পদ্মা সেতুর পর বাঙালির আরেক সাফল্য মেট্রোরেল বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করে বাংলাদেশ এবং বাঙালি জাতি সারা বিশ্বে মর্যাদা পেয়েছে। আজকে আরেকটি নতুন অহংকারের পালক জনগণের মাথার মুকুটে সংযোজন করলাম। ’
বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় উত্তরার ১৫ নং সেক্টরের খেলার মাঠে মেট্রোরেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
এর আগে সকাল ১১টা ৪ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী মেট্রোরেলের নামফলক উন্মোচন করেন।
২০৪১ সালে বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হবে বলে আবারও আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এগিয়ে যাবে দুর্বার গতিতে। জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত দেশ হবে বাংলাদেশ। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেকোনো কাজ করতে গেলে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রতিটি কাজ পরিকল্পনা নিয়ে সম্পন্ন করে যাচ্ছি আমরা। এ কারণে বাংলাদেশ আজ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আমরা ২০২১-২০৪১ এর প্রেক্ষিত পরিকল্পনা নিয়েছি। ৪১ সালে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হবে বাংলাদেশ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ উন্নয়ন-অগ্রযাত্রায় আরেকটি পালক সংযোজিত করতে পারলাম। এ জন্য দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানাই। তাঁরা ২০০৮ সালের নির্বাচনে আমাকে ভোট দিয়ে সে সুযোগ করে দিয়েছে। তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। ’ তিনি মুক্তিযুদ্ধের সমভ্রম হারানো মা বোন এবং যুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
একাত্তরের বীরাঙ্গনা ও সব বীর মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘একাত্তরে স্বাধীনতার পর দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে। জাতীর পিতা দেশকে স্বল্পন্নত দেশে উন্নীত করেন। তখনই আঘাতটা এলো। নির্মামভাবে হত্যা করা হলো জাতির পিতাসহ আমার পরিবারের সদস্যদের। প্রধানমন্ত্রী পরিবারের সব শহীদ সদস্যদেরর প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
মেট্রোরেল নির্মাণে জাপানের অবদানের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা তৎকালীন জাপানি প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত শিনজো আবের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘হোলি আর্টিজান আক্রমণে মেট্রোল প্রকল্পের একজন জাপানি পরামর্শককে হত্যা করা হয়। জাপানের আরও কয়েকজন নাগরিককে সে সময় হত্যা করা হয়। আমরা তাদের স্মৃতি রক্ষায় মেট্রোরেলে নামফলক স্থাপন করেছি। তাদের স্মৃতি ধরে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘এই মেট্রোরেলের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ বৈদ্যুতিক ট্রেনযুগে প্রবেশ করলো। এটা রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে পরিচালিত হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশের যে ঘোষণা দিয়েছি, তারই একটা অংশ এটা। ’ তিনি বলেন, ‘আমরা নির্বাচনি ইশতেহারে ঘোষণা দিয়েছিলাম যে, যানজট মুক্ত করার জন্য ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকায় ৬টি মেট্রোরেল নির্মাণ করবো। একটা সম্পন্ন করা হলো। পর্যায়ক্রমে এগুলো করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিটি ট্রেনে একটি করে স্বতন্ত্র মহিলা কোচ থাকবে। নারীদের জন্য আলাদা বাথরুমের ব্যবস্থা থাকবে। বাচ্চাদের পরিচর্যার জন্য জায়গা থাকবে। মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো ফিস দেওয়া লাগবে না। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের কর্মক্ষমতা বাড়বে। যারা কমলাপুর হয়ে ঢাকায় আসবেন, তাদের উত্তরা যেতে আর সমস্যা হবে না। এভাবে যানজট মুক্ত হবে ঢাকা। যাতায়াতের সময় ও টাকা আর নষ্ট হবে না। ’
এ দেশের প্রকৌশলীরাই মেট্রোরেলের দায়িত্ব নেবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই ট্রেন রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার জন্য বিদেশের ওপর নির্ভর করা হবে না। নিজের দেশেই দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা হবে। ’
তিনি বলেন, ‘মেট্রোরেল পরিবেশবান্ধব। এটাতে পরিবেশের ক্ষতি হবে না। শব্দদূষণ হবে না। কম্পন সীমার মধ্যে থাকবে। ’
মেট্রোরেল রক্ষায় সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মনে রাখতে হবে এটাকে সংরক্ষণ করার দায়িত্ব আমাদের। এটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা যাবে না। কোনো জিনিস যেন নষ্ট না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সবাইকে ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে।