সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর পৌরসভার বিরুদ্ধে নাগরিকদের হয়রানির অভিযোগ সহ নানা অজুহাতে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে ।
কার্যালয়ের এমন কোন সেক্টর নেই যেখানে হচ্ছেনা অনিয়ম-অবহেলা, নাগরিকদের সাথে করা হচ্ছে অশোভন আচরণও।
এমন কর্মকান্ড এখন প্রকাশ্যে রূপ নিলেও দেখার যেন কেউ নেই।
আইনের প্রতি তোয়াক্কা না করে ফিল্মি স্টাইলে চলছে পৌর কার্যালয়ের দৈনন্দিন কার্যক্রম।
সেখানে জবাবদিহিতার কোন বালাই নেই। যার ফলে জনগণের ভোগান্তি আরো চরম আকার ধারণ করেছে।
বিশেষকরে নিবন্ধন সেক্টরে দায়িত্বরতরা সার্ভার সমস্যার অজুহাতে টালবাহানা করার অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে ।
তবে নাগরিকদের এসব অভিযোগ কোন ভাবেই আমলে নিচ্ছেন না ২য় মেয়াদে থাকা পৌর মেয়র আক্তার হোসেন।
তাদের অনযোগ কিংবা অভিযোগের কোন সদুত্তর না পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন ভূক্তভোগী নাগরিকরা।
পৌর কার্যালয়ে সেবা নিতে আসা নাগরিকদের অভিযোগ, বিভিন্নভাবে নেওয়া হচ্ছে টাকা। অনেকটার কোন রশিদও দেয়া হচ্ছে না।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহে হোল্ডিং ট্যাক্সসহ বিভিন্নভাবে গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা, ফলে গরীব ও নিরিহ জনসাধারণ অসহায় হয়ে পড়েছেন ।
সেবা নিতে আসা নাগরিকরা, জন্ম নিবন্ধন সহ বিভিন্ন কাগজপত্র সংগ্রহ করতে এসে কার্যালয়ের বিভিন্ন দপ্তরে প্রতিদিন কোন না কোন হয়রানির মুখোমুখি হচ্ছেন।
বিশেষকরে অদক্ষ কর্মচারী দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে পৌর কার্যালয়ের বিভিন্ন সেক্টরে, ফলে কাগজি জটিলতা দূর করতে গিয়ে আরো জটিল সমস্যায় পড়তে হচ্ছে পৌরসভার নাগরিকদের।
জানাগেছে, পৌর কার্যালয়ে কিছু কর্মচারীকে চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
কর্মরত কর্মচারীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও নতুন নিয়োগের বেলায় অদক্ষ কর্মী নিয়োগ দেয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে সর্বমহলে।
অভিযোগ রয়েছে, জন্ম নিবন্ধনে নিজের নাম, পিতার নাম, মাতার নাম কিংবা জন্ম তারিখে ভুল, পুরুষের স্থলে মহিলা, মহিলার স্থলে পুরুষ সহ নানান ভুলের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ।
এসব ভুল সংশোধন করতে গিয়ে হয়রাণির পাশাপাশি নানা অজুহাতে অনেক সময় গুনতে হচ্ছে রশিদবিহীন টাকা।
এছাড়া পৌর কার্যালয়ে সেবা নিতে আসা নাগরিকরা নেটওয়ার্কের অজুহাতে পড়ে প্রতিদিন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
ভুক্তভোগী অনেকেই অভিযোগ করেন, বিদেশযাত্রা সহ বিশেষ প্রয়োজনে কাগজপত্র যেমন, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন, ওয়ারিশান সার্টিফিকেট, নাগরিকত্ব সাটিফিকেট সহ অন্যান্য কাগজপত্র সংগ্রহ ও সংশোধনে প্রতিদিন হয়রানির শিকার হচ্ছেন তারা।
পৌর কার্যালয়ে জন্ম নিবন্ধন করাতে আসা লোকজনের কাছ থেকে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় করা হচ্ছে বিভিন্ন কৌশলে।
অথচ বাড়ি বাড়ি গিয়ে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ে প্রদক্ষেপ নেয়ার কথা থাকলেও আদায় করা হচ্ছে অফিসে বসেই।
তাছাড়া জন্ম নিবন্ধন সেক্টরে টাকা হলে বয়স বাড়ানো বা কমানোর মত গুরুতর অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এসব কাগজ দিয়ে বেশিরভাগ কম বয়সী মেয়েদের পাঠানো হচ্ছে বিদেশে।
যা শিশু শ্রম আইনে বে-আইনি এবং মানব পাচার আইনের অপরাধ ।
তবে বয়স বাড়াতে টাকা দিতে হবে, না দিলে আইনের বাহানা দিয়ে বিদায় করারও অভিযোগ রয়েছে।
ভুক্তভোগী বাড়ী জগন্নাথপুর গ্রামের আব্দুস শহীদ বলেন, ভুল করে তারা, আর খেসারত দেই আমরা।
এভাবে আমার ছেলের নাম ও জন্ম তারিখে ভুল করেছে। অযোগ্য ও অশিক্ষিত লোক দিয়ে পৌর কার্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর চালানো হচ্ছে।
এলাকার মানুষ প্রতিদিন চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
একজন দায়িত্বশীল মানুষ হয়ে নাগরিকদের সাথে অশোভন আচরণ করা কাম্য নয়।
ধন মিয়া, মোজাক্কির মিয়া, শফিক মিয়া, আবু মিয়া, সমাই মিয়াসহ ভুক্তভোগী অনেকেই বলেন, পৌর কার্যালয়ের সুপারভাইজার (টিকাদানকারী) বিপ্রেশ মৈত্র, সহায়ক কমলা কান্তি শর্মাসহ অদক্ষ লোক দিয়ে নিবন্ধন সেকশনে এসব কাজ করানো হচ্ছে, মূলত এদের এ বিষয়ে কোন অভিজ্ঞতা নেই।
এদিকে অসাধাচরণ, দায়ীত্বে অবহেলা সহ নানা অনিয়মের বিষয়টি অনুসন্ধানে বেড়িয়ে আসে।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ভুলের দায় স্বীকার না করে, পৌর মেয়র আক্তার হোসেন বলেন নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে ভুল হচ্ছে। একসাথে বেশি লোকজন উপস্থিত হওয়ায় এই সমস্যা।
এছাড়া আইন অনুযায়ী আমাদের হাতে সংশোধনের জন্য ১৫ দিন পর্যন্ত রাখার বিধান আছে ।
তবে সার্ভার সমস্যা কাজের ধীরগতির কারণ বলেও তিনি জানান।
জগন্নাথপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র মিজানুর রশীদ ভূইয়া বলেন, জনগণের ভোগান্তি কোন ভাবেই মেনে নেওয়া যায়না।জনগনের সেবায় নিয়োজিত থাকবে জনপ্রতিনিধিরা এটাই স্বাভাবিক।
মানুষ তাদের কাছে সর্বোচ্চ সম্মান আশা করে।
পৌরসভার সাবেক (ভারপ্রাপ্ত) মেয়র কাউন্সিলর শফিকুল হক শফিক বলেন নাগরিকরা আসলেই হয়রানির শিকার হচ্ছেন। নেট কখনো ভুল করেনা।
কম্পিউটার সম্পর্কে অভিজ্ঞতা না থাকলে যেমনটি হয়ে থাকে, এখন সেটাই হচ্ছে।
পৌরসভার প্যানেল মেয়র সাফরোজ ইসলাম মুন্না বলেন, মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে এটা ঠিক তবে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন লোক নিয়োগ করার জন্য পৌর পরিষদের মাসিক সভায় আমরা আলোচনা করেছি।