বরিশাল জেলা দক্ষিণ বিএনপি নেতার অর্থ বানিজ্য, দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র আর দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল সৃস্টি করায় দিশেহারা বরিশাল-২ আসনের বিএনপির সাধারণ নেতাকর্মী, বাকেরগঞ্জ পৌর বিএনপিসহ জেলার অন্যান্য সাংগঠনিক উপজেলার নেতাকর্মীরা। দলের কাজ করতে গিয়েও ব্যক্তির রোষানলে পড়ে অনেকেই এখন দলীয় কাজে পিছু হঠছেন।
দলে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরাতে যে সব নেতারা মাঠে কাজ করছেন তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে দুরে ঠেলে রাখা, শীর্ষ এক নেতার কাছ থেকে দফায় দফায় অর্থ নিয়েও তাকে দাবিয়ে রাখার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হওয়া, দলীয় নেতাদের অনুশাসনসহ নতুন আহবয়ক কমিটি ঘোষণা হওয়ার পরে প্রানচাঞ্চল্য ফিরে আসা দলের সাংগঠনিক অবস্থা ক্রমেই দূর্বল হয়ে পরছে।
বরিশাল বিএনপির শীর্ষ পর্যায়সহ তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীদের বক্তব্য হচ্ছে বরিশাল জেলা দক্ষিণ বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান নান্টুর অনুশাসন, দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র, দলের জন্য ত্যাগী নিবেদিত এমন কিছু সংখ্যক নেতাকর্মীদের শীর্ষ এক নেতার অনুসারী বলে কোনঠাসা করে রাখা আর অর্থ বানিজ্যে বিএনপির ঘাটি খ্যাত বরিশাল বিএনপি এখন দিশেহারা। মজিবর রহমান নান্টুর অর্থ বানিজ্য ও দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন দলের উপজেলাসহ তৃণমুল পর্যায়ের নেতা কর্মীরা। বরিশালের বানারীপাড়া ও উজিরপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসন বরিশাল-২।
দু’ই উপজেলায় রয়েছে দুটি পৌরসভা। এ আসন থেকে ২০০১ সালে সৈয়দ সহিদুল হক জামাল বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে এমপি নির্বাচিত হন। সংসদে তাকে হুইপ করা হয়। হুইপ জামাল দল ও নেতা কর্মীর সাথে বেঈমানী করায় পরবর্তিতে এ আসনে বিএনপি দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয় দানবীর খ্যাত বিএনপি নেতা এস. সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টুকে। সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু বরিশাল-২ আসনের দলের অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই বানারীপাড়া ও উজিরপুর উপজেলা বিএনপি সাংগঠনিকভাবে শক্ত অবস্থানে ফিরে আসে। নেতাকর্মীদের মাঝে ফিরে আসে প্রাণচাঞ্চল্য।
বিরোধী দল হিসেবে আওয়ামী সরকারের আমলে গত ১৩ বছরে দলের আন্দোলন সংগ্রামে অগ্রনী ভুমিকা পালন করে আসছেন সান্টু ও তার নির্বাচনী এলাকার বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। জনপ্রিয়তা ও অর্থ বানিজ্যর কারণে বরিশাল জেলা বিএনপির কতিপয় নেতার রোষানলে পরে প্রতিহিংসার শিকার হয়ে আসছেন বরিশাল-২ আসনের বিএনপির অভিভাবক সান্টু।
এসকল নেতাদের চাহিদার অর্থ জোগান দিতে সান্টুর অপরাগতায় তাঁর বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে আসছেন ওই সকল নেতারা। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সারা দেশের ন্যায় বরিশাল জেলা বিএনপিকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে বরিশালের ডাক সাইটে অনেক নেতাদের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টির লক্ষ্যে চলতি বছরের ২২ জানুয়ারী মনিরুজ্জামান ফারুককে আহবায়ক, অ্যাডভোকেট আলী হায়দার বাবুলকে যুগ্ম আহবায়ক ও কাউন্সিলর মীর জাহিদুল করিম জাহিদকে সদস্য সচিব করে বরিশাল মহানগর এবং অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান নান্টুকে আহবায়ক ও অ্যাডভোকেট আকতার হোসেন মেহবুলকে সদস্য সচিব করে বরিশাল জেলা দক্ষিণ বিএনপির আহবায়ক কমিটি গঠন করেন। কমিটি ঘোষণা করার পর বরিশাল বিএনপির দীর্ঘ বছর ঘরবন্দি থাকা নেতাকর্মীরা রাজপথে নেমে আসে।
এই কমিটির শুরুটা ভাল হলেও আহ্বায়ক কমিটির বয়স যত বাড়ছে ততোটাই দুই আহবায়ক কমিটির শীর্ষ তিন নেতার নামে চাঁদাবাজীসহ নানা অভিযোগ প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে। তবে বরিশাল মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটির আহবায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুক, যুগ্ম আহবায়ক অ্যাডভোকেট আলী হাযদার বাবুল এই শীর্ষ দুই নেতা রয়েছেন স্বেচ্ছাচারিতা, সকল প্রকার দূর্ণীতি, অনিয়ম ও অর্থ বানিজ্যের বাহিরে। বিতর্কিত কর্মকান্ড হিসেবে সংগঠন বিরোধী কর্মকান্ডের অংশ হিসেবে ওই জেলা নেতারা ইতোপূর্বে দল থেকে বহিস্কৃত নেতাকর্মীদেরও আহবায়ক কমিটিতে স্থান দিয়েছেন। বিতর্কিত ও দলছুট ওই সকল নেতাকর্মীরা আহবায়ক কমিটিতে স্থান পেয়ে জেলার বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় বিএনপির সাম্ভাব্য প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিরুপ কথা বলতে কার্পণ্য করছেন না।
ফলে বিব্রত হচ্ছেন মূল ধারার নেতাকর্মীরা। অভিযোগ রয়েছে- বিতর্কিত নেতাদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা গ্রহনের মাধ্যমে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎ বর্ষিকীর পোস্টার ছাপিয়ে জেলা দক্ষিণ বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান নান্টু নিজেই তার অনুসারীদের মাঝে বিতরণ করেছেন। আহবায়ক মজিবর রহমান নান্টুর কাছে বাকেরগঞ্জ পৌর বিএনপির সভাপতি ও সম্পাদকের নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন কমিটির অন্যান্য নেতাসহ অঙ্গসংগঠনের প্রায় ৪০ নেতা। তবে ওই অভিযোগের কোন সুরাহা করেননি জেলা বিএনপির আহবায়ক মজিবর রহমান নান্টু ও সদস্য সচিব আকতার হোসেন মেহবুল।
নাম না প্রকাশের শর্তে দলের একাধিক নেতা জানান, নান্টু অভিযুক্তদের কাছ আর্থিকভাবে সুবিধা নিয়ে চুপ রয়েছেন। নেতাকর্মীদের আরও অভিযোগ- দুই নেতা আইন ব্যবসার সাথে যুক্ত করেছেন নিজেদের রাজনৈতিক বানিজ্যর। দুই ব্যবসা এক হয়ে যাওয়ায় পূর্বের তুলনায় বর্তমান ব্যবসা তাদের জমজমাট। বরিশাল মহানগর বিএনপি আয়োজিত ইফতার মাহফিলে আর্থিক অনুদান প্রদান করেন সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু। মহানগরের অনুষ্ঠানে অনুদান দেয়ায় চরমভাবে তার উপর ক্ষিপ্ত হন আহবায়ক নান্টু। এছাড়াও গত রমজানে সান্টু বরিশাল জেলা ও মহানগর বিএনপি আয়োজিত ইফতার মাহফিল ছাড়াও বানারীপাড়া ও উজিরপুর দুটি উপজেলার ১৭ টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভায় বেগম খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সুস্থতা কামনায় দোয়া ও ইফতার মাহফিলে আর্থিক অনুদান দেয়ায় চরমভাবে সান্টুর উপর রাগের বহিঃপ্রকাশ করেন মজিবর রহমান নান্টু।
নান্টু সরফুদ্দিন সান্টুর কাছ থেকে দফায় দফায় অর্থ আদায় করে আসলেও এক পর্যায়ে নান্টুর চাহিদার অর্থ দিতে সান্টু অস্বীকৃতি জানালে সান্টুর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় নান্টু। বানারীপাড়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ মৃধা জানান, মিছিলে সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টুর নামে সেøাগান দেয়া যাবে না, ব্যানারে তার ছবি দেয়া যাবে না। এমন অনুশাসন চালিয়ে আসছেন মজিবর রহমান নান্টু।
এ ব্যাপারে বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান নান্টুর কাছে জানতে চাইলে তিনি তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়গুলি এড়িয়ে যান এবং কথা না বলেই ফোন কেটে দেন।