করোনার পর বিশ্বে এবার হানা দিয়েছে মারবার্গ ভাইরাস (Marburg Virus)। এই ভাইরাস সবচেয়ে বিপজ্জনক হিসেবে পরিচিত যার মারণ ক্ষমতা প্রায় ৮৮ শতাংশ। ইতিমধ্যে সন্দেহভাজন দুটি কেসের খোঁজ মিলেছে পশ্চিম আফ্রিকার ঘানার দক্ষিণাংশ আশাতি এলাকায়। দু’জনের শরীরে এই ভাইরাসের প্রমাণ মিলেছিল যাদের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।
অত্যন্ত সংক্রামক এই ভাইরাসটি মূলত ইবোলা গোত্রের। মানুষ ও প্রাইমেটদের (বানর, হনুমান, গরিলা ও লেমুরজাতীয় স্তন্যপায়ী) মাধ্যমে এর সংক্রমণ ঘটে যা ভাইরাল হেমোরেজিক জ্বরের একটি রূপ। ভাইরাসটিকে অত্যন্ত বিপজ্জনক বলে মনে করা হয়। আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিরা মারবার্গ ভাইরাসে সংক্রমিত হতে পারেন। আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার ২ থেকে ২১ দিনের মধ্যে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
অত্যধিক জ্বর, প্রচণ্ড মাথা যন্ত্রণা, পেশিতে যন্ত্রণা এর প্রধান উপসর্গ। ভাইরাস সংক্রমণের তৃতীয় দিন থেকে পেটখারাপ, পেটে যন্ত্রণা, খিচুনি, বমি, নাক, মাড়ি এবং যোনি দিয়ে রক্তপাত ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়।
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, কেউ একবার এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তার মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। এই ভাইরাস ইবোলা ভাইরাসের চেয়ে দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ফলে পশ্চিম আফ্রিকার ঘানায় দুই সন্দেহভাজন রোগীকে পাওয়ায় চিন্তায় পরেছেন বিশেষজ্ঞরা। ইতিমধ্যে এই ভাইরাস বিষয়ে সতর্কতা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও। সংস্থার মতে, এর আগে ১৯৬৭ সাল থেকে বেশ কয়েক বার গুয়ানা, কঙ্গো, কেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, উগান্ডায় মারবার্গ ভাইরাসের ভয়ঙ্কর তাণ্ডবলীলা দেখা গিয়েছিল। তখন প্রাণ কেড়েছিল অনেকের। এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর হার ২৪ থেকে ৮৮ শতাংশ।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এক জনের দেহ থেকে আরেক জনের দেহে দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে মারবার্গ ভাইরাসের সংক্রমণ। এটি ত্বকের স্পর্শের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে। ইবোলা ভাইরাসের শ্রেণিরই ভাইরাস এটি যার লক্ষণ অনেকটা ফ্লু-এর মতো। সংক্রমণ শনাক্ত করতে প্রথমে রোগীর দেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয় এবং সেই নমুনার সিকোয়েন্সিং হয়। এরপর টিস্যু কালচার করে ভাইরাসকে শনাক্ত করা হয়।
বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলেছেন, করোনা মহামারীর মধ্যে এই ভাইরাস সক্রিয় হলে মারাত্বক বিপদ ঘনিয়ে আসবে। কেননা এই সংক্রমণের চিকিৎসার জন্য কোন অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ বা ভ্যাকসিন এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। তবে আশার কথা যে, আফ্রিকার বাইরের কোনও দেশের মানুষ এখনও পর্যন্ত মারবার্গ ভাইরাসের সংক্রমণের কবলে পড়েনি। তাই সবাইকে এ নিয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।