নেশাদ্রব্য মাদক কারবারে অর্থের ঝনঝনানি। দেশ ও মানুষের ক্ষতি জেনেও অধিক অর্থ লাভের আশায় অবৈধ পথে মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে মানুষ। ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে পরিবার ও সমাজে এর নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। ক্ষতি জেনেও মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসন থেকে রক্ষা পাচ্ছে না বিশ্বের কোনো দেশই।
এ পথে বিপুল পরিমাণের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে মাদক কারবারিরা।
অবৈধ উপায়ে উপার্জন করা এসব অর্থ কীভাবে খরচ করে তা নিয়ে মানুষের মাঝে কৌতুহল সীমাহীন। যেসব অদ্ভুত উপায়ে বিশ্বের শীর্ষ মাদক কারবারিরা এসব অর্থ খরচ করেছে, তা নিউজ টোয়েন্টিফোরের পাঠকদের কাছে তুলে ধরা হলো:
আমাদো ক্যারিলো ফুয়েন্তেস
অপরাধ জগতের শীর্ষ নাম আমাদো ক্যারিলো ফুয়েন্তেস। এই মেক্সিকান মাদক সম্রাটের আনুমানিক সম্পত্তি ছিল ২ হাজার ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার।
আকাশ পথে মাদক চোরাচালান করতো ফুয়েন্তেস, এ জন্য তাকে ‘আকাশের রাজা’ও বলা হতো। তার ছিল ২৭টি প্রাইভেট জেট উড়োজাহাজ। বোয়িং ৭২৭এস মডেলের একটি উড়োজাহাজও কিনেছিলেন ফুয়েন্তেস। যুক্তরাষ্ট্রে কোকেন পাচারের জন্যই এসব উড়োজাহাজ ব্যবহার করতেন তিনি।
জীবনের শেষ দিকে এসে এই মাদক সম্রাট মেক্সিকো ও আমেরিকান কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। এর থেকে বাঁচার জন্য মেক্সিকো সিটির সান্তা হসপিটালে একটি জটিল প্লাস্টিক সার্জারির সময় অর্থাৎ ১৯৯৭ সালে মারা যান ফুয়েন্তেস। তার মৃত্যুর কিছুদিন পর সার্জারিতে অংশ নেওয়া দুই চিকিৎসক অজ্ঞাত আততায়ীর হাতে খুন হন।
ইসমায়েল জাম্বাদা গার্সিয়া
মেক্সিকোর আরেক মাদক সম্রাট ইসমায়েল জাম্বাদা গার্সিয়া। ‘এল মায়ো’ নামেও পরিচিত ইসমায়েল সিনালোয়া রাজ্যে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। আরেক মাদক সম্রাট এল চ্যাপোর সঙ্গে সিনালোয়া কার্টেলের নেতৃত্ব দেন তিনি। এখনো গ্রুপটির নেতৃত্ব দেওয়া এই মাদক সম্রাটের একটি কিন্ডারগার্টেন (স্কুল) রয়েছে।
নিজের কালো টাকা সাদা করার জন্য বিপুল পরিমাণে ঘুষ দিয়েছেন ইসমায়েল। এ ছাড়া তিনি অনেক মাধ্যমে অর্থ পাচার করেছেন। ফলস্বরূপ অবৈধ ব্যবসার আড়ালে ডেইরি, জলজ পার্ক ও কিন্ডারগার্টেন স্কুলের ব্যবসা করছেন তিনি। ‘সান্তা মনিকা’ নামে তার একটি দুধের ব্যান্ড রয়েছে। সিনোলোয়া রাজ্যের সবখানেই এই দুধ পাওয়া যায়।
ম্যানুয়েল অ্যান্টনিও নরিয়েগা
১৯৮৩-১৯৮৯ সাল পর্যন্ত উত্তর আমেরিকার ছোট দেশ পানামার শাসন করেছিলেন ম্যানুয়েল অ্যান্টনিও নরিয়েগা। মার্কিন গুপ্তচর হিসেবে কাজ করা নরিয়েগা পানামার একটি দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। যুক্তরাষ্ট্রে মাদক পাচারের সম্পৃক্ততা ছিল পানামার এই স্বৈরশাসকের। তবে মার্কিন অভিযানেই শেষ হয় তার শাসনামল। বর্তমানে কারাগারে রয়েছে নরিয়েগা। নিজের সমস্ত অপকর্মের জন্য ক্ষমাও চেয়েছেন তিনি।
পানামার তথ্য পাচারের মাধ্যমে বছরে ২ লাখ ডলারের মতো যুক্তরাষ্ট্র থেকে পেতেন নরিয়েগা।
গ্রিসেল্ডা ব্লাংকো
আমেরিকার মিয়ামি অঙ্গরাজ্যের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী এবং ত্রাস সৃষ্টিকারী ড্রাগ লর্ড ছিলেন গ্রিসেল্ডা ব্লাংকো। তার সম্পদের পরিমাণ ছিল প্রায় ২০০ কোটি ডলার। এই নারী মাদক সম্রাজ্ঞী ৭০ ও ৮০’র দশকে মিয়ামির ড্রাগ সম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। ‘কোকেইন গডমাদার’ হিসেবে বহুল পরিচিত গ্রিসেল্ডা ব্লাংকো মায়ামির কোকেইন সাম্রাজ্যের অন্যতম অগ্রদূত।
এই কৃষ্ণাঙ্গ বিধবা নারীর জুয়েলারির প্রতি অগাধ টান ছিল। সোনা ও দামি হীরা কিনে নিজের কাছেই গচ্ছিত রাখতে পছন্দ করতেন তিনি। এমনকি দুর্লভ জিনিস কেনায়ও বহু অর্থ খরচ করেছেন তিনি। ব্রিটিশ রানির ব্যবহৃত একটি টি-পট সেট কেনেন গ্রিসেল্ডা।
১৯৭০ থেকে ১৯৮০ এর দশকে মায়ামির আন্ডারওয়ার্ল্ডের প্রায় পুরোটাই গ্রিসেল্ডার দখলে ছিল। কলম্বিয়া থেকে শুরু করে নিউ ইয়র্ক, মায়ামি আর সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার প্রায় ২০০ খুনের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০০২ সালের জুন মাসে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে কারাগারেই মৃত্যুবরণ করেন ৫৬ বছর বয়সী এই মাফিয়া নারী।
পাবলো এসকোবার
কলম্বিয়ার মাদক সম্রাট পাবলো এসকোবার। বিশ্বের অন্যতম ধনী এবং নৃশংস অপরাধী বলেই পরিচিত তিনি। অপহরণ, বোমা হামলা ও নির্বিচারে বহু মানুষকে হত্যার জন্য দায়ী এই মাদক সম্রাট। একসময় তাকে বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি বলে মনে করা হতো।
কোকেন পাচারে এসকোবারের ছিল বেশ খ্যাতি। ‘কিং অব কোকেন’ নামেও পরিচিতি পান তিনি। এসকোবারের সময়কালে তার কার্টেলটি যুক্তরাষ্ট্রে পাচার হওয়া ৮০ শতাংশ কোকেন সরবরাহ করেছিল। প্লেনের চাকা ভেতরে কোকেন ভরে তা পাঠিয়ে দিতেন দেশের বাইরে।
কোকেন পাচার করে এই মাদক সম্রাট বিশাল পরিমাণের অর্থ আয় করেন। তবে এর বেশিরভাগই তিনি কলম্বিয়ার গরিবদের জন্য ব্যয় করতেন। এ জন্য তাকে ‘রবিনহুড’ উপাধিও দেওয়া হয়। নিজের জন্য ৬ কোটি ৩০ লাখ ডলারের একটি বাড়ি নির্মাণ করেন এসকোবার। ওই বাড়িটি ৭০০ একর জমির ওপর করা। সেখানে রয়েছে একটি চিড়িয়াখানা। এ চিড়িয়াখানায় রয়েছে, জিরাফ, হাতি, জলহস্তি। এই বাড়িতে কৃত্রিমভাবে ঝরনা তৈরি করা হয়েছিল। এমনকি একটি ফুটবল মাঠ, টেনিস কোর্ট ও ষাড়ের লড়াইয়ের জন্য জায়গা ছিল। এ ছাড়া ডাইনাসোরের মূর্তি রয়েছে বাড়িটিতে।
এসকোবারের ১৪২ উড়োজাহাজ, ২০ হেলিকপ্টার, ৩২ ইয়র্ট ও দুটি সাবমেরিন ছিল।