বরিশালের পটুয়াখালীতে কোস্টগার্ডের সুনাম ক্ষুণ্ন করতে মাঝি বাদশাহ’র বিরুদ্ধে বেপরোয়া কর্মকান্ডের অভিযোগ উঠেছে।
পটুয়াখালী কোস্টগার্ডের মাঝি হওয়ার সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে মৎস্য ব্যবসায়ী ও জেলেদের থেকে অবৈধভাবে বিটবাণিজ্য ও মাসোহারা আদায়ের মাধ্যমে বাদশাহ বিপুল অর্থবিত্তের মালিক বনে গেছেন। এক কথায় রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ। মাঝি বাদশাহ’র বিরুদ্ধে অভিযোগের যেন অন্ত নেই ব্যবসায়ী ও সাধারণ জেলেদের।
কিন্তু কোস্টগার্ডের মাঝি হওয়ায় তারা কিছু বলতেও পারেন না আর কিছু করতেও পারেননা। বর্তমানে তার কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ হয়ে একপ্রকার অসহায়ত্ব দিন কাটাচ্ছেন ভুক্তভোগীরা।
তথ্যানুসন্ধানে জানাগেছে, প্রায় ৭-৮ বছর পূর্বে পটুয়াখালী কোস্টগার্ডের মাঝি হিসেবে যোগদান করেন বাদশাহ। যোগদানের পর থেকেই একক বলয় তৈরী করতে সক্ষম হন এবং সেই সুযোগে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হন। তার রয়েছে ৩-৪টি বলগেট, ড্রেজার, প্রাইভেট কার, যাতায়াতের জন্য পালসার মোটরসাইকেল।
এছাড়াও বরিশালের চরমোনাই ও পটুয়াখালীতে রয়েছে একাধিক ভবন। যা একজন মাঝির নিকটে আলাদিনের চেরাগের মত। একজন মাঝির এত টাকা-সম্পদ হলো কি করে? তার মাসিক আয় বা বাৎসরিক আয় কত এ প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে জনসাধারণের মাঝে।
অভিযোগ সূত্রে জানাগেছে, পটুয়াখালী কোস্টগার্ডের আওতাধীন কলাপাড়া, আমতলী, গলাচিপা, লেবুখালীসহ বিভিন্ন স্থানে নদীপথে বাদশাহ’র চলে একক রাজত্ব। নদীতে অভিযানে নামলেই শুরু হয় তার অবৈধ বিটবাণিজ্য। প্রতি জেলের নিকট থেকে মাসিক, সাপ্তাহিক বিট নেন জাল না ধরার শর্তে।
এছাড়া জাটকা ও অবৈধ রেনুপোনা পাচারে সহায়তা দিয়েও লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন বাদশাহ। আর তার ইশারাতেই নদীতে অবৈধ বাধা জাল, পাই জাল, মশারী জাল, চরঘোরা জাল ও কারেন্ট জাল পেতে মৎস্য সম্পদ ধ্বংস করায় মেতে ওঠেন জেলেরা। আর তার সাথে ডিল না করে কোন জেলেই নদীতে জাল ফেলতে পারেনা। এক্ষেত্রে মাঝি বাদশাহ সরাসরি অর্ধেক ব্যবসার ভাগ দাবি করে জেলেদের সাথে চুক্তি করে। কোন কোন জেলে-ব্যবসায়ী অর্ধেক চুক্তিতে রাজি না হলে তাকে মাসিক মোটা অঙ্কের বিট দিতে হয়।
এরকম একজন ভুক্তভোগী বরিশালের সাহেবের হাট এর বাসিন্দা জাকির। জাকির পটুয়াখালীর আওতাধীন এলাকায় কাচকি মাছের ব্যবসার জন্য গেলে বাদশা তাকে অর্ধেক দেয়ার চুক্তি করতে প্রস্তাব দেয়। আর এতে জাকির রাজি না হলে তার নিকট থেকে নগদ ২০ হাজার টাকা বিট নেয়। এবং পরবর্তীতে তাকে আর ওই স্থানে যেতে বাধা প্রদান করেন। যার একটি ভিডিও বক্তব্য প্রতিবেদকের নিকটে আছে।
এছাড়াও বাদশাহ নদীতে অবৈধ জাল পেতে মাছ ধরার জন্য জেলেদের সাথে নগদ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে চুক্তি করারও একটি ভিডিও পাওয়া গেছে। এভাবেই অবৈধ পন্থায় কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন বাদশা মাঝি।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কাজী আল আমিন জানান, মাঝি বাদশা’র বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। শীঘ্রই তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি আরো জানান, বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের এখতিয়ারভুক্ত এলাকাসমূহে আইন শৃঙ্খলা ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন, জননিরাপত্তা, বনদস্যুতা ও ডাকাতি দমনের পাশাপাশি বনজ সম্পদ রক্ষায় বাংলাদেশ কোস্টগার্ড সর্বদা তৎপর রয়েছে। কোস্টগার্ডের পক্ষ থেকে কাউকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়া হবেনা।
সূত্র বাংলাদেশ বুলেটিন