পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চ থেকে নদীতে পড়ে নিখোঁজ শিশু জুয়েলকে ২ ঘণ্টা পর জীবিত উদ্ধার করেছেন জেলেরা। শিশুটি একটি প্লাস্টিকের বালতি ধরে ভেসে ছিল খরস্রোতা নদীতে।
রোববার বেলা সোয়া ২টার দিকে পটুয়াখালীর আগুনমুখা নদীতে এ ঘটনা ঘটে।
শিশুটিকে উদ্ধারে কোনো উদ্যোগ না নিয়ে জাহিদ-৩ নামের লঞ্চটি ঢাকার উদ্দেশে চলে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উদ্ধার হওয়া ১২ বছর বয়সী জুয়েল এখন পটুয়াখালীর পানপট্টি এলাকার ঘেরমালিক নিজাম মিয়ার হেফাজতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন গলাচিপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম শওকত আনোয়ার ইসলাম।
লঞ্চের বাবুর্চি শামীম ইসলাম বলেন, ‘জুয়েলের বাড়ি শরীয়তপুর জেলায়। ওর বাবার নাম জানা যায়নি। জুয়েল আগে অন্য লঞ্চে কাজ করত। কয়েক দিন আগে ঢাকার সদরঘাটে বসে সে আমার সঙ্গে কাজ করতে চায়। এর পর থেকে আমার সহকারী হিসেবে কাজ করছে জুয়েল।’ তিনি বলেন, ‘বেলা ২টার দিকে রাঙ্গাবালীর কোড়ালিয়া ঘাট থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছাড়ে লঞ্চটি। আধাঘণ্টা পর জুয়েল গোসল করতে লঞ্চের পেছনে যায়। যাওয়ার সময় ওকে বারবার নিষেধ করেছি সাবধানে গোসল করিস, নদীতে স্রোত বেশি।
কিছুক্ষণ পর ওকে না দেখে ডাকাডাকি করি। একপর্যায়ে অনেক দূরে তাকে ভাসতে দেখি। তখন পর্যন্ত লঞ্চটি থামানো ছিল, কিন্তু নদীতে স্রোতের কারণে উল্টো দিকে যাওয়া সম্ভব হয়নি। একপর্যায় ওর আশপাশেই নৌকা দেখতে পাই। বিকেলে সুপারভাইজার জানান, জুয়েলকে পাওয়া গেছে।’
লঞ্চের সুপারভাইজার কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা অনেক চেষ্টা করেছি লঞ্চটি ঘুরিয়ে জুয়েলকে উদ্ধার করতে, কিন্তু আগুনমুখা নদীতে স্রোত ছিল অনেক বেশি। ওই স্রোতের কারণেই উল্টোপথে লঞ্চটিকে ঘুরিয়ে নেয়া সম্ভব হয়নি।
তাৎক্ষণিকভাবে আমরা পানপট্টি, কোড়ালিয়া ঘাটের অনেককে বিষয়টি জানিয়েছি। বলেছি, জুয়েলকে কোনো জেলে পেয়ে থাকলে তাদের জিম্মায় যেন রেখে দেয়। বিকেলে পানপট্টি থেকে ঘেরমালিক নিজাম উদ্দিন ফোন দিয়ে আমাকে জানান, জুয়েলকে জীবিত উদ্ধার করে তার জিম্মায় রাখা হয়েছে।’
নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘পানপট্টি এলাকার জেলে জুয়েল মাদবর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আগুনমুখা নদীর মাঝখান থেকে জুয়েলকে একটি প্লাস্টিকের বালতি ধরে ভাসতে দেখে নৌকায় তোলে। ৫টার দিকে পানপট্টি ঘাটে জুয়েলকে আনা হয়। পরে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আমার হেফাজতে রেখেছি।’ নদীতে নিখোঁজ শিশুটি উদ্ধারের কোনো উদ্যোগ না নিয়ে লঞ্চটির চলে যাওয়া অমানবিক কাজ হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
গলাচিপা থানার ওসি বলেন, ‘বিষয়টি জানতে পেরেছি। শিশুটি এখন পানপট্টি ঘেরমালিক নিজামের জিম্মায় আছে। সে কেন এবং কীভাবে পড়ে গেল সে বিষয়েও আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি।’