নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকায় ডিবি এবং র্যাব পরিচয়ে ডাকাতি করার সময় কুখ্যাত কাউসার বাহিনীর ৪ জন ডাকাতকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব ৩। বুধবার (৯ নভেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব জানায় র্যাব।
র্যাবের একটি আভিধানিক দল গোয়েন্দা সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে, নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানাধীন এলাকায় জাঙ্গাল গ্রামস্থ সুন্দরবন ফিলিং স্টেশনের পাশে কতিপয় ডাকাত দল কর্তৃক ডাকাতি প্রস্তুতি নিচ্ছে। এসময় র্যাবের একটি আভিধানিক দল মঙ্গলবার গভীর রাতে অভিযান পরিচালনা করে সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সর্দার মো. কাওসার আলী (৩০), মো. আব্দুল্লাহ আল-মামুন (৪০), মো. আলী আকবর (২৪) ও মো. ইমামুল হক (২৭) নামে ৪ ডাকাতকে গ্রেপ্তার করে।
আসামিদের কাছ থেকে ২টি ডিবি জ্যাকেট, ১টি র্যাব জ্যাকেট, ২টি ওয়াকিটকি সেট, ১টি হ্যান্ডকাপ, ১টি ভুয়া পুলিশ আইডি কার্ড, ১টি এনআইডি কার্ড, ২টি মানিব্যাগ, ১টি লেজার লাইট, ১টি ব্যাগ, ৬টি মোবাইলফোন এবং নগদ ৩,৬৯,০০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
ডাকাত দলের ৬ জন সদস্যের মধ্যে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হলেও দুজন পালিয়ে যায়। পলাতকদের গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ডাকাত দলের সর্দার মো. কাওসার আলী নিজেকে ডিবি পুলিশের এএসপি পদবী, মো. মামুন ডিবি পুলিশের ওসি, মো. আলী আকবর র্যাবের এসআই এবং মো. এনামুল ডিবি পুলিশের কনস্টেবল পরিচয় দিয়ে ঢাকাসহ নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকায় রাতের আঁধারে ঘুরে বেড়ায়। তারা জনসমাগম-হীন ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে সুযোগ বুঝে ডিবি ও র্যাবের জ্যাকেট পরে রাস্তায় চলাচল-কৃত যাত্রীবাহী বাসকে লেজার লাইটের মাধ্যমে গতিরোধ করে ভুয়া ডিবি ও র্যাব পরিচয় দিয়ে টাকা, স্বর্ণালংকার, মোবাইল এবং অন্যান্য মূল্যবান দ্রব্য-সামগ্রী লুটপাট করে থাকে।
র্যাব জানায়, দীর্ঘদিন ধরে তারা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় গৃহ ডাকাতি, সড়ক ডাকাতি, গরুবাহী ট্রাক, মালবাহী ট্রাক ও বিভিন্ন মালামালের গুদামে ডিবি ও র্যাবের জ্যাকেট পরে ডাকাতি করে আসছে। এই চক্র গত ৩-৪ বছর যাবত ডাকাতি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। তাদের মূল টার্গেট নিউমার্কেট এবং পল্টন এলাকার ব্যাংকের কাস্টমর। যখন কোনো এলাকায় ডাকাতির কার্যক্রম পরিচালনা করে তখন ডাকাত দলের সর্দার কাওসার সবাইকে নিয়ে বস্তিতে তাদের ভাড়াকৃত বাসায় সমবেত হয়ে সেখান থেকে ডাকাতির স্থান রেকি করে। যখন কোন ব্যাংকের কাস্টমর ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে অন্যত্র গমন করে তখন ডাকাত দলের গোয়েন্দা সদস্য উক্ত ব্যক্তিকে অনুসরণ করে সুযোগ বুঝে তার টাকা এবং মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট করে নেয়। এ পর্যন্ত চক্রটি ঢাকা কুমিল্লা মহাসড়ক এবং মাওয়া হাইওয়ে রোডে ১৫-২০ টির অধিক ডাকাতি করেছে।
চক্রটি ডাকাতির দিন ২/৩ টি ব্যাংকের উপর তাদের গোয়েন্দা নজরদারী চলমান রাখে। কোন কাস্টমর বেশি অংকের টাকা উত্তোলন করে অন্যত্র গমন করলে তাদের গোয়েন্দা সদস্য উক্ত ব্যক্তির পিছু নেয়। কাস্টমর যখন টাকা নিয়ে কোন যাত্রীবাহী বাসে গমন করে তার সাথে ডাকাত চক্রের গোয়েন্দা সদস্য একই বাসে ওঠে। তারপর ডাকাত দলের গোয়েন্দা সদস্য ডাকাত দলের অন্যান্য সদস্যদেরকে বিভিন্নভাবে পরিবহনের গতিপথ এবং লোকেশন বলে দেয় ও নিয়মিত আপডেট দিতে থাকে। ডাকাত দলের নির্ধারিত স্থানে বাকি ডাকাত সদস্যগুলো ডিবি ও র্যাবের জ্যাকেট পরে লেজার লাইটের মাধ্যমে বাসটি গতিরোধ করে এবং বাসে থাকা টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে অবৈধ মাদক ব্যবসায়ী অথবা হত্যা মামলার আসামি বলে গাড়ি থেকে নামিয়ে নিয়ে তাদের মাইক্রোতে উঠিয়ে নেয়। পরবর্তীতে তার কাছ থেকে টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট করে ভুক্তভোগীকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়।
আসামীদের মধ্যে ডাকাত দলের সর্দার কাওসার এর নামে বিভিন্ন থানায় ৩টি ডাকাতি ও ডাকাতির প্রস্তুতি মামলা রয়েছে। কাওসার বিভিন্ন সময় বগুড়া থেকে ঢাকায় এসে তার সহযোগীদের সমবেত করে ডাকাতি কার্যক্রম সংগঠিত করে থাকে। সে এবং তার চক্রটি ডাকাতি কার্যক্রম এর সুবিধার্থে যাত্রাবাড়ী এলাকার বস্তিতে ভাড়ায় একটি ঘর নিয়ে সেখান হতে তাদের ডাকাতি পরিকল্পনা এবং রেকি কার্যক্রম করে থাকে। আসামি কাওসার ডাকাতি, ছিনতাই ও চুরি মামলায় ২০২০ থেকে ২০২২ সালে ৭ মাস জেল খেটে জামিনে বের হয়। জামিনে বের হয়ে সে পুনরায় ডাকাতি পেশাতেই ফিরে যায়। তার দৃশ্যমান কোন পেশা নেই। ডাকাতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দিয়েই সে তার জীবিকা নির্বাহ করে থাকে বলেও জানায় র্যাব।
সেইসাথে তার প্রধান সহযোগী আব্দুল্লাহ আল-মামুনের নামে বিভিন্ন থানায় ১টি ডাকাতি, ২টি অস্ত্র মামলা, ২টি ভুয়া সরকারি কর্মচারী পরিচয় দিয়ে প্রতারণা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। সে ২০২০ এবং ২০২১ সালে বিভিন্ন মেয়াদে ২টি মামলায় সর্বমোট ২০ মাস জেল খাটে। জামিনে বের হয়ে বস্তিতে তাদের ভাড়াকৃত বাসা থেকেই সে তার কার্যক্রম চালায়। মূলত ডাকাতিই তার পেশা এবং এই পেশার মাধ্যমেই সে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।
আসামি আলী আকবর মুন্সীগঞ্জ এলাকা থেকে এবং ধৃত ইমামুল গাজীপুরের চন্দ্রা এলাকা থেকে কাওসার বাহিনীর সাথে ঢাকায় বস্তিতে এসে সমবেত হত এবং একসাথে তাদের ডাকাতি কার্যক্রম চালাত। তাদেরও কোন দৃশ্যমান পেশা নেই। ডাকাতি, ছিনতাই, চুরি হতে অর্জিত অর্থের মাধ্যমেই তারা জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। ধৃত ইমামুলের বিরুদ্ধে একটি মাদক মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তার আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।