আর কোনো ধরনের বেয়াদিব সহ্য করা হবে না বলে চীনকে সাফ জানিয়ে দিয়েছে ভারত।
তারা বলছে, মুখে শান্তির কথা বলেও প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় স্থিতাবস্থা পরিবর্তনের লক্ষ্যে কিছু না কিছু ঘটিয়েই চলেছে চীন। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।
নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর শান্তি বজায় রাখতে দ্বিপাক্ষিক বোঝাপড়ায় বেইজিং ইতোমধ্যে বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে।
নয়াদিল্লির পক্ষ থেকে বেইজিংকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হল, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় চীনা বাহিনীর বেয়াদবি বরদাস্ত করা হবে না। অতীত সমঝোতার কারণে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর দুই দেশে সেনার আগ্নেয়াস্ত্র ছাড়াই টহলদারি দেওয়ার কথা।
কিন্তু নয়াদিল্লির বক্তব্য, যেভাবে কোনওরকম প্ররোচনা ছাড়াই চীনা সেনারা ভারতীয় বাহিনীর ওপর হামলা চালাচ্ছে তাতে আর হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না সাউথ ব্লক। ভারতীয় বাহিনীকে বলে দেওয়া হয়েছে, আত্মরক্ষার জন্য তারা গুলি চালাতে পারে।
সাউথ ব্লকের এক সেনা কর্তা বলেন, দুই দেশের মধ্যে যে সমঝোতা হয়েছিল তাতে লাদাখ সীমান্তে প্রতিটি টহলদারি বাহিনীতে ১৫ থেকে ২০ জনের বেশি জওয়ান থাকার কথা নয়। কিন্তু শর্ত ভেঙে চীনা সেনারা এক সঙ্গে অনেকে মিলে চলে আসছে। তারপর ভারতীয় টহলদারি বাহিনীর ওপর হামলা চালাচ্ছে।
লাঠি, পাথর, পেরেক লাগানো মুগুর দিয়ে প্রাণঘাতী হামলা চালাচ্ছে তারা। গত জুন মাসে ও পরে আগস্টের শেষে এভাবেই তারা হামলা চালিয়েছে। কিন্তু এবার তা করতে গেলে গুলি দিয়ে জবাব দেবে ভারতীয় বাহিনী।
ভারত ও চীনের সেনা কমান্ডার স্তরে ষষ্ঠ রাউন্ডের বৈঠক শেষ হয়েছে। সে ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এদিন বলেন, “আগামী দিনে শান্তি কায়েমের পথ একটাই। সংঘাত কমাতে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া এবং লাদাখে যেসব জায়গায় দুই বাহিনীর মধ্যে সংঘাত তৈরি হয়েছে, সেখানে ধীরে ধীরে সেনা মোতায়েন কমানো।
কিন্তু ব্যাপারটা যে সেদিকে যাচ্ছে না সেই আশঙ্কা কূটনীতিক ও কৌশলগত বিশেষজ্ঞদের মধ্যে চেপে বসছে। বরং তাদের অনেকেরই ধারণা শীত পড়ার অপেক্ষা করছে বেইজিং।
লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর অঞ্চলে শীতে প্রকট ঠাণ্ডা থাকে। তাপমাত্রা শূন্যের অনেক নিচে নেমে যায়। সেই সময়ে পায়ে পা দিয়ে ফের ঝগড়া বাধাতে পারে চীনা সেনাবাহিনী।
ভারতীয় সেনা গোয়েন্দাদের কাছে খবর রয়েছে যে, লাদাখ সীমান্তে অন্তত ৫০ হাজার সেনা মোতায়েন করেছে চীন। সেই সঙ্গে মিসাইল সিস্টেম, ট্যাঙ্ক এবং প্রচুর আগ্নেয়াস্ত্র মজুত করেছে শি জিনপিংয়ের দেশ।
ভারতীয় এক কূটনীতিকের কথায়, চীন এখন বলছে যে ভারতীয় বাহিনীর হামলায় ওদের একজন কমান্ডান্ট-সহ ৬ জন সেনা সদস্য মারা গেছে। তবে প্রকাশ্যে এ কথা ওরা এখনও স্বীকার করেনি। কিন্তু দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় যখন এই প্রসঙ্গ তুলেছে, তখন বুঝতে হবে ওদের হতাহতের সংখ্যা অন্তত এর দুগুণ বা তিন গুণ।
ফলে মুখে যাই বলুক ওরা সীমান্তে অস্থিরতা জিইয়ে রাখতে চাইবে বলেই মনে করা হচ্ছে। তাই আসন্ন শীতের জন্য প্রস্তুতি বাড়াচ্ছে ভারতও। লাদাখ সীমান্তে ইতিমধ্যেই পরিকাঠামো বাড়ানো হয়েছে। সেখানে রসদ সরবরাহ করতে আর অসুবিধা নেই। শীতে সংঘর্ষ বাধলে ভারতও গরম গরম জবাব দিতে প্রস্তুত থাকবে।