ঢাকার ধামরাইয়ে যৌতুকের টাকা না পেয়ে সামিনা (১৮) নামে এক গৃহবধূকে নির্যাতন ও পুড়িয়ে হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামিকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৪। সোমবার (২২ আগস্ট) চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ থানার নারায়ণপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- আব্দুর রহিম (৬৪) ও রোকেয়া (৫০)। তারা দুজনেই গ্রেফতার হয়ে জেল খেটেছেন।পরে জামিনে বের হয়ে পলাতক ছিলেন।
মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) ডিআইজি মোজাম্মেল হক।
তিনি জানান, ২০০৩ সালে সাভারের কাউন্দিয়া নিবাসী সামিনার সঙ্গে বক্তারপুরের জাফরের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় নগদ টাকা, আসবাবপত্র এবং ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী দিলেও যৌতুক হিসেবে আরও টাকা দাবি করে জাফরের পরিবার।
টাকার জন্য সামিনাকে প্রায়ই শারীরিকভাবে নির্যাতন করতো জাফরের পরিবার। টাকা দিতে না পারায় ২০০৫ সালের ৭ জুন তাকে মারধর করেন তারা। এক পর্যায়ে সামিনার শরীরে আগুন ধরিয়ে ঘরে আটকে রাখেন জাফর। তার চিৎকারে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে নয়ারহাট গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে নেন। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ জুন তার মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় ছয়জনকে আসামি করে ধামরাই থানায় একটি মামলা করেন নিহতের মা। মৃত্যুর আগে এ ঘটনায় জড়িত সবার নামসহ ঘটনার জবানবন্দি নেয় পুলিশ। একই বছরের ৩১ আগস্ট মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এজাহারনামীয় সব আসামিকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। দীর্ঘ সাক্ষ্য শেষে ২০১৮ সালের ৫ জুলাই আদালত ছয়জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। এ ছাড়া প্রত্যেক আসামিকে ১০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ডেরও আদেশ দেয়।
ঘটনার পর জাহাঙ্গীর ছাড়া এ মামলার সব আসামি গ্রেফতার হয়। মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জাফর আগে থেকে জেলহাজতে রয়েছেন। সালেক ও জাফরের মামা ফেলানিয়া মামলা চলাকালীন গ্রেফতার হয়ে এক বছর কারাভোগের পর জামিনে মুক্তি পান। বর্তমানে তারা পলাতক রয়েছেন।
মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আব্দুর রহিম ১১ মাস ও রোকেয়া ১৭ মাস কারাভোগের পর ২০০৬ সালের শেষের দিকে জামিনে মুক্তি পেয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর সোমবার রাতে রোকেয়া ও রহিমকে গ্রেফতার হয়। তবে এখনো মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আরও তিন আসামি পলাতক রয়েছেন। ’
গ্রেফতারকৃত দণ্ডপ্রাপ্তদের বিষয়ে ডিআইজি মোজাম্মেল বলেন, ‘রায়ের পর থেকে ঢাকা জেলার বিভিন্ন এলাকায় পেশা পরিবর্তন করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন রহিম। তিনি কখনোই এক জায়গায় বসবাস করতেন না। আর ২০১৭ সালে রোকেয়া জন্ম তারিখ পরিবর্তন ও নিজেকে অবিবাহিত দেখিয়ে নতুন আইডি কার্ড তৈরি করে গৃহকর্মী হিসেবে কৌশলে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। পাঁচ বছর ধরে তিনি দেশের বাইরে ছিলেন। জুনের প্রথম দিকে বাংলাদেশে ফেরত আসেন। গত দুমাস ধরে এ দম্পতি তাদের মেয়ে পিংকির শ্বশুরবাড়ি চাঁদপুরের নারায়ণপুর গ্রামে ভাড়া বাড়িতে বসবাস করছিলেন। ’