আইফোন এক্স’ নিয়ে গ্যাজেটপ্রেমীদের আগ্রহ থাকাটা যেমন স্বাভাবিক, তেমনি অনেকেই আছেন যারা কখনো আইফোন ব্যবহার করেননি।
আবার অনেকে আছেন ব্যবহার করলেও এর সব ফাংশন পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করেননি। আইফোন, এমন একটি ডিভাইস যা আপনাকে উপহার দেবে হাজার হাজার ফিচার, যার প্রায় সবগুলোই অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেমে ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের তুলনায় অনন্য।
তবে আইফোনের এসব ফিচার উপভোগ করার আগে অবশ্যই কিছু প্রযুক্তিগত জ্ঞান থাকা দরকার। সেই সঙ্গে প্রয়োজন বেসিক কিছু কাস্টমাইজেশন। ধরে নেওয়া যাক আপনি এবারই প্রথম আইফোন কিনছেন। নতুন আইফোন কেনার সময় যে বিষয়গুলো আপনার জানা প্রয়োজন ও অবশ্যই করণীয় সেগুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
১। অ্যাপল আইডি বা অ্যাকাউন্ট তৈরি
আপনি যদি আইটিউনস বা অ্যাপস্টোর ব্যবহার করতে চান তবে আপনার অবশ্যই অ্যাপল আইডি থাকা প্রয়োজন। আর যদি মনে করেন আইটিউনস বা অ্যাপস্টোর প্রয়োজন নেই, সেক্ষেত্রে এতো দাম দিয়ে আইফোন কেনা আপনার জন্য বোকামি হবে। কারণ এ অ্যাকাউন্টটিই আপনার আইফোনের প্রায় সব ইউনিক ফিচারগুলোর উৎস। অ্যাপলের ওয়েবসাইট থেকে সহজেই অ্যাপল আইডি বা অ্যাকাউন্ট তৈরি করা যায়, যা সম্পূর্ণ ফ্রি।
২। আইটিউনস ইন্সটল করুন
আপনার ফোনের সব গান, মুভি, ছবি, অ্যাপ ইত্যাদি সংরক্ষণ ও চালনার জন্য যে সফটওয়্যারটি ব্যবহার করা হয় তা হলো আইটিউনস। কম্পিউটারে তা ইন্সটল করে সহজেই ফোনের সব বিষয়বস্তু ব্যবস্থাপনা ও মুছে ফেলতে পরবেন আপনি। অ্যাপলের ম্যাক কম্পিউটারে সফটওয়্যারটি সেটাপ করাই থাকে। উইন্ডোজ অপারেটিংয়ের কম্পিউটারের জন্য তা আপনাকে অ্যাপলের ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করে ইন্সটল করে নিতে হবে। এটিও সম্পূর্ণ ফ্রি।
৩। চালু করুন আপনার আইফোন
অ্যাপল আইডি ও আইটিউনস সেটাপের পর আপনার আইফোনটি চালু করুন। চালু করার পর এটি ব্যবহারের আগে একটু ধৈর্য ধরতে হবে। অ্যাক্টিভেট করার সময় আগের তৈরি করে রাখা অ্যাপল আইডিটি ব্যবহার করুন। আপনি যেহেতু নতুন আইফোন ব্যবহার করতে যাচ্ছেন, তাই অ্যাক্টিভেশনের জন্য বেসিক সেটিং অপশনটি বেছে নিন। এক্ষেত্রে ফোন অ্যাক্টিভ হওয়ার পর আপনি শুধু ফেসটাইম, ফাইন্ড মাই আইফোন, আইমেসেজের মতো বেসিক ফিচারগুলো পাবেন। অন্য ফিচারগুলো আপনি যেকোনো সময় সেটাপ করে নিতে পারবেন।
৪। কম্পিউটারের সঙ্গে সংযোগ
এবার আপনার কম্পিউটারের সঙ্গে আইফোনটি ইউএসবির মাধ্যমে সংযুক্ত করুন। কম্পিউটারে ইন্সটল করা আইটিউনসের সঙ্গে ফোনটি লিঙ্ক হয়ে গেলে আপনার ড্রাইভের মিউজিক লাইব্রেরি, ছবি, ইবুক, মুভিসহ বিভিন্ন ফাইল ফোনের মেমোরিতে আদান-প্রদান বা সাজিয়ে রাখতে করতে পারবেন।
৫। আইক্লাউড
আইফোন ব্যবহারকারীর কাজকর্ম অনেক বেশি সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তোলে আইক্লাউড। এটি মূলত একটি স্টোরেজ সিস্টেম। অ্যাপস্টোর থেকে কেনা যেকোনো গান, মুভি, ছবি, ভিডিও এখানে সংরক্ষণ করে রাখতে পারবেন। আপনার দরকারি বিভিন্ন ফাইলও এতে সংরক্ষণ করে রাখতে পারবেন।
৬। ফাইন্ড মাই আইফোন সেটাপ
এ ফিচারটির মাধ্যমে আইফোনের জিপিএস ট্র্যাকিং সিস্টেমকে কাজে লাগিয়ে আপনার ফোনটি ঠিক কোথায় রয়েছে তার একদম নিখুঁত অবস্থান জানতে পারবেন। সুতরাং আপনার ফোন বেখেয়ালে হারিয়ে গেলে বা চুরি হলে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে এর সন্ধান জানাবে ফাইন্ড মাই আইফোন।
৭। টাচ আইডি ও ফিঙ্গার প্রিন্ট স্ক্যানার
আপনার আইফোনের নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য ফিঙ্গার প্রিন্ট স্ক্যানারের মাধ্যমে তা লক করে রাখতে পারবেন। এমনকি আলাদা আলাদা অ্যাপও আপনি ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে নিরাপদ রাখতে পারবেন। আইফোন ফাইভ-এস থেকে শুরু করে পরবর্তী সবগুলো সংস্করণে এ সুবিধা পাবেন। এজন্য আলাদা কিছু ডাউনলোড করতে হবে না।
৮। অ্যাপল পে
কেনাকাটাকে আরও অনেক বেশি আধুনিক ও সহজ করে তুলেছে অ্যাপল পে। সাধারণ ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের তুলনায় এটি আরও বেশি নিরাপদ ও নির্ভেজাল। আইফোন স্টার্টআপ সেটিংয়ের সময়ই এ ফিচারটি আপনার ফোনে চলে আসবে। তবে আপনার ফোনটি হতে হবে আইফোন সিক্স বা এর পরবর্তী সিরিজের।
৯। বিল্টইন অ্যাপ
অ্যাপলের স্টোরে হাজার হাজার অ্যাপ পাবেন আপনি। কিন্তু সেখান থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করার আগে ফোনের বিল্টইন অ্যাপগুলো ভালোভাবে আয়ত্বে আনুন। কারণ দেখা যেতে পারে কোনো একটি বিশেষ কাজের জন্য একটি অ্যাপ কিনলেন স্টোর থেকে, কিন্তু আপনার ফোনের কোনো একটি বিল্টইন অ্যাপ দিয়েই সে কাজটি করা যাচ্ছে।
১০। অ্যাপস্টোর
এবার আইফোন ব্যবহারের মজা আরও বাড়াতে ঢুঁ মারুন অ্যাপস্টোরে। কোনো কিছু কেনার আগে এর রিভিউ দেখে নিতে ভুলবেন না। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া, সংবাদ মাধ্যম, ছবি বা ভিডিও এডিট, সাউন্ড কম্পোজিং, লাইফস্টাইল, স্বাস্থ্য এমনকি আজকের ডিনারে কি খেলে ভালো হয় এ সংক্রান্তও অ্যাপ পেয়ে যাবেন এতে। এর পরিধি ব্যাপক।
১১। এবার গভীরে প্রবেশ করুন
আইফোনের বেসিক ব্যাপারগুলো ভালোভাবে আয়ত্বে এসে গেলে এবার সময় হয়েছে এ প্রযুক্তির আরো গভীরে ডুব দেওয়ার। আইফোনে এমন অনেক কিছুই করতে পারবেন যা একটু জটিল কিন্তু কাজের, সেইসঙ্গে মজারও। এ ধরনের কিছু কিছু ফিচার হয়ে উঠতে পারে আপনার অফিস পরিচালনার জন্য খুবই কার্যকরী। আবার কিছু কিছু ফিচার ব্যবহারে পাবেন আপনার সৃজনশীলতা প্রয়োগের সুযোগ। বিভিন্ন পেশাদার কাজ সারতে পারবেন এতে।
সুতরাং অ্যান্ড্রয়েড ও অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেমের মোবাইল ফোনের তুলনায় আইফোন কেন অনন্য তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এখন শুধু দেখার অপেক্ষা, অ্যাপল তার পরবর্তী ফ্ল্যাগশিপে কি চমক দিচ্ছে।