পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় করতোয়া নদীতে ইঞ্জিনচালিত নৌকা ডুবির ঘটনায় সোমবার আরও ৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এই ৬ জনের মধ্যে ৪ জন নারী ও ২ জন

পুরুষ। এর আগে গতকাল ২৫ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় ৩১ জনের মৃত্যু হলো।এখনো ৩৫ জন নিখোঁজের কথা বলা হলেও এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে তথ্য পাওয়া যায়নি।

এদিকে নিহত ও নিখোঁজদের স্বজনদের আহজারিতে করতোয়ার বাতাস ভারি হয়েছে। স্বজনদের খুঁজতে ছোটাছুটি করছেন তারা।

রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরের দিকে উপজেলার মারেয়া ইউনিয়নের আউলিয়ার ঘাট এলাকার করতোয়া নদীতে শতাধিক যাত্রী নিয়ে নৌকাটি ডুবে যায়। কতজন সাঁতরে পার হয়েছে আর কতজন নিখোঁজ রয়েছে তার সঠিক কোনো তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয় ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ৩১ জনের লাশ উদ্ধার করেছেন। নৌযাত্রীদের এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে শোকের কালো মেঘে ছেয়ে গেছে সাড়া পঞ্চগড়। আজও সেখানে চলছে শোকের মাতম। নিখোঁজের স্বজনরা করতোয়া পাড়ে আহাজারি করছেন।

নিহতদের মধ্যে ১৬ জন নারী, ৮ জন শিশু ও পুরুষ ৭ জন রয়েছেন বলে এখন পর্যন্ত তথ্য পাওয়া গেছে। সোমবার সকালে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে ৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করেন স্থানীয়রা।

পঞ্চগড় ফায়ার সার্ভিসের উপ পরিচালক সৈয়দ মাহাবুবু আলম জানান, পঞ্চগড় রংপুর কুড়িগ্রাম ও রাজশাহী থেকে ৩টি ডুবুরি দল সকাল থেকে উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। ঘটনাস্থল থেকে ভাটি অংশের ২৫-৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত অভিযান চালানো হবে। গতরাতে নিহতদের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রতিটি পরিবারে শোকের মাতম চলছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রোববার দুপুরে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় প্রায় শতাধিক যাত্রী নিয়ে বোদা উপজেলার মারেয়া ইউনিয়নের করতোয়া নদীর আউলিয়ার ঘাট থেকে বদেশ্বরী মন্দিরের মহালয়া পূজা পালনে যাচ্ছিরেন পুণ্যার্থীরা। পথে নদীর মাঝখানে অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়ায় ডুবে যায় নৌকাটি। প্রথমে স্থানীয়রা উদ্ধার তৎপরতা চালান। পরে দমকল বাহিনী ও পুলিশ উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নেয়। উদ্ধার তৎপরতায় গতকাল ২৫ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশগুলো স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। গত রাত ৮টায় উদ্ধার অভিযান বন্ধ হলেও আজ সকাল থেকে আবার উদ্ধার অভিযান শুরু হয়।

স্থানীয় এমপি রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন ঘটনাস্থল পরির্দশন করেছেন। উদ্ধার অভিযান চলমান রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা জানান, নৌকা ডুবির ঘটনায় অনুমান করা হচ্ছে আরও ৫০-৬০ জন নিখোঁজ রয়েছেন। উদ্ধার অভিযান চলমান রয়েছে।

জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক পরিবারকে মৃতদেহের সৎকার করার জন্য নগদ ২০ হাজার টাকা এবং আহতদের জন্য চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে ওই ঘটনায় নিহত ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনরা ভিড় করেছেন করতোয়ার পাড়ে। কেউ এসেছেন ভাইয়ের খোঁজে, কেউ বোনের, কেউ বাবার, আবার কেউ সন্তানের। সেখানে অনেককে শোকে মুর্ছা যেতে দেখা গেছে। মানুষের কান্নায় করতোয়া পড়ের বাতস ভারী হয়ে উঠেছে।

আরও পড়ুন…

করতোয়ায় নৌকাডুবির ঘটনায় মৃত্যু বেড়ে ৩১

মৃত অবস্থায়ও ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ছিলেন মা

পঞ্চগড়ে নৌকা ডুবিতে নিহতদের পরিচয় জানা গেলো

পঞ্চগড়ে করতোয়া নদীতে যেভাবে ডুবে গেল নৌকাটি (ভিডিও)

পঞ্চগড়ে করতোয়া নদীতে নৌকাডুবি: নিহত ২৫, নিখোঁজ অন্তত ২০

নিহতদের পরিবারকে দেয়া হবে ২০ হাজার টাকা