নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরার সেই নিরক্ষর যোদ্ধা আজ জীবন সংকটে পড়েছেন। নিজ বাড়ির আঙিনায় ফুটিয়ে তোলা স্বাধীনতার ৭১ প্রতীক বানাতে গিয়ে সর্বোচ্চ ত্যাগ করেছিলেন এই সাহেব আলী (৬০)। অথচ আজ তার পাশে কেউ নেই। ভয়ঙ্কর ক্যান্সার দিন-দিন তাকে গ্রাস করছে। সাহেব আলীর খাদ্যনালিতে থাকা টিউমারে ক্যান্সারের জীবাণু ধরা পড়েছে। দূরারোগ্য এই চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে সক্ষম নয় সাহেব আলী ও তার পরিবার। বর্তমানে চিকিৎসা তো দূরের কথা, অর্ধাহারে-অনাহারে দিন অতিবাহিত করছেন তারা। পটুয়াখালী সদর উপজেলার আউলিয়াপুরের অজপাড়াগাঁয়ের মৃত আব্দুল আজিজের ছেলে এই সাহেব আলী।
সাহেব আলীর বড় ছেলে হাসান খান (১৬) প্রতিবেদককে বলেন, কয়েক মাস আগে তার অসুস্থ বাবাকে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলামকে দেখালে তিনি ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেন। ধারদেনা করে তার বাবাকে ঢাকায় নিয়ে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এম কামাল হোসেনকে দেখানো হয়। ঢাকার ওই ডাক্তার বলেছেন- সাহেব আলীর খাদ্যনালিতে থাকা টিউমারে ক্যান্সারের জীবাণু রয়েছে, যা ছড়িয়ে পড়ছে। এসব শোনার পর থেকেই ভেঙে পড়েছে পরিবারটি। সম্পদশালী উদার ব্যক্তিদের সহায়তা কামনা করেছেন তারা। সরেজমিন ও সাহেব আলীর পরিবার বলেন, ১৯৯৬ সালে মুন্সীগঞ্জের চালের মিলে কর্মরত অবস্থায় সাহেব আলী এক বীরাঙ্গনা সহকর্মী রাহিমার মুখে ৭১-এর বর্ণনা শুনে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ভাস্কর্য বানাতে উদ্বুদ্ধ হন।
এরপর বাড়ি এসে ভাস্কর্য বানানোর নীরব সংগ্রামে নামেন তিনি। ভিন্ন এই শিল্পায়নের রূপ দিতে বসত-ভিটে বিক্রি করতে হয় তাকে। অর্ধাহারে-অনাহারে পরিবার নিয়ে দীর্ঘদিন ভাঙা ঘরে কাটান তিনি। পৈতৃক সম্পত্তি বেচে দিয়ে ভাস্কর্য বানান তিনি। এনজিও থেকেও মোটা টাকা ঋণ নিতে হয়েছে তাকে। নিরক্ষর এই মানুষটি নিজ হাতে তৈরি করেছেন- জাতির পিতার বজ্রমুষ্টি এবং বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ আঙ্গুলে স্থাপন করেছেন গোটা বাংলাদেশকে, বীর যোদ্ধার পদদলিত (পাক বাহিনী) কাল নাগ, ১৫ আগস্টের ভয়াবহ বুলেট, ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৬ ডিসেম্বর, ৭ মার্চ, ২৬ মার্চ, ৫২-এর ভাষা আন্দোলনসহ মোট ৬৬টি ভাস্কর্য।
এছাড়াও রয়েছে- দেশের বিখ্যাত ব্যক্তি, স্বাধীনতার চিত্রপট এবং একাত্তরের অবিস্মরণীয় তাৎপর্য নিয়ে ২০টি প্ল্যাকার্ড এবং সচেতনতামূলক অগণিত বাক্য। অনুদান ব্যতীত এক-এক করে তৈরি করেন ৬৬টি কংক্রিট ভাস্কর্য। সাহেব আলীর নিরক্ষর হস্তশিল্পে ফুটে উঠেছে যেন স্বাধীনতার সেই রক্তস্নাত স্মৃতি। ৭১-এর বাকি ৫টি ভাস্কর্য বানানোর আগেই ক্যান্সার তাকে গ্রাস করেছে। সাহেব আলীকে সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা: সাহেব আলী, সঞ্চয়ী হিসাব নম্বর ৪৩১৪১০১০২২৬১৮, সোনালী ব্যাংক, নিউ টাউন শাখা, পটুয়াখালী।