ইউক্রেন সীমান্তবর্তী পোল্যান্ডের একটি গ্রামে আঘাত হেনেছিল একটি মিসাইল। মঙ্গলবার পলিশ ভূখণ্ডে আঘাত হানা মিসাইলটি ছোড়া হয়েছে ইউক্রেন থেকেই। এ তথ্য জানিয়েছেন খোদ ন্যাটো প্রধান জেনস স্টলটেনবার্গ। তিনি বলেছেন, ‘সম্ভবত ইউক্রেন থেকেই মিসাইলটি ছোড়া হয়েছে।
জেনস স্টলটেনবার্গ বলেছেন, ‘সম্ভবত এটি ইউক্রেনীয় বিমান প্রতিরক্ষার মিসাইল। বিস্ফোরণের বিষয়ে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। ’
ন্যাটো প্রধান জোর দিয়ে বলেছেন, ‘ইউক্রেনে চলমান আগ্রাসনের জন্য শেষ পর্যন্ত রাশিয়াই দায়ী। ’
পোল্যান্ডে আঘাত হানা মিসাইলটি নিয়ে এখনও রাশিয়াকেই দায়ী করছে ইউক্রেন। দেশটির প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, ‘এটি আমাদের মিসাইল না, এই নিয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই। আমার বিশ্বাস, এটি রাশিয়ার মিসাইল। আমাদের সামরিক বাহিনীও এমন তথ্য দিয়েছে। তাদের ওপর আমার ভরসা রয়েছে। ’
এর আগে বুধবার রাত ৩টা ৪০ মিনিটে পোল্যান্ডের সীমান্তবর্তী প্রজেওডো গ্রামে একটি মিসাইল বিস্ফোরণ হয়। এতে দুজন কৃষক নিহত হন। একইসঙ্গে ধ্বংস হয় একটি ট্রাক্টর। বিস্ফোরণটি রাশিয়ার তৈরি একটি মিসাইল থেকে হয়েছে বলে দাবি করে পোল্যান্ড সরকার।
বিস্ফোরণের বিষয়ে পোল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মিসাইলটি ইউক্রেন সীমান্ত থেকে মাত্র ৬ কিলোমিটার দূরে পলিশ ভূখণ্ডে পড়েছে। বিস্ফোরণের জন্য রাশিয়া নিজেদের দায় অস্বীকার করলেও পোলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, মিসাইলটি রাশিয়ার তৈরি।
ন্যাটোভুক্ত দেশে মিসাইল আঘাত হানা নিয়ে গোটা অঞ্চলজুড়ে উদ্বেগ বাড়ছে। ন্যাটোর আর্টিকেল-৫ অনুযায়ী, জোটভুক্ত কোনো দেশে হামলা মানে গোটা জোটে হামলা চালানো।
বিবিসি বলছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রতিবেশী দেশ ইউক্রেনে হামলা চালায় রাশিয়া। এরপরেই দুদেশের মধ্যে যুদ্ধ বাঁধে। যুদ্ধের নয় মাসের মধ্যে গত মঙ্গলবার ইউক্রেন ভূখণ্ড উদ্দেশে করে সবচেয়ে বেশি মিসাইল ছুড়ে রুশ বাহিনী। এর জেরে সংক্রিয় হয় ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
জেলেনস্কি প্রশাসনের দাবি, মঙ্গলবার ইউক্রেনকে লক্ষ্য করে কয়েক ডজন মিসাইল ছুড়েছিল রাশিয়া। তবে অধিকাংশ মিসাইলই ভূপাতিত করতে সক্ষম হয়েছে তারা।
ইন্দোনেশিয়ার বালিতে বৃহৎ অর্থনীতির দেশগুলোর সংগঠন জি-২০ সম্মেলনের মধ্যেই ইউক্রেনজুড়ে এই হামলা চালায় রাশিয়া।
ন্যাটো প্রধান বলেন, ‘প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, ইউক্রেনকে আরও উন্নত বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরবরাহ করা হবে। আজ আমি ইউক্রেনের একটি সমর্থন গোষ্ঠীর একটি সভায় যোগদান করেছি। ওই সভায় ন্যাটো মিত্ররা তাদের আরও উন্নত বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দেওয়ার জন্য নতুন করে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এতে করে রুশ মিসাইলগুলোকে ভূপাতিত করা সহজ হবে। ’
তিনি আরও বলেন, ‘ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা রোধ করার সর্বোত্তম উপায় হল যুদ্ধ বন্ধ করা। পোল্যান্ডে আঘাত হানা মিসাইলটি ইচ্ছাকৃতভাবে রাশিয়া থেকে ছোড়া হয়েছে এমন কোনো ইঙ্গিত নেই। তবে এতে সন্দেহ নেই, এর জন্য রাশিয়া দায়ী। কারণ তারা ইউক্রেনে হামলা না চালালে এমনটা হতো না। ’
মস্কো ও কিয়েভের মধ্যে শান্তি আলোচনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে স্টলটেনবার্গ বলেন, ‘রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন আপোষ কিংবা আলোচনা করতে ইচ্ছুক না। যদি পুতিন যুদ্ধ বন্ধ করে, তবে আমরা শান্তি পাব। কিন্তু যদি জেলেনস্কি যুদ্ধ বন্ধ করে তবে ইউক্রেন একটি স্বাধীন সার্বভৌম জাতি হিসেবে নিজেদের অস্তিত্ব হারাবে। ’