রোমাঞ্চের নানা ধাপ পেরিয়ে ম্যাচ গড়াল শেষ ওভারে। প্রথম বলে একটি সিঙ্গেলের পর বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দলকে জয়ের হাতছোঁয়া দূরত্বে নিলেন আসিফ আলি। ৪ বলে প্রয়োজন তখন কেবল ২ রান। তবে একটি বল ডটের পর আসিফকে এলবিডব্লিউ করে নতুন করে লড়াই জমিয়ে তোলার আভাস দিলেন আর্শদিপ সিং। সেটা যদিও কেবল ওই মুহূর্তটার জন্যই। পরের বলেই দুই রান নিয়ে ভারতের বিপক্ষে রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে পাকিস্তানকে দারুণ জয় এনে দিলেন ইফতিখার আহমেদ।
গ্রুপ পর্বে ৫ উইকেটে হারের বদলা সুপার ফোরে একইভাবে নিল বাবর আজমের দল। দুবাই ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে রোববার ভারতের ১৮১ রান তারা পেরিয়ে গেল ৫ উইকেট ও ১ বল হাতে রেখে।
টি-টোয়েন্টিতে ভারতের বিপক্ষে ১১ ম্যাচে পাকিস্তানের এটি তৃতীয় জয়, সবশেষ তিন ম্যাচে দ্বিতীয়।
পাকিস্তানের জয়ে অলরাউন্ড নৈপুণ্যে দ্যুতিময় মোহাম্মদ নওয়াজ। ৪ ওভারে ২৫ রান দিয়ে ছন্দে থাকা সূর্যকুমার যাদবের উইকেট নেন তিনি। পরে প্রমোশন পেয়ে চারে নেমে দলের কঠিন অবস্থায় ২০ বলে খেলেন ৪২ রানের বিস্ফোরক ইনিংস। কিপিং ও ব্যাটিংয়ের সময় পাওয়া ব্যথা সয়েও ৭১ রানের চমৎকার ইনিংস খেলা মোহাম্মদ রিজওয়ানের অবদানও কোনো অংশে কম নয়।
ভালো শুরু বড় করতে পারেননি ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। তবে সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মিছিলে যোগ দেননি বিরাট কোহলি। এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান খেলেন ৬০ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস।
বোলিংয়ে বাজে দিন কেটেছে হার্দিক পান্ডিয়া, ভুবনেশ্বর কুমার ও যুজবেন্দ্র চেহেলের। তিন জনই একটি করে উইকেট পেয়েছেন, তবে রান বিলিয়েছেন অকাতরে। বোলিংয়ে আলো ছড়িয়েছেন বিষ্ণই। ১৮তম ওভারে এই লেগ স্পিনারের বলেই আসিফকে শর্ট থার্ড ম্যানে আর্শদিপ জীবন না দিলে ম্যাচের চিত্র অন্যরকম হতে পারতো।
শেষটা হতাশাময় হলেও ভারতের শুরুটা ছিল দুর্দান্ত। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন রোহিত শর্মা ও লোকেশ রাহুল। প্রথম ওভারে নাসিম শাহকে চারের পর ছক্কায় উড়িয়ে পথ দেখান রোহিত। তরুণ পেসারের পরের ওভারের প্রথম ও শেষ বলে ছক্কা মারেন রাহুল।
পাকিস্তানের পেসারদের গতিময় ডেলিভারি অনায়াসেই খেলছিলেন ভারতের দুই ওপেনার। তাদের বিচ্ছিন্ন করে হারিস রউফের স্লোয়ার। বুঝতে না পেরে আকাশে তুলে দেন রোহিত। ক্যাচ ধরতে গিয়ে প্রায় তালগোল পাকিয়েই ফেলছিলেন ফখর জামান ও খুশদিল। শেষ মুহূর্তে ঝাঁপিয়ে ক্যাচ ধরার চেষ্টায় নাগাল পাননি ফখর, তার জন্য বল মিস করতেই পারতেন খুশদিল। তবে তিনি ঠাণ্ডা মাথায় নেন ক্যাচ।
১৬ বলে দুই ছক্কা ও তিন চারে ২৮ রান করেন রোহিত। পরের ওভারে ওই ২৮ রানেই থামেন রাহুল। লেগ স্পিনার শাদাব খানের বলে সীমানায় ক্যাচ দেন তিনি।
এক প্রান্ত আগলে রেখে দলকে এগিয়ে নেন কোহলি। আরেক প্রান্তে কেউই তাকে লম্বা সময় সঙ্গ দিতে পারেননি। টপ অর্ডারের তিন জনের বাইরে আর কোনো ব্যাটসম্যান খেলতে পারেননি ১৫ বল।
ক্রিজে গিয়েই চার দিয়ে শুরু করা সূর্যকুমারকে ঝড় তোলার আগেই থামান নওয়াজ। দুই দলের প্রথম ম্যাচের নায়ক পান্ডিয়াকে শূন্যতেই থামান প্রথমবারের মতো টুর্নামেন্টে খেলা মোহাম্মদ হাসনাইন।
নিয়মিত উইকেট পতনের মধ্যেও রানের গতি পড়তে দেননি কোহলি। সেরা সময়ে যেমন খেলেন, তেমন কিছু শট উপহার দেন ছন্দে ফেরার লড়াইয়ে থাকা এই তারকা ব্যাটসম্যান। স্পিনের বিপক্ষে দেখান পায়ের দারুণ কাজ।
গ্যাপ বের করেন অনায়াসে। রানিং বিটুইন দা উইকেটে এক-দুই নিয়ে সচল রাখেন রানের চাকা। ৩৬ বলে ফিফটি ছোঁয়ার পর যদিও বড় করতে পারেননি ইনিংস। শেষ ওভারে ঝুঁকিপূর্ণ ২ রান নেওয়ার চেষ্টায় আসিফ আলির সরাসরি থ্রোয়ে থামেন রান আউট হয়ে। টানা দ্বিতীয় ফিফটি পাওয়া কোহলি ৪৪ বলে এক ছক্কা ও চারটি চারে করেন ৬০।
ইনিংসের শেষ দুই হলে হতে পারতো কেবল ১ রান, মিলতে পারতো একটি উইকেট। কিন্তু ভারতকে দুটি বাউন্ডারি উপহার দেন ফখর। প্রথমবার বল তার হাতের পাশ দিয়ে চলে যায় বাউন্ডারিতে। পরের বলে সহজ ক্যাচ ধরতে পারেননি, হয়ে যায় আরেকটি চার!
রান তাড়ায় শুরুটা ভালো হয়নি পাকিস্তানের। চতুর্থ ওভারেই ভাঙে উদ্বোধনী জুটি। আগের দুই ম্যাচের মতো এবারও বাবর আজম। বিষ্ণইয়ের গুগলিতে ধরা পড়েন মিডউইকেটে। ফিল্ডিংয়ে বাজে দিন কাটানো ফখর সুবিধা করতে পারেননি ব্যাটিংয়েও। বিদায় নেন দুটি চার মেরে।
এক প্রান্তে দারুণ দৃঢ়তা দেখিয়ে দলকে টানেন রিজওয়ান, ৩৭ বলে স্পর্শ করেন ফিফটি। রানের গতিতে দম দেওয়ার আসল কাজটা করেন নওয়াজ। চারে নেমে তোলেন ঝড়। রিজওয়ানের সঙ্গে ৪১ বলে গড়েন ৭৩ রানের জুটি। যেখানে নওয়াজের অবদান ২০ বলে ২ ছক্কা ও ৬ চারে ৪২ রান।
আক্রমণে ফিরে নওয়াজকে বিদায় করে ভারতের আশা বাঁচিয়ে রাখেন ভুবনেশ্বর।
বোলিংয়ে দিনটা খুব খারাপ কাটছিল পান্ডিয়ার। যখনই আক্রমণে আসছিলেন, বাউন্ডারি হজম করছিলেন। তিনিই নেন রিজওয়ানের উইকেট। অফ স্টাম্পের বাইরের বলে লং অফে ধরা পড়েন পাকিস্তানের ওপেনার। ৬টি চার ও ২টি ছক্কায় ৫১ বলে তিনি করেন ৭১।
পরের ওভারেই শর্ট থার্ড ম্যানে সহজ ক্যাচ দিয়েও আর্শদিপের অবিশ্বাস্য ব্যর্থতায় বেঁচে যান আসিফ। যেটার দিতে হয় চড়া মূল্য। ৮ বলে ১৬ রান করে দলকে তিনি এগিয়ে নন জয়ের পথে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ২০ ওভারে ১৮১/৭ (রাহুল ২৮, রোহিত ২৮, কোহলি ৬০, সূর্যকুমার ১৩, পান্ত ১৪, পান্ডিয়া ০, হুডা ১৬, ভুবনেশ্বর ০*, বিষ্ণই ৮*; নাসিম ৪-০-৪৫-১, হাসনাইন ৩-০-৩৮-১, রউফ ৪-০-৩৮-১, নওয়াজ ৪-০-২৫-১, শাদাব ৪-০-৩১-২)
পাকিস্তান: ১৯.৫ ওভারে ১৮২/৫ (রিজওয়ান ৭১, বাবর ১৪, ফখর ১৫, নওয়াজ ৪২, খুশদিল ১৪*, আসিফ ১৬, ইফতেখার ২*; ভুবনেশ্বর ৪-০-৪০-১, আর্শদিপ ৩.৫-০-২৭-১, বিষ্ণই ৪-০-২৬-০, পান্ডিয়া ৪-০-৪৪-১, চেহেল ৪-০-৪৩-১)
ফল: পাকিস্তান ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মোহাম্মদ নওয়াজ