হিজরি ১৪৪৪ সনের ১০ মহররম আজ, পবিত্র আশুরার দিন। সারা বিশ্বের মুসলমানদের জন্য গভীর শোকের দিন। হিজরি ৬১ সনের ১০ মহররম এই দিনে মহানবী হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসেন (রা.) এবং তার পরিবার ও অনুসারীরা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে যুদ্ধ করতে গিয়ে ফোরাত নদীর তীরে কারবালা প্রান্তরে ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে শহীদ হন।
কারবালা প্রান্তরের সেই শোকাবহ ঘটনার স্মরণে প্রতিবছর ১০ মহররম পবিত্র আশুরা পালিত হয়।ত্যাগ ও শোকের প্রতীকের পাশাপাশি বিশেষ পবিত্র দিবস হিসেবে দিনটি পালন করা হয় মুসলিম বিশ্বে। বাংলাদেশে যুগ যুগ ধরে অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে আশুরা পালিত হয়ে আসছে।
পবিত্র আশুরা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। এ উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি।
এই দিনে মহানবী হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসেন (রা.) অন্যায় ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে চক্রান্তকারী ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে কারবালা প্রান্তরে মর্মান্তিকভাবে শাহাদত বরণ করেন।
মুয়াবিয়ার মৃত্যুর পর তার ছেলে ইয়াজিদ অবৈধভাবে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করেন এবং এ জন্য ষড়যন্ত্র ও বলপ্রয়োগের পথ বেছে নেন।
মহানবী হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আরেক দৌহিত্র হজরত ইমাম হাসান (রা.)-কে বিষপানে হত্যা করা হয়। ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে অবরুদ্ধ হয়ে পরিবার-পরিজন, ৭২ জন সঙ্গীসহ শাহাদত বরণ করেন হজরত ইমাম হোসেন (রা.)।
এ হত্যাকাণ্ড ছিল অত্যন্ত নির্মম। নিষ্ঠুর ইয়াজিদ বাহিনী অসহায় নারী ও শিশুদের পানি পর্যন্ত পান করতে দেয়নি। ইমাম হোসেন (রা.) ও তার অনুসারীদের এ আত্মত্যাগ ইসলামের ইতিহাসে অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।
ইসলামের ইতিহাসে মহররমের ১০ তারিখ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। আশুরার দিনে আল্লাহ তাআলা পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলেন। আবার এই দিনেই তিনি কেয়ামত ঘটাবেন। আশুরার দিনে হজরত আদম (আ.) বেহেশত থেকে দুনিয়ার বুকে নেমে এসেছিলেন। আবার এই দিনেই আল্লাহ পাক আদম (আ.)-এর দোয়া কবুল করেছিলেন, এই দিনে আরাফাতের ময়দানে হাওয়া (আ.)-এর সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়।
হজরত নুহ (আ.)-এর জাতির লোকজন আল্লাহর গজব মহাপ্লাবনে নিমজ্জিত হওয়ার পর আশুরার এই দিনে নৌকা থেকে ইমানদারদের নিয়ে জমিনে অবতরণ করেন। হজরত ইবরাহীম (আ.) নমরুদের অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হওয়ার ৪০ দিন পর আশুরার এই দিনে সেখান থেকে মুক্তি লাভ করেন। হজরত আইয়ুব (আ.) ১৮ বছর কঠিন রোগ ভোগ করার পর আশুরার এই দিনে আল্লাহর রহমতে সুস্থতা লাভ করেন।
হজরত ইয়াকুব (আ.)-এর পুত্র হযরত ইউসুফ (আ.) তার সৎ-ভাইদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে কূপে নিক্ষিপ্ত হওয়ার পর মিশরে গিয়ে যখন রাষ্ট্রক্ষমতা লাভ করেছিলেন, দীর্ঘ ৪০ বছর পর আশুরার এই দিনে তার পিতার সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়। হজরত ইউনুস (আ.) আশুরার এই দিনে ৪০ দিন পর মাছের পেট থেকে নাজাত পেয়েছিলেন।
আশুরার এই দিনে আল্লাহ হজরত মুসাকে (আ.) ফেরাউনের কবল থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন, আর ফেরাউন ও তার দলবলকে নীল নদে ডুবিয়ে মেরেছিলেন।
হজরত ঈসা (আ.)-এর জাতির লোকেরা তাকে হত্যা করার চেষ্টা করলে আশুরার এই দিনে আল্লাহ তাআলা তাকে আসমানে উঠিয়ে নেন। আশুরার এই দিনে ফোরাত নদীর তীরে কারবালার প্রান্তরে নবী করিম (সা.)-এর কলিজার টুকরা আদরের নাতি ইমাম হোসেন (রা.) অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে শাহাদত বরণ করেন।
আশুরার মূল চেতনা অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের সংগ্রাম। সেই সংগ্রামে সাময়িক আঘাত এলেও চূড়ান্ত বিজয় অবধারিত। এটাই মহররমের শিক্ষা। কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায়, ‘ত্যাগ চাই, মর্সিয়া-ক্রন্দন চাহি না’। অন্যায়-অবিচার ও ষড়যন্ত্র থেকে পৃথিবীকে মুক্ত রাখতে ত্যাগের মহিমা সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে।