিনিটে কর্নার কিক পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। কিক নেন মেসি। এ সময় বক্সের মধ্যে লিয়ান্দ্রো পারেদেসকে ফেলে দেন আল বুলাইহি। এরপরই ভিএআর চেক করে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি।
পেনাল্টি থেকে করা গোলে মেসি ঢুকে গেছেন ইতিহাসের পাতায়। চতুর্থ ফুটবলার হিসেবে পঞ্চম বিশ্বকাপ খেলার দিনে ভিন্ন চারটি বিশ্বকাপে গোল করার কীর্তি দেখালেন তিনি। প্রথম আর্জেন্টাইন ফুটবলার হিসেবে এ রেকর্ড গড়লেন মেসি। ইতিহাস গড়ার পর ২১ মিনিটে সৌদি আরবের জাল আবারও কাঁপান মেসি। আলেহান্দ্রো পাপু গোমেজের উড়ন্ত বল থেকে বল একাই টেনে নিয়ে সৌদি গোলরক্ষককে ফাঁকি দেন মেসি। তবে রেফারি সঙ্গে সঙ্গে বাজান অফসাইডের বাঁশি। ফলে গোলবঞ্চিত থাকতে হয় আর্জেন্টিনাকে।
মেসি হতাশায় পোড়ার পর একই ভাগ্য দুইবার বরণ করে নেন লাওতারো মার্টিনেজ। ২৮ মিনিটে লিয়ান্দ্রো পারেদেসের থ্রু বল বল ধরে লব শটে লক্ষ্যভেদ করেন মার্টিনেজ। মাতেন উদযাপনেও। তবে রেফারি ভিডিও অ্যাসিস্টেন্ট রেফারির সহায়তা নিয়ে এই গোলটিও বাতিল করে দেন অফসাইডের কারণে। ৩৪ মিনিটে ফের লক্ষ্যভেদ করেন তিনি। এবার মেসির পাস ধরে গোল করেন মার্টিনেজ। তবে পোড়া কপাল তার। এবারও লাইন্সম্যান তুললেন অফসাইডের পতাকা।
আর্জেন্টিনার দুর্ভাগ্য বয়ে চলে দ্বিতীয়ার্ধেও। এবার গোল বাতিলের আক্ষেপে না পুড়লেও, দলটি হজম করে ফেলে দুই গোল। ৪৮ মিনিটে আলী আল বুলাহির পাস থেকে আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার ক্রিস্টিয়ান রোমেরোকে পরাস্ত করে দূরের পোস্ট থেকে বল জালে জড়ান সালেহ আলসেহরি। সেই গোলের রেশ না কাটতেই আবার আর্জেন্টিনার জালে সৌদির গোল। এবার স্কোরশিটে নাম তোলেন সালেম আলদাওসারি। বাঁ প্রান্ত থেকে কাট করে বাঁকানো শটে প্রতিপক্ষের জাল কাঁপান এই ফরোয়ার্ড।
পুঁচকে সৌদি আরবের বিপক্ষে পিছিয়ে পড়ার আর্জেন্টিনা ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করেছে অনেক। কিন্তু সৌদির জমাট রক্ষণ কিছুতেই যেন ভাঙতে পারছিল না স্কালোনির শিষ্যরা। আর্জেন্টিনা ম্যাচে ফেরার সুবর্ণ সুযোগ হারায় ৮৪ মিনিটে। বাঁ প্রান্ত থেকে আনহেল ডি মারিয়ার ক্রস থেকে আসা বলে মেসি মাথা ছোঁয়ান ঠিকই, তবে তার দুর্বল হেড জমা পড়ে প্রতিপক্ষ গোলরক্ষকের গ্লাভসে।
এরপর ইনজুরি সময়ে বদলি নামা স্ট্রাইকার হুলিয়ান আলভারেজ দুইবার গোলের সুযোগ তৈরি করেন। একবার তার শট গোললাইন থেকে ফিরিয়ে দেন সৌদির রক্ষণ, এরপর একদম অন্তিম মুহূর্তে তার হেড আটকে দেন আল ওয়াইস। সৌদি গোলরক্ষকের ওই সেভেই নিশ্চিত হট মেসিদের অকল্পনীয় হার।