পটুয়াখালীর গলাচিপায় চলতি মৌসুমে জমে উঠেছে ধান কেনা বেঁচার হাঁট। মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) চিকনিকান্দী বাজারে দেখা যায় ধান কেনা বেঁচায় ব্যস্ত আড়তদার ও কৃষকরা।
তবে উপজেলার কৃষকরা চলতি বোরো মৌসুমে ধান বিক্রি করতে এসে আড়তদার ও ফরিয়া চক্রের প্রতারণার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগী কৃষকদের অভিযোগ, স্থানীয় বাজারে আড়তদার ও ফরিয়া চক্রটি সংঘবদ্ধ হয়ে ৪০ কেজিতে এক মণের পরিবর্তে ৪৮ কেজি মণ নির্ধারণ করায় প্রতি মণে ৮ কেজি করে ধান মূল্য ১৫০-২৫০ টাকা করে ঠকছেন দরিদ্র কৃষকেরা।
দীর্ঘদিন ধরে ওজনে এমন কারচুপি চললেও উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার কৃষক এই চক্রের হাতে জিম্মি হয়ে তা নীরবে মেনে নিচ্ছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গলাচিপা উপজেলার ধান ক্রয়ের ৮০-৯০ জন আড়তদার এবং কয়েকশ ফরিয়া রয়েছে। এরা মৌসুমভিত্তিক ধান, ডাল, বাদাম, মরিচসহ অন্যান্য ভুষামাল কেনেন। আড়তদার মালিক সমিতির অধীনে এদের রয়েছে একটি শক্তিশালী চক্র।
বিভিন্ন ফসল মৌসুমে এই চক্র নিজেদের ইচ্ছামতো উৎপাদিত কৃষি পণ্যের মূল্য ও পরিমাণ নির্ধারণ করে কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য কম মূল্যে বিক্রি করতে বাধ্য করছেন। ভুক্তভোগী কৃষক আলী আকবর জানান, চলতি বোরো মৌসুমে বাজারে প্রতি মণ (৪০ কেজি) ধান ১০০০ থেকে ১০৪০ টাকা থাকলেও গলাচিপায় ধানের বাজারের আড়তদারেরা ৪৮ কেজিতে এক মণ নির্ধারণ করে তা ১০০০ টাকায় কিনছেন।
এতে আমরা মণপ্রতি ১৫০-২৫০ টাকা করে ঠকছি। এতে আপত্তি জানালে ফড়িয়া এবং আড়তদারেরা কৃষকদের কাছ থেকে কেউ ধান কিনছেন না। গোলখালী ইউনিয়নের সুহরি গ্রামের কৃষক মো. খোকন জানান, গলাচিপা বাজারে ধান বিক্রি করতে এসে দেখি ৪০ কেজির স্থালে ৪৮ কেজিতে মণ হিসাব করা হচ্ছে। এ সময় তিনি এর প্রতিবাদ জানালে আড়তদার তার ধান কিনতে অস্বীকৃতি জানান, পরে অন্য আড়তে গিয়েও একই নিয়মের কথা জানতে পারেন।
পরে ধান ফিরিয়ে নেওয়ার পরিবহণ খরচের কথা চিন্তা করে তিনি ওই নিয়মেই ধান বিক্রি করতে বাধ্য হন। গলাচিপা আড়ৎদার সমিতির সভাপতি তাপস দত্ত ৪৮ কেজিতে মন হিসাব করার কথা স্বীকার করে বলেন, স্থানীয় মাপে আমরা ৪৮ কেজিতে মন হিসাব করি। এজন্য অন্যান্য বাজারের তুলনায় এখানে ধানের মূল্যও বেশি।
এতে কৃষকদের সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এ সপ্তাহে গলাচিপার বিভিন্ন ধানের বাজার সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, অনেক কৃষক এই পরিমাপের কথা জেনে বিক্রি করতে আনা ধান বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যা্েচ্ছন। আবার অনেকে আড়ৎদার ও ফড়িয়াদের সঙ্গে দরকষাকষি করছেন। গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন আল হেলাল বলেন, ৪০ কেজির পরিবর্তে কেউ যদি কৃষকদের কাছ থেকে ওজনে ৪৮ কেজি নেয় সেটা অন্যায়। বিষয়টি তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।