পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এ ধুয়ে গেছে ঘরের ভিটি। উড়ে গেছে চাল। অভাগা দুই স্বামী পরিত্যাক্তা শাশুড়ি পুত্রবধূ মিলে ছোট ছোট তিন শিশুপুত্র নিয়ে মাথা গোঁজার ঠাই ঠিক করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ঝড়ে পাতার বেড়া নষ্ট হয়ে গেছে।
যা আছে তাই দিয়ে কোন মতে মেরামতের কাজ করছেন গলাচিপার গোলখালী ইউনিয়নের পূর্বগোলখালী গ্রামের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বেড়ি বাঁধের বাইরে খাস জায়গায় বসবাসকারী স্বামী পরিত্যাক্ত আকলিমা বেগম (৪৮) ও পুত্রবধূ মাহিনুর বেগম (২৮)। তাদের কাজে সহযোগিতা করতে হাত বাড়িয়েছেন প্রতিবেশী হালিমা বেগম। গত তিন দিন ধরে শ্বাশুড়ি-পুত্রবধূর চেষ্টায় কোনরকম থাকার জায়গাটি গুছিয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, স্বামী পরিত্যাক্ত শ্বাশুড়ি ও পুত্রবধূর ঘরটি গলাচিপা উপজেলার গোলখালী ইউনিয়নের পূর্বগোলখালী গ্রামের নলুয়াবাগী নদীর তীরে। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাবে সোমবার দুপুরেই তাদের বসত ঘর তলিয়ে যায়। যা কিছু সম্বল ছিল তা পানিতে ভেসে যায়। কিছু রক্ষা করতে পারলেও বেশিরভাগ জিনিসপত্র রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। অবুজ তিনটি শিশুপুত্র নিয়ে প্রতিবেশি মোতালেব মৃধার বাড়িতে আশ্রয় নেয়। রাত পোহালে ঘরে এসে দেখে ঘরের চালা ভেসে গেছে, ভিটিও অধিকাংশ জায়গা দিয়ে ধুয়ে গেছে। একে তো অভাবের সংসার তার উপর ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর আঘাত। মঙ্গলবার সকাল থেকে তিন শিশুপুত্র ও শ্বাশুড়ি-পুত্রবধূ না খেয়ে ঘর গুছাতে ব্যস্ত ছিলেন। কিন্তু শিশুরা খাবারের জন্য কান্না শুরু করে দেয়। শিশুদের কান্নার শব্দ পেয়ে খাবার নিয়ে আসে প্রতিবেশী মোতালেব মৃধা। রান্না করা খাবার ও কিছু চাল দিয়ে দেন তিনি। তা দিয়ে কোন রকম চলছিল। কিন্তু আজ সকাল থেকে আবার না খেয়ে আছেন পুরো পরিবারটি। তাই লজ্জা ফেলে পুত্রবধূ মাহিনুর প্রতিবেশী মোতালেব মৃধার কাছ থেকে কিছু চাল নিয়ে আসেন। তা গরম করে নুন মরিচ দিয়ে শিশুসহ তাই খেয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে প্রতিবেশি হালিমা বেগম বলেন, পুত্রবধূ মাহিনুরের স্বামী টুটুল তিনটি শিশু রেখে অন্যত্র চলে গেছে। সেখানে সে বিয়ে করে সংসার চালাচ্ছে। এদিকে মাহিনুর কখনো অন্যের বাড়ি ঝি এর কাজ আবার ব্রিক ফিল্ডে রান্নার কাজ করে কোনরকম সংসার চালাচ্ছেন। কিন্তু বইন্যার পর তারা বেশি কষ্টে আছে। এই এলাকায় কেউ সাহায্য দেওয়ার জন্য আয় নাই।
আশ্রয়দানকারী মোতালেব মৃধা বলেন, এ পরিবারটি অত্যন্ত গরীব ও শ্বাশুড়ি ও পুুত্রবধূ স্বামী পরিত্যাক্তা। ঠিক মতো তিন বেলা খাবারই জোটে না। বন্যার দিন তারা কোথাও আশ্রয়ের জন্যও যায়নি। আমি তখন তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছি। সাধ্য মতো রান্না করা খাবার ও চাল দিয়েছি। কোন চেয়ারম্যান বা মেম্বার তাদেরকে সাহায্য করতে দেখিনি।
স্বামী পরিত্যাক্তা মাহিনুর বলেন, বইন্যার দিন দুপুরে ঘর ডুবে যায়। তখন মোতালেব কাকা আমাগো হের বাড়ি লইয়া যায়। রাইতে হের বাড়ি থাহি। বেইন্যাকালে আইয়া দেহি আমার ঘর-মালামাল সব পানিতে ভাইস্যা গেছে। পোলাপান লইয়া না খাইয়া আছি। আমাগো কোন সরকারি বা এনজিও সাহায্য করে নাই। মোতালেব কাকায় সাহায্য না করলে আইজ না খাইয়া থাহা লাগদে।
এ প্রসঙ্গে গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মহিউদ্দিন আল হেলাল বলেন, আমরা ক্ষয় ক্ষতির পরিমাণ ও পুনর্বাসনের তালিকা পাঠিয়েছি। সহায়তা আসার সাথে সাথে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।