উল্লেখ্য পটুয়াখালীর গলাচিপায় মায়ের কোলে শিশু বাচ্চাকে ফিরিয়ে দিলেন ইউএনও। ঘটেছে উপজেলার আমখোলা ইউনিয়নের দড়ি বাহেরচর গ্রামে শহিদ চৌকিদারের বাড়িতে।
জানা যায় মো. জসিম চৌকিদারের মেয়ে কাকুলি বেগমের শিশু পুত্র মো. রাওফান ইসলাম রাব্বানি (৩ বছর ৪ মাস) কে ফিরে পেয়ে মা কাকুলি বেগম (২৭) আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। মো. রাওফান ইসলাম রাব্বানির বাবা হচ্ছেন মো. রাসেল বেপারী (৩০) হচ্ছেন একই ইউনিয়নের ভাংরা ৭ নম্বর ওয়ার্ডের দেলোয়ার বেপারীর ছেলে। কাকুলি বেগম বাদী হয়ে গলাচিপা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ছেলে ফিরে পাওয়ার আশায় ১০০ ধারায় এম,পি ২৫০/২০২৩ নম্বর মোকদ্দমা দায়ের করেন।
তারিখ- ১২/০৪/২০২৩ খ্রি.। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে ২৫২/২৩ নম্বর স্মারকে মো. রাওফান ইসলাম রাব্বানিকে উদ্ধারের জন্য (৩০ এপ্রিল) রবিবার সার্চ ওয়ারেন্ট জারি করে গলাচিপা থানাকে নির্দেশ দেন। গলাচিপা থানার এসআই আব্দুর রহমান (০১ মে) সোমবার সকালে রাসেল বেপারীর বাড়িতে গিয়ে মো. রাওফান ইসলাম রাব্বানিকে উদ্ধার করে গলাচিপা থানায় নিয়ে আসে। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মহিউদ্দিন আল হেলাল শিশু বাচ্চা মো. রাওফান ইসলাম রাব্বানিকে তার মা কাকুলি বেগমের কাছে ফিরিয়ে দেন। বাচ্চাকে ফিরে পেয়ে কাকুলি বেগম বলেন, আমার ছেলেকে অনেক দিন পর্যন্ত আমি দেখতে পাই নাই।
ওকে না দেখে আমার বুকটা এতদিন হাহাকার করেছে। আমি স্যারকে ধন্যবাদ জানাই আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। এ বিষয়ে রাওফান ইসলাম রাব্বানির নানা মো. জসিম চৌকিদার বলেন, বিজ্ঞ আদালতে মামলার মাধ্যমে আমার নাতিকে আমার মেয়ের কাছে পেয়েছি। আমি অনেক খুশি হয়েছি। আমার মেয়ে কাকুলি তার ছেলেকে রাওফান ইসলামকে না প্রায় ৩ মাস পাগলের মত হয়ে গেছে।
ওর মুখের দিকে এতদিন তাকানো যায়নি। আজ মো. রাওফান ইসলাম রাব্বানিকে ফিরে পেয়ে কাকুলির মুখে হাসি ফুটেছে। এ বিষয়ে রাওফান ইসলাম রাব্বানির নানি মাহমুদা বেগম বলেন, আমার মেয়ে কাকুলি বেগমকে ১০ বছর আগে ইসলামী শরাহ শরিয়ত মতে রাসেল বেপারীর সাথে বিবাহ দেই। বিবাহের পর ওদের ১টি ছেলে জন্ম নেয়। পারিবারিক কলহের কারণে কাকুলি ও রাসেলের মধ্যে ঝগড়া হয়।
এতে রাসেল আমার মেয়েকে যৌতুকের জন্য আমার বাড়িতে ফেলে রেখে যৌতুক নিয়ে অরেকটি বিবাহ করে। আমার নাতি ছোট থাকায় আমার নাতি রাওফানকে আমার মেয়ের কাছ থেকে রাসেল জোর করে নিয়ে যায়। পরে মামলার মাধ্যমে আমার নাতিকে আমরা ফিরে পেয়েছি।
এ বিষয়ে রাসেলের কাছে জানতে চাইলে রাসেল বলেন, মামলা করে আমার কাছ থেকে রাওফান ইসলাম রাব্বানিকে নিয়ে গেছে। যৌতুক ও অপর বিবাহের কথা উল্লেখ করলে রাসেল বিষয়টি এড়িয়ে যায়। এ বিষয়ে রাসেলের মা হাসিনা বেগম বলেন, আমার নাতিকে মামলা করে আমাদের কাছ থেকে কাকুলি নিয়ে গেছে।
আমার ছেলে রাগের মাথায় মুদির হাট দর্জি বাড়িতে একটি বিবাহ করেছে। এ বিষয়ে আমখোলা ইউনিয়নের ভাংরা গ্রামের ইউপি সদস্য মো. শাহ আলম ও দড়ি বাহেরচর গ্রামের ইউপি সদস্য মো. কাসেম দেওয়ান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। আমখোলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. কামরুজ্জামান মনির বলেন, আসলেই রাসেল দুশ্চরিত্রের লোক।
এখানে সেখানে বিবাহ করে বেড়ায়। সে অটো রিক্সা চালায়। কাকুলিকে রাসেল প্রায়ই মারধর করত। এবিষয়ে একাধিকবার সালিশী করলেও রাসেলের কোন পরিবর্তন হয় নি। শুনেছি সে আবার নিকাহ করেছে। কাকুলির ভবিষ্যত এখন অন্ধকার হয়ে গেছে।
আদালতের মাধ্যমে রাওফান ইসলাম রাব্বানিকে কাকুলি ফিরে পাওয়ায় ছেলেটা ভালভাবে বেড়ে উঠতে পারবে। এজন্য আমি আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মহিউদ্দিন আল হেলাল স্যারকে আমখোলা ইউনিয়নের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই।
এ বিষয়ে সিনিয়র এ্যাডভোকেট মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, আইনের ধারায় মা বাচ্চাকে পেয়েছে এবং ৭-৮ বছর না হলে মায়ের কাছেই এ শিশু থাকতে পারে। কেননা বাবা রাসেল বেপারী ২য় বিবাহ করেছে।
তাই এ শিশুকে বাবার কাছে রাখাতে একটি প্রশ্ন থেকে যায়।