বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের তালিকা যাচাই বাছাইয়ের নামে সময়ক্ষেপণ করে চলেছে মিয়ানমার। বাংলাদেশ কয়েক দফায় তালিকা দিলেও মিয়ানমার তা যাচাই সম্পন্ন করতে পারেনি। সে কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
রোহিঙ্গা শরণার্থী ঢলের পাঁচ বছর হলেও তাদের তালিকা যাচাই বাছাইয়ে নানা কৌশল ও তাল বাহানা করে সময়ক্ষেপণ করে চলেছে মিয়ানমার।সে কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কোনো অগ্রগতিও নেই।
২০১৮ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লেফটেন্যান্ট জেনারেল চ সোয়ে ঢাকা সফরে আসেন। সেই সময় প্রথমবারের মতো মিয়ানমারকে ১৬৭৩টি পরিবারের ৮০৩২ জন রোহিঙ্গার তালিকা দেওয়া হয়। এরপর আরও কয়েক দফায় মিয়ানমারকে আট লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা যাচাই বাছাইয়ের জন্য দেওয়া হয়েছে। তবে মিয়ানমার এ পর্যন্ত মাত্র ৫৮ হাজার রোহিঙ্গাকে যাচাই বাছাই করেছে।
মিয়ানমার প্রথম দফায় ১১ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নেবে বলে জানিয়ে ৭০০ রোহিঙ্গার একটি তালিকা বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করে। তবে এ তালিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। মিয়ানমার যে ৭০০ লোকের তালিকা পাঠিয়েছে, সেখানে কোনো কোনো পরিবারের একজন, দু’জন সদস্য রয়েছে। পুরো পরিবারের সদস্যদের নাম নেই। পরিবার বিচ্ছিন্ন সদস্যদের ফেরত যাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন জানিয়েছেন, মিয়ানমার ৭০০ রোহিঙ্গার যে তালিকাটা পাঠিয়েছে, সেটা এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, তাতে আমাদের মনে হচ্ছে, তাদের সদিচ্ছার অভাব আছে। তাদের অন্য দুরভিসন্ধি আছে। কেননা পরিবারের সদস্যদের বিচ্ছিন্ন করে মিয়ানমার এ তালিকা পাঠিয়েছে। পরিবারের সদস্যদের বিচ্ছিন্ন করা হলে কেউ মিয়ানমারে যাবে না। এ তালিকা শুভঙ্করের ফাঁকি বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
এদিকে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের তালিকা তৈরি করেছে বাংলাদেশ। এ তালিকায় প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে। আশ্রয় নেওয়া নতুন ও পুরনো রোহিঙ্গারা এ তালিকায় স্থান পেয়েছে।
রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠিত হয়। এ কমিটি কয়েক দফা বৈঠকের পরও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করা সম্ভব হয়নি।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। সে অনুযায়ী একই বছর ১৯ ডিসেম্বর মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় এলে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠিত হয়। এ যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে কাজ করছে। তবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় কোনো অগ্রগতি হয়নি।
উল্লেখ্য, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে শুরু করেন রোহিঙ্গারা। এরপর গত পাঁচ বছরে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।